Silver ETF বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন করের হিসাব, বিনিয়োগের আগে জেনে নিন

২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে সোনা ও রুপায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক কর সংস্কার এবং শুল্ক হ্রাসের (Silver ETF) ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সোনা ও রুপা…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/gold-silver-1.jpg

২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে সোনা ও রুপায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক কর সংস্কার এবং শুল্ক হ্রাসের (Silver ETF) ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সোনা ও রুপা সাধারণ মানুষের কাছে আরও সাশ্রয়ী করে তুলতে কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে ফিজিকাল সোনার পাশাপাশি ডিজিটাল বিনিয়োগেও আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

অনেকেই সরাসরি সোনা বা রুপা কিনে রাখেন, আবার অনেকেই নিরাপত্তা এবং তারল্য (liquidity)-এর কারণে ডিজিটাল বিকল্প যেমন এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF) বা ETF-এর ফান্ড অব ফান্ডস (FoF)-এ বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। ETF-গুলি সাধারণত শেয়ারের মতোই ব্রোকারেজ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কেনা-বেচা করা যায়। ETF FoF হলো মিউচুয়াল ফান্ডের মতো, যা প্রাথমিকভাবে ETF-এ বিনিয়োগ করে।

   

যদিও এগুলি তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য, বাজেটে ঘোষিত নতুন কর কাঠামো অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে জটিল মনে হতে পারে। বিশেষ করে নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হওয়ার তারিখ এবং হোল্ডিং পিরিয়ডের উপর নির্ভর করে করের হার বদলে যায়।

নতুন কর কাঠামোর কার্যকারিতা:
FY25 অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সাধারণত ধরে নেওয়া হয়, এপ্রিল ১, ২০২৪ থেকে মার্চ ৩১, ২০২৫-এর মধ্যে রিডিম করা ইউনিটগুলির উপর নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। কিন্তু ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন থাকায় পূর্ণাঙ্গ বাজেট জুলাই মাসে পেশ করা হয়। ফলে নতুন করের নিয়ম ২৩ জুলাই ২০২৪ থেকে কার্যকর হয়েছে।

সিলভার ETF-এর ক্ষেত্রে নতুন করের নিয়ম:
নতুন নিয়মে সিলভার ETF-এর হোল্ডিং পিরিয়ড ধরা হয়েছে ১২ মাস। এই সময়সীমার ভিত্তিতে বিনিয়োগের লাভকে শট-টার্ম বা লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে গণ্য করা হবে।

কেস ১: ২৩ জুলাই ২০২৪ থেকে মার্চ ৩১, ২০২৫-এর মধ্যে রিডিম করলে:
যদি ইউনিট ১২ মাসের কম সময় ধরে রাখা হয়, তাহলে তা শর্ট-টার্ম ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে ধরা হবে এবং বিনিয়োগকারীর আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী কর ধার্য হবে।
যদি ইউনিট ১২ মাসের বেশি সময় ধরে রাখা হয়, তাহলে সেটিও আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী করযোগ্য হবে। অর্থাৎ, এই সময়সীমায় লং-টার্ম গেইনেও স্ল্যাব রেট প্রযোজ্য হবে।

কেস ২: মার্চ ৩১, ২০২৫-এর পরে রিডিম করলে:
১২ মাসের কম সময়ের জন্য রাখা হলে, আগের মতোই শর্ট-টার্ম গেইনের উপর স্ল্যাব রেট অনুযায়ী কর দিতে হবে।
তবে, ১২ মাসের বেশি সময়ের জন্য রাখা হলে, লং-টার্ম গেইনের উপর ১২.৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য হবে।

Advertisements

ETF FoF-এর জন্য আলাদা নিয়ম:
ETF FoF-এর ক্ষেত্রে হোল্ডিং পিরিয়ড ধরা হয়েছে ২৪ মাস। অর্থাৎ, ২৪ মাসের কম সময়ের জন্য ইউনিট রাখা হলে তা শর্ট-টার্ম হিসেবে ধরা হবে এবং আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী কর দিতে হবে। ২৪ মাসের বেশি সময় ধরে রাখলে, লং-টার্ম হিসেবে গণনা হবে এবং সংশোধিত করের হার প্রযোজ্য হবে।

অতিরিক্ত সেস এবং সারচার্জ:
উল্লেখ্য, হোল্ডিং পিরিয়ডের উপর ভিত্তি করে মূল কর ছাড়াও ৪% হেল্থ অ্যান্ড এডুকেশন সেস এবং উচ্চ আয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সারচার্জ প্রযোজ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো বার্ষিক আয় ₹৫০ লাখের বেশি হয়, তাহলে নির্দিষ্ট হারে সারচার্জ দিতে হবে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য কী পরামর্শ?
নতুন এই কর কাঠামোতে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো, রিডেমশনের সময় এবং হোল্ডিং পিরিয়ডের হিসাব অত্যন্ত সতর্কভাবে রাখতে হবে। কারণ সামান্য কিছু দিনের পার্থক্যই করের পরিমাণে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষত, স্ল্যাব রেটের পরিবর্তে নির্দিষ্ট ১২.৫% হারের সুবিধা নিতে চাইলে মার্চ ৩১, ২০২৫-এর পর ইউনিট রিডিম করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

অনেকেই মিউচুয়াল ফান্ড বা ফিজিকাল সোনার তুলনায় সোনা-রুপার ETF বা FoF পছন্দ করেন, কারণ এগুলোতে স্টোরেজ কস্ট থাকে না, তারল্য বেশি, এবং অনলাইন মাধ্যমে সহজে কেনা-বেচা করা যায়। তবে কর কাঠামো বোঝা এবং রিডেমশনের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা অত্যন্ত জরুরি।
সোনা ও রুপার উপর শুল্ক হ্রাসের ফলে সেগুলোতে বিনিয়োগের খরচ কিছুটা কমবে, ফলে বাজারে চাহিদা বাড়তে পারে। তবে করের নতুন নিয়মগুলি সতর্কভাবে না বুঝে বিনিয়োগ করলে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কর দিতে হতে পারে।

শেষ কথা, নতুন বাজেটের ঘোষণা বিনিয়োগকে আরও প্রলুব্ধকর এবং সাশ্রয়ী করতে চাইলেও, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য এবং কর পরিকল্পনা মিলিয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বিনিয়োগের আগে একজন অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করাই শ্রেয়।