টাটা মোটরস তার নতুন কুপ-এসইউভি টাটা কার্ভের ডার্ক এডিশন (Tata Curvv Dark Edition) লঞ্চ করে ভারতীয় অটোমোবাইল বাজারে আরেকটি মাইলফলক স্থাপন করেছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে কার্ভের লঞ্চের সময় এর অনন্য কুপ-এসইউভি ডিজাইন ক্রেতাদের মন জয় করেছিল। এই গাড়িটি কেবল তার স্টাইলিশ চেহারার জন্যই নয়, বরং টাটা নেক্সনের তুলনায় উন্নত ফিচার এবং প্রিমিয়াম অভ্যন্তরীণ সজ্জার জন্যও প্রশংসিত হয়েছিল। এবার ডার্ক এডিশনের মাধ্যমে টাটা কার্ভ আরও আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে। তবে এই বিশেষ সংস্করণ শুধুমাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাবে। আইপিএল ২০২৫-এর অফিসিয়াল গাড়ি হিসেবে নির্বাচিত এই মডেলটি ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনার জোয়ার এনেছে।
টাটা কার্ভ ডার্ক এডিশন: ভ্যারিয়েন্ট ও মূল্য
টাটা কার্ভ ডার্ক এডিশন দুটি ট্রিমে উপলব্ধ—অ্যাকম্প্লিশড এস এবং অ্যাকম্প্লিশড +এ। এই দুটি ট্রিম টার্বো-পেট্রোল এবং ডিজেল উভয় ইঞ্জিন বিকল্পে পাওয়া যাবে। ১.২ লিটার হাইপেরিয়ন জিডিআই পেট্রোল ভ্যারিয়েন্টের মূল্য শুরু হয়েছে ১৬.৪৯ লক্ষ টাকা থেকে (ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন) এবং টপ-স্পেক অটোমেটিক ভ্যারিয়েন্টের জন্য ১৯.৪৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে, ১.৫ লিটার ক্রায়োজেট ডিজেল ভ্যারিয়েন্টের মূল্য ১৬.৬৯ লক্ষ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৯.৫২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত (এক্স-শোরুম, প্যান-ইন্ডিয়া)। নিচে ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ী মূল্য তালিকা দেওয়া হল:
অ্যাকম্প্লিশড এস #ডার্ক
- ১.২ লিটার হাইপেরিয়ন জিডিআই পেট্রোল: ম্যানুয়াল – ১৬.৪৯ লক্ষ টাকা, ডিসিএ – ১৭.৯৯ লক্ষ টাকা
- ১.৫ লিটার ক্রায়োজেট ডিজেল: ম্যানুয়াল – ১৬.৬৯ লক্ষ টাকা, ডিসিএ – ১৮.১৯ লক্ষ টাকা
অ্যাকম্প্লিশড +এ #ডার্ক
- ১.২ লিটার হাইপেরিয়ন জিডিআই পেট্রোল: ম্যানুয়াল – ১৭.৯৯ লক্ষ টাকা, ডিসিএ – ১৯.৪৯ লক্ষ টাকা
- ১.৫ লিটার ক্রায়োজেট ডিজেল: ম্যানুয়াল – ১৮.০২ লক্ষ টাকা, ডিসিএ – ১৯.৫২ লক্ষ টাকা
এই মূল্য স্ট্যান্ডার্ড মডেলের তুলনায় ৩০,০০০ থেকে ৩২,০০০ টাকা বেশি, যা এই বিশেষ সংস্করণের প্রিমিয়াম ফিচার এবং ডিজাইনের জন্য ন্যায্য বলে মনে করা হচ্ছে।
টাটা কার্ভ ডার্ক এডিশন: স্পেসিফিকেশন
টাটা কার্ভ ডার্ক এডিশন দুটি শক্তিশালী ইঞ্জিন বিকল্প নিয়ে এসেছে। ১.২ লিটার হাইপেরিয়ন জিডিআই টার্বো-পেট্রোল ইঞ্জিনটি ১২৫ হর্সপাওয়ার এবং ২২৫ এনএম টর্ক উৎপন্ন করে। অন্যদিকে, ১.৫ লিটার ক্রায়োজেট টার্বো-ডিজেল ইঞ্জিনটি ১১৮ হর্সপাওয়ার এবং ২৬০ এনএম টর্ক প্রদান করে। উভয় ইঞ্জিনই ৬-স্পিড ম্যানুয়াল এবং ৭-স্পিড ডুয়াল-ক্লাচ অটোমেটিক (ডিসিএ) ট্রান্সমিশনের সঙ্গে পাওয়া যাবে। এই ইঞ্জিনগুলো শহরের রাস্তা থেকে হাইওয়ে পর্যন্ত সুষ্ঠু ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে। গাড়িটিতে ইকো, সিটি এবং স্পোর্টস—এই তিনটি ড্রাইভ মোড রয়েছে, যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ড্রাইভারের সুবিধা বাড়ায়।
টাটা কার্ভ ডার্ক এডিশন: পরিবর্তন ও ফিচার
টাটা কার্ভ ডার্ক এডিশনের বাইরের চেহারায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল এর সম্পূর্ণ কালো রঙের ফিনিশ। স্ট্যান্ডার্ড মডেলে থাকা ক্রোম অ্যাকসেন্টগুলো এখানে পিয়ানো-ব্ল্যাক ইনসার্ট দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে, যা গাড়িটিকে আরও আক্রমণাত্মক এবং আধুনিক চেহারা দিয়েছে। ফেন্ডারে ‘#ডার্ক’ ব্যাজ এই সংস্করণের বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছে। এছাড়া, ১৮ ইঞ্চির কালো অ্যালয় হুইল এবং ফ্লাশ ডোর হ্যান্ডেল গাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
অভ্যন্তরে, কেবিনটি সম্পূর্ণ কালো থিমে সজ্জিত। ব্ল্যাক লেদারেট আসন, কালো ড্যাশবোর্ড এবং ‘ডার্ক’ ব্যাজিং সহ হেডরেস্ট এই সংস্করণকে প্রিমিয়াম ফিল দেয়। ফিচারের মধ্যে রয়েছে ১২.৩ ইঞ্চির টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, ১০.২৫ ইঞ্চির ডিজিটাল ইনস্ট্রুমেন্ট ক্লাস্টার, নয়-স্পিকার জেবিএল সাউন্ড সিস্টেম, ভেন্টিলেটেড ফ্রন্ট সিট, ওয়্যারলেস চার্জার এবং ভয়েস-অ্যাসিস্টেড প্যানোরামিক সানরুফ। নিরাপত্তার জন্য এতে রয়েছে ৬টি এয়ারব্যাগ, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, লেভেল ২ এডিএএস, ইলেকট্রনিক পার্কিং ব্রেক এবং টায়ার প্রেসার মনিটরিং সিস্টেম। অ্যাকম্প্লিশড +এ ভ্যারিয়েন্টে অতিরিক্ত ফিচার হিসেবে অ্যামাজন অ্যালেক্সা ইন্টিগ্রেশন এবং জেসচার-কন্ট্রোলড পাওয়ার টেলগেট রয়েছে।
প্রতিযোগিতা ও বাজার অবস্থান
টাটা কার্ভ ডার্ক এডিশন ভারতীয় বাজারে সিট্রোয়েন বাসাল্টের ডার্ক এডিশনের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা করবে। এছাড়া, হুন্ডাই ক্রেটা নাইট এডিশন, কিয়া সেলটোস এক্স-লাইন এবং হোন্ডা এলিভেট সিগনেচার ব্ল্যাক এডিশনের মতো মডেলের সঙ্গেও এটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। মারুতি গ্র্যান্ড ভিটারা, টয়োটা হাইরাইডার, ভক্সওয়াগেন টাইগুন এবং স্কোডা কুশাকের মতো কমপ্যাক্ট এসইউভিগুলোর জন্যও এটি একটি আকর্ষণীয় বিকল্প। গাড়িটির ৫-স্টার ভারত এনক্যাপ রেটিং এটিকে নিরাপত্তার দিক থেকে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে।
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশা
ডার্ক এডিশনের ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যমে টাটা ভক্তদের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। একজন ভক্ত লিখেছেন, “কালো রঙে কার্ভ আরও শক্তিশালী দেখাচ্ছে। এটি রাস্তায় সকলের নজর কাড়বে।” আরেকজন মন্তব্য করেন, “এই ফিচারের সঙ্গে এই দামে কার্ভ ডার্ক এডিশন অপ্রতিরোধ্য।” টাটা মোটরসের এই পদক্ষেপ ক্রেতাদের মধ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং আইপিএল ২০২৫-এর সঙ্গে যুক্তি এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
টাটা কার্ভ ডার্ক এডিশন শুধু একটি গাড়ি নয়, এটি টাটা মোটরসের উদ্ভাবনী চিন্তা এবং বাজারের চাহিদা বোঝার প্রতীক। এর আকর্ষণীয় ডিজাইন, প্রিমিয়াম ফিচার এবং শক্তিশালী ইঞ্জিন বিকল্প এটিকে ভারতীয় ক্রেতাদের জন্য একটি লোভনীয় পছন্দ করে তুলেছে। যদিও এটি শুধুমাত্র টপ-স্পেক ট্রিমে পাওয়া যাচ্ছে, তবু এর প্রিমিয়াম ফিল এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য এটিকে মূল্যের জন্য যথাযথ করে তোলে। কার্ভ ডার্ক এডিশন কমপ্যাক্ট এসইউভি সেগমেন্টে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।