ভারতের শীর্ষস্থানীয় আইটি পরিষেবা সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS) তার কর্মীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত, টিসিএস প্রতি বছর এপ্রিল মাসে কর্মীদের বেতন সংশোধন করে। ২০২৫ অর্থবছরের শেষে সংস্থার মোট কর্মী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬,০৭,৯৭৯ জনে, যেখানে চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ৬২৫ জন নতুন কর্মী যুক্ত হয়েছেন। পুরো অর্থবছরে সংস্থাটি ৪২,০০০ নতুন কর্মী নিয়োগ করেছে।
টিসিএস জানিয়েছে, বৈশ্বিক ব্যবসায়িক পরিবেশের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আইটি খাতে বর্তমানে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, এবং সংস্থাটি পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ২০২৫ অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সংস্থার কর্মী ছাঁটাইয়ের হার ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৩.৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
Also Read | ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া বন্ধ করল ৪০০ দিনের এফডি
টিসিএস-এর প্রধান মানবসম্পদ আধিকারিক মিলিন্দ লাক্কড় এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা ২০২৫ অর্থবছরে ৪২,০০০ প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগ করেছি, এবং ২০২৬ অর্থবছরে এই সংখ্যা একই রকম বা কিছুটা বেশি হবে। বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা বর্তমান ব্যবসায়িক পরিবেশের অনিশ্চয়তার কথা বিবেচনা করে বছরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।” তিনি আরও জানান, ক্যাম্পাস থেকে নিয়োগ সংস্থার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, নতুন নিয়োগ সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং দক্ষতার প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করবে।
টিসিএস নতুন এবং বিশেষায়িত প্রযুক্তির জন্য প্রতিভা নিয়োগের পরিকল্পনা করছে এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দক্ষ কর্মী সংগ্রহের লক্ষ্য রাখছে। লাক্কড় জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বরং, এআই-সম্পর্কিত ব্যবসায়িক প্রোগ্রাম নতুন সুযোগ তৈরি করবে, যার জন্য আরও কর্মী প্রয়োজন হবে।
Also Read | দেশজুড়ে সব প্ল্যাটফর্মেই UPI লেনদেন ব্যর্থ, হাজার হাজার গ্রাহক সমস্যায়
২০২৪ অর্থবছরে টিসিএস-এর কর্মী সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল, যা ২০০৪ সালে সংস্থাটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর প্রথম এমন ঘটনা। তুলনায়, ২০২৩ অর্থবছরে ২২,৬০০ এবং ২০২২ অর্থবছরে ১.০৩ লক্ষ কর্মী যুক্ত হয়েছিল। ২০২৫ অর্থবছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সংস্থার কর্মী সংখ্যা ৫,৩৭০ জন কমে গিয়েছিল।
আর্থিক ফলাফলের দিক থেকে, টিসিএস ২০২৫ অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সমন্বিত নিট মুনাফায় প্রায় ২ শতাংশ হ্রাসের রিপোর্ট করেছে। মুনাফা গত বছরের ১২,৫০২ কোটি টাকা থেকে কমে ১২,২৯৩ কোটি টাকায় নেমেছে। তবে, এই সময়ে পরিচালন থেকে আয় বছরে ৫.৩ শতাংশ বেড়ে ৬৪,৪৭৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা গত বছর ছিল ৬১,২৩৭ কোটি টাকা।
মার্কিন শুল্ক নীতির অনিশ্চয়তা আইটি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টিসিএস-এর একটি প্রধান বাজার, এবং শুল্ক নীতির পরিবর্তন ক্লায়েন্টদের ব্যয় হ্রাসের দিকে ঝুঁকিয়েছে। এই পরিস্থিতি প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে বিলম্ব ঘটাচ্ছে। টিসিএস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে. কৃতিবাসন জানিয়েছেন, “যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তবে ক্লায়েন্টদের ঐচ্ছিক ব্যয়ে আরও বিলম্ব হতে পারে।” তবে, সংস্থাটি ত্রৈমাসিক পরিবর্তনশীল বেতন প্রদান অব্যাহত রাখবে। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ৭০ শতাংশ কর্মী তাদের পূর্ণ পরিবর্তনশীল বেতন পাবেন, বাকিরা ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতার উপর ভিত্তি করে বেতন পাবেন।
টিসিএস-এর এই সিদ্ধান্ত কর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা তৈরি করলেও, সংস্থাটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের উপর জোর দিচ্ছে। নতুন নিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে টিসিএস বাজারে তার অবস্থান শক্তিশালী রাখতে চায়। বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে এলে টিসিএস বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে, বর্তমানে সংস্থাটি সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে।
কর্মীদের জন্য পরামর্শ হলো, তারা যেন সংস্থার সরকারি বিবৃতি এবং ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির দিকে নজর রাখেন। টিসিএস-এর শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি এবং বাজারে নেতৃত্বের অবস্থান বিবেচনা করে, আশা করা যায় যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্মীদের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে, এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কর্মীদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।