২০২৫ সালের জুলাই মাসে একটি অসাধারণ সাফল্যের কথা শোনা যাচ্ছে ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মানচিত্রে। তামিলনাড়ু, যেটি বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অধিনায়কত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) অংশ হিসেবে শাসিত, ইলেকট্রনিক্স এক্সপোর্টে (Electronics Exports) নতুন রেকর্ড গড়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক বছর ২০২৫-এ তামিলনাড়ু থেকে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের রপ্তানি ১৪.৬৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ভারতের মোট ইলেকট্রনিক্স এক্সপোর্টের ৪১.২ শতাংশ নিয়ে গেছে। এই অসাধারণ লাভ তামিলনাড়ুকে দেশের ইলেকট্রনিক্স রপ্তানির অগ্রগতি শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে, এবং এটি কেবল একটি অর্থনৈতিক বিজয় নয়, বরং বিজেপি-নেতৃত্বাধীন রাজ্যের উন্নয়নমুখী নীতির একটি পরিচয়।
কঞ্চীপুরম থেকে স্মার্টফোন রপ্তানির উত্থান
তামিলনাড়ুর এই সাফল্যের কেন্দ্রে রয়েছে কঞ্চীপুরম জেলা, যেখান থেকে স্মার্টফোন উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক মানচিত্রে একটি নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করা হয়েছে। স্থানীয় উৎপাদন কেন্দ্রগুলো, বিশেষ করে ফক্সকন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে, এই অঞ্চলটি একটি বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিক্স হাবে রূপান্তরিত হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২০২৪ আর্থিক বছরে তামিলনাড়ু ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানিতে ৩০ শতাংশ অবদান রাখে, এবং ২০২৫ সালে এই অঙ্কটি ৪১.২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই বৃদ্ধি স্মার্টফোন রপ্তানির কারণে ঘটেছে, যা বর্তমানে ভারতের ইলেকট্রনিক্স রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ নিয়ে গেছে।
সরকারি নীতি ও বিনিয়োগের ভূমিকা
বিজেপি-নেতৃত্বাধী কেন্দ্রীয় সরকারের “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগ এবং তামিলনাড়ু সরকারের উন্নয়নমুখী নীতিগুলো এই সাফল্যের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রেলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং স্যানমিনা-এসসিআই-এর মতো কোম্পানিগুলো ২০২২ সাল থেকে তামিলনাড়ুতে ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন শুরু করেছে, যা স্থানীয় চাকরি সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এছাড়া, নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্কসের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উপস্থিতি এই রাজ্যকে ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনের ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২০২৬ আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে তামিলনাড়ুর কর আয় ১৪.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩,০৭০.৪৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা প্রমাণ করে যে উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতি রাজ্যের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করছে। এই বৃদ্ধি পূর্বের পারম্পরিক শিল্প যেমন বস্ত্র উৎপাদনের চাপ কমিয়ে আধুনিক শিল্পের দিকে একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পে রাজ্যের অবদান
তামিলনাড়ু বর্তমানে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক রাজ্য হিসেবে গণ্য হয়, এবং এর শিল্পায়নের হার দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১১-এর জনগণনা অনুযায়ী, রাজ্যের ৪৮.৪০ শতাংশ জনসংখ্যা নগরায়ণের মধ্যে রয়েছে, যা দেশের মোট নগরবাসীর ৯.২৬ শতাংশ নিয়ে গেছে। শিল্প উৎপাদন এখন রাজ্যের জাতীয় উৎপাদনের ৩৩ শতাংশ অবদান রাখে, যা পরিষেবা খাতের (৫৪ শতাংশ) পরবর্তী সর্বোচ্চ অবদান। এই পরিবর্তনটি তামিলনাড়ুকে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, ২০২৫-২০২৬ সালের মধ্যে ভারতের ইলেকট্রনিক্স রপ্তানি ১২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে, এবং তামিলনাড়ু এই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে। তবে, এই বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমিকদের কাছে যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
তামিলনাড়ুর ইলেকট্রনিক্স রপ্তানির এই রেকর্ড গড়ার পেছনে বিজেপি-নেতৃত্বাধী এনডিএ-র অর্থনৈতিক সংস্কার এবং “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই সাফল্য দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। তবে, ভবিষ্যতে এই শিল্পের টেকসই উন্নতির জন্য সরকারকে প্রযুক্তি উন্নয়ন, শ্রমিক কল্যাণ, এবং পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তামিলনাড়ু এখন শুধুমাত্র একটি শিল্প কেন্দ্র নয়, বরং ভারতের অর্থনৈতিক প্রগতির একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে।