২০২০ সালে নতুন কর ব্যবস্থা (New Tax Regime) চালুর পর থেকেই করদাতাদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত পুরনো ট্যাক্স রেজিমে যেখানে নানা ধরনের ছাড় (exemptions) ও ডিডাকশন (deductions) পাওয়া যেত, সেখানে নতুন ব্যবস্থায় করহার কমিয়ে বেশি টাকা মানুষের হাতে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এর ফলে বেশিরভাগ জনপ্রিয় ছাড় ও ডিডাকশন উঠে গেছে। তবুও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছাড় এখনো দুই রেজিমেই পাওয়া যায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক—
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন (Standard Deduction)
সর্বাধিক আলোচিত সুবিধাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন। আগে এটি কেবল পুরনো রেজিমে পাওয়া যেত। এখন বেতনভুক্ত কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা নতুন রেজিমেও এ সুবিধা নিতে পারবেন। তবে অঙ্কে পার্থক্য রয়েছে—
পুরনো রেজিমে: নির্দিষ্ট ৫০,০০০ টাকা ছাড়।
নতুন রেজিমে (FY 2024-25 / AY 2025-26): বাড়িয়ে ৭৫,০০০ টাকা ছাড়।
এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযোজ্য হয়, অর্থাৎ আলাদা করে দাবি করতে হয় না। ফলে ট্যাক্স লায়াবিলিটি সরাসরি কমে যায়।
অবসরকালীন সঞ্চয় যেমন EPF (Employees’ Provident Fund) ও NPS (National Pension Scheme)-এ নিয়োগকর্তার অবদান উভয় রেজিমেই করমুক্ত। তবে এর সীমা নির্দিষ্ট—₹৭.৫ লক্ষ পর্যন্ত অবদান করমুক্ত থাকবে। এর বেশি হলে কর্মচারীর হাতে তা ট্যাক্সযোগ্য হবে।
আগে গ্র্যাচুইটির সুবিধা শুধু পুরনো রেজিমেই পাওয়া যেত। সেখানে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্র্যাচুইটি করমুক্ত। নতুন রেজিমে দীর্ঘদিন এই সুবিধা ছিল না। তবে ২০২৫ সালের মে মাসে CBDT-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী এখন নতুন রেজিমেও সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্র্যাচুইটি করমুক্ত হয়েছে।
যে সমস্ত পরিবারে উপার্জনকারী সদস্য মারা গেছেন, তাদের নির্ভরশীলরা নিয়মিত ফ্যামিলি পেনশন পান। পুরনো রেজিমে এর উপর ১৫,০০০ টাকা ছাড় পাওয়া যেত। বাজেট ২০২৪-এ নতুন রেজিমে এর সীমা বাড়িয়ে ২৫,০০০ টাকা করা হয়েছে (FY 2024-25 থেকে প্রযোজ্য)।
২০২০ সালে চালু হওয়া অগ্নিপথ প্রকল্প-এর আওতায় “অগ্নিবীর”রা চার বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। তাঁদের বেতন থেকে একটি অংশ ও সরকারের সমান অবদান মিলে তৈরি হয় “সেবা নিধি”।
পুরনো রেজিমে: অগ্নিবীরের নিজের অবদান ও সরকারের অবদান—দুটিই করছাড় পায়।
নতুন রেজিমে: কেবল সরকারের অবদান করমুক্ত থাকবে। অগ্নিবীরের নিজের অবদান এখানে ছাড় পাবে না।
নতুন ট্যাক্স রেজিম সহজ করার উদ্দেশ্যে বহু প্রচলিত ডিডাকশন বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে যারা কর সাশ্রয়ের জন্য এসব ধারার উপর নির্ভর করতেন, তাঁদের কাছে পুরনো রেজিমই লাভজনক হতে পারে। বাদ পড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো:
ধারা 80C: PPF, ELSS, NSC, জীবনবীমা প্রিমিয়াম, হোম লোনের আসল, টিউশন ফি ইত্যাদি।
ধারা 80D: স্বাস্থ্যবীমা প্রিমিয়াম।
ধারা 80E: শিক্ষা ঋণের সুদ।
ধারা 24(b): নিজস্ব বাড়ির হোম লোনের সুদ।
ধারা 80G: দান-অনুদান।
ধারা 80TTA/80TTB: সেভিংস অ্যাকাউন্ট সুদের ছাড়।
HRA ও LTA: ভাড়া ভাতা ও ছুটি ভ্রমণ ভাতা।
নতুন রেজিম তুলনামূলকভাবে “লিন” বা সরলীকৃত। এখানে করের স্ল্যাবও সংশোধিত, যার ফলে অনেকের সামগ্রিক করভার কমেছে। কিন্তু যারা 80C ও 80D-এর মতো ধারা ব্যবহার করে অনেক ছাড় দাবি করতেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পুরনো রেজিম অনেক বেশি সুবিধাজনক হতে পারে।
অন্যদিকে, যদি করদাতার মূল লক্ষ্য হয় কম ট্যাক্স দেওয়া এবং সহজ ব্যবস্থা, তবে নতুন রেজিম কার্যকরী। বিশেষ করে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন, নিয়োগকর্তার অবদান, ফ্যামিলি পেনশন ও গ্র্যাচুইটির নতুন ছাড় এ ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।
পুরনো ও নতুন কর ব্যবস্থার মধ্যে কোনটি বেছে নেবেন, তা নির্ভর করে আপনার আয়, বিনিয়োগ অভ্যাস ও করছাড়ের উপর নির্ভরশীলতার উপর। কর ফাইল করার আগে দু’টি ব্যবস্থায় করযোগ্য আয় ও ট্যাক্স লায়াবিলিটি হিসাব করে নেওয়া উচিত। সঠিক পরিকল্পনা করলে উভয় ব্যবস্থার সুবিধা কাজে লাগিয়ে করের বোঝা অনেকটাই কমানো সম্ভব।