New LTCG Rates: ২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হওয়ার পর আয়কর কাঠামো এবং মূলধনী লাভ কর (Capital Gains Tax)–এ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন ফাইল করার আগে করদাতাদের এই নতুন নিয়মগুলি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন কর কাঠামো অনেক করদাতার পক্ষে উপকারী হলেও, কারা পুরনো কাঠামো অনুসরণ করবেন, সেই সিদ্ধান্ত বুঝে নিতে হবে।
নতুন কর স্ল্যাব: কর ছাড় ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত
নতুন কর কাঠামোয় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে ট্যাক্স রিবেট (Tax Rebate) নিয়ে। এবার থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক করযোগ্য আয় থাকলে করদাতারা সম্পূর্ণ কর ছাড় পাবেন, অর্থাৎ তাঁদের কোনও আয়করে দিতে হবে না।
তবে যাঁদের আয় ১২ লক্ষ টাকার বেশি, তাঁদের পুরো আয়ের ওপর স্ল্যাব অনুযায়ী কর ধার্য হবে:
প্রথম ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত: কোনও কর নেই
৪ লক্ষ টাকা থেকে ৮ লক্ষ টাকা: ৫% কর
৮ লক্ষ টাকা থেকে ১২ লক্ষ টাকা: ১০% কর
১২ লক্ষ টাকা থেকে ১৬ লক্ষ টাকা: ১৫% কর
১৬ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা: ২০% কর
২০ লক্ষ টাকা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা: ২৫% কর
২৫ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে: ৩০% কর
এই পরিবর্তনের ফলে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাঁরা গৃহঋণের সুদের ওপর ধারা ২৪(বি) অনুযায়ী ২ লক্ষ টাকা ছাড় পান অথবা যাঁদের হাউস রেন্ট অ্যালাওয়েন্স (HRA) উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে, তাঁদের জন্য পুরনো কর কাঠামোই লাভজনক হতে পারে।
মূলধনী লাভ কর (Capital Gains Tax)-এ বড় পরিবর্তন
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষ থেকে মূলধনী লাভ করের ক্ষেত্রেও একাধিক পরিবর্তন কার্যকর হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ কর (LTCG):
পূর্বে ইকুইটির জন্য LTCG করের হার ছিল ১০%, তা বাড়িয়ে ১২.৫% করা হয়েছে।
সমস্ত আর্থিক ও অনার্থিক সম্পদের ক্ষেত্রেই এই নতুন হার কার্যকর হবে।
স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভ কর (STCG):
কিছু সম্পদের ক্ষেত্রে STCG করের হার ১৫% থেকে বাড়িয়ে ২০% করা হয়েছে।
তালিকাভুক্ত আর্থিক সম্পদ, যেমন শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি, যদি এক বছরের বেশি সময় ধরে ধরে রাখা হয়, তবে সেগুলি দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে।
কর ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি:
ইকুইটি ও ইকুইটি-মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে LTCG করের ক্ষেত্রে বার্ষিক করছাড়ের সীমা ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১.২৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।
রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে LTCG কর:
এই হার ১২.৫% থেকে বাড়িয়ে ২০% করা হয়েছে।
তবে, ১ এপ্রিল ২০০১-এর পর কেনা সম্পত্তির জন্য ইনডেক্সেশন বেনিফিট বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে সম্পত্তির বিক্রিতে করের বোঝা বাড়তে পারে।
কর্পোরেট NPS-এ কর ছাড়ের নতুন সুযোগ
নতুন কর কাঠামোর অধীনে বেসরকারি খাতের কর্মীরাও কর ছাড়ের একটি বড় সুযোগ পাচ্ছেন।
যাঁরা কর্পোরেট ন্যাশনাল পেনশন স্কিম (NPS)-এ নাম লেখান, তাঁদের নিয়োগকর্তা যাঁদের বেসিক বেতনের ১৪ শতাংশ পর্যন্ত অবদান রাখেন, সেই অবদান এখন আয়কর ছাড়ের আওতায় আসবে।
আগে এই সীমা ছিল ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে বহু বেসরকারি কর্মচারী নতুন কর কাঠামোতে রিবেট পাওয়ার সুযোগ পাবেন।
নতুন বনাম পুরনো কর কাঠামো: কোনটা বেছে নেবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন কর কাঠামো সাধারণভাবে বেশি লাভজনক হয়ে উঠেছে, বিশেষত তাঁদের জন্য যাঁদের ইনভেস্টমেন্ট বা ঋণ সংক্রান্ত কর ছাড়ের পরিমাণ সীমিত।
তবে যাঁরা বড় অঙ্কের হাউস লোনের সুদে ছাড় পান অথবা যাঁদের জীবনবিমা, পিপিএফ, এলআইসি প্রিমিয়াম ইত্যাদির ওপর বেশি পরিমাণ ছাড় রয়েছে, তাঁদের জন্য পুরনো কাঠামো এখনো উপযোগী হতে পারে।
নতুন ব্যবস্থায় কর ছাড় (deduction) এর সুযোগ সীমিত হলেও করের হার কম, ফলে সরল ও স্বচ্ছ কর পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।
২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় এই সব পরিবর্তন বিবেচনা করে তবে কর কাঠামো নির্বাচন করা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু নতুন নিয়মগুলি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহৎ প্রভাব ফেলতে পারে করদাতার উপার্জন ও সঞ্চয়ে, তাই রিটার্ন ফাইল করার আগে একজন ট্যাক্স অ্যাডভাইজারের সঙ্গে আলোচনা করাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।