নয়াদিল্লি, ৮ অক্টোবর ২০২৫: ভারতের কর্পোরেট দুনিয়ায় বিরল এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী টাটা গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিতে পৌঁছে গেছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে উঠেছে যে, মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন-এর বাসভবনে তড়িঘড়ি এক বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে হাজির ছিলেন টাটা ট্রাস্টসের চেয়ারম্যান নোয়েল টাটা ও টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন।
প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলা এই বৈঠকে টাটা ট্রাস্টস ও টাটা সন্সের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সরকারের বার্তা ছিল স্পষ্ট—টাটা ট্রাস্টসের হাতে থাকা বিপুল ৬৬% শেয়ার জনস্বার্থমূলক দায়বদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত, তাই বোর্ডরুমের দ্বন্দ্ব যেন বাজার ও শিল্পখাতে অস্থিরতা না তৈরি করে।
🔻 দুই শিবিরে বিভক্ত ট্রাস্ট
টাটা ট্রাস্টসের ভেতর এখন দ্বন্দ্ব প্রকট।
নোয়েল টাটা, ভেনু শ্রীনিবাসন ও বিজয় সিং একদিকে।
অন্যদিকে মেহলি মিস্ত্রি, দারিয়াস খামবাটা, প্রমিত ঝাভেরি (সিটিব্যাংক ইন্ডিয়া সিইও) ও জেহাঙ্গির এইচ.সি. জেহাঙ্গির।
মেহলি মিস্ত্রির শিবিরের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, মেহলি মিস্ত্রির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে শাপুরজি পালোনজি (SP) গ্রুপের সঙ্গে, যারা টাটা সন্সে প্রায় ১৮.৩৭% শেয়ার ধরে রেখেছে।
⚡ বিজয় সিং অপসারণে আগুনে ঘি
১১ সেপ্টেম্বরের বোর্ড মিটিংয়ে প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব বিজয় সিং-কে টাটা সন্স বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় এই দ্বন্দ্ব। সাতজন ট্রাস্টির মধ্যে চারজন তাঁর অপসারণে সম্মতি দেন। যদিও তিনি এখনো টাটা ট্রাস্টসের ট্রাস্টি পদে বহাল আছেন।
🔎 আরবিআই ও শাপুরজি পালোনজি নিয়ে দোটানা
এই অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন এমন সময়ে সামনে এসেছে, যখন টাটা সন্স রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) সঙ্গে তাদের প্রাইভেট কোম্পানি স্ট্যাটাস বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চালাচ্ছে। পাশাপাশি, শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের শেয়ার প্রস্থান পরিকল্পনা নিয়েও উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় রয়েছে।
বর্তমানে টাটা সন্স বোর্ডে তিনটি আসন ফাঁকা, বিজয় সিং-এর পদ শূন্য হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে চারটে। ফলে নতুন নিয়োগে ট্রাস্টিদের ঐকমত্য অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে।
🪙 কেন্দ্রের সরাসরি নজর
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রের বার্তা স্পষ্ট—
“টাটা গ্রুপ ভারতের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ সমস্যা প্রকাশ্যে এনে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা যাবে না। সমাধান হতে হবে গঠনমূলক উপায়ে।”
শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই সরাসরি হস্তক্ষেপই প্রমাণ করে ভারতের কর্পোরেট কাঠামোতে টাটা গোষ্ঠীর গভীর প্রভাব।
📅 সামনে গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড মিটিং
আগামী ১০ অক্টোবরের বোর্ড মিটিং-এ ভেনু শ্রীনিবাসনের বোর্ড মনোনয়ন নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এছাড়া, স্বাধীন পরিচালক লিও পুরি ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন এবং জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার সিইও রালফ স্পেথ ও শিল্পপতি অজয় পিরামল শিগগিরই অবসর নেবেন। ফলে নতুন নিয়োগে টাটা ট্রাস্টসের ভেতরের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হতে পারে।
টাটা গ্রুপ শুধু একটি শিল্পগোষ্ঠী নয়, ভারতের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডের অন্যতম স্তম্ভ। তাদের অভ্যন্তরীণ বোর্ডরুম দ্বন্দ্ব এখন সরকারের নজরে আসায় প্রমাণ হলো—এই সংস্থার স্থিতিশীলতা দেশের বাজার ও অর্থনীতির জন্য কতটা জরুরি। ১০ অক্টোবরের বোর্ড মিটিং তাই শুধু টাটা ট্রাস্টস নয়, গোটা কর্পোরেট দুনিয়ার কাছেই নজরকাড়া হতে চলেছে।