কীভাবে কমাবেন ক্রেডিট কার্ডের সুদ? জেনে নিন ৭টি উপায়

ক্রেডিট কার্ড (Credit Card) আজকের দিনে অত্যন্ত কার্যকর একটি আর্থিক হাতিয়ার। ছোট থেকে বড় কেনাকাটা, জরুরি মুহূর্তে অর্থের ব্যবস্থা কিংবা অনলাইন লেনদেনে এর ব্যবহার বহুল…

Kotak Mahindra Bank Launches New Premium Credit Card

ক্রেডিট কার্ড (Credit Card) আজকের দিনে অত্যন্ত কার্যকর একটি আর্থিক হাতিয়ার। ছোট থেকে বড় কেনাকাটা, জরুরি মুহূর্তে অর্থের ব্যবস্থা কিংবা অনলাইন লেনদেনে এর ব্যবহার বহুল জনপ্রিয়। তবে এর সুবিধার পাশাপাশি ঝুঁকিও রয়েছে। সচেতনভাবে ব্যবহার না করলে ক্রেডিট কার্ড হতে পারে অত্যন্ত ব্যয়বহুল ঋণের উৎস। বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক সুদের হার গড়ে ৩০ থেকে ৪২ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, যা অন্য যেকোনও ঋণের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে সামান্য অসতর্কতাও আপনাকে অপ্রয়োজনীয় ঋণের বোঝা বইতে বাধ্য করতে পারে।

অনেকেই ভেবে নেন যে প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডের ‘মিনিমাম ডিউ’ বা ন্যূনতম অর্থপ্রদান করলেই দায়মুক্তি পাওয়া যাবে। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কার্ডের বকেয়া থাকে ২০,০০০ টাকা এবং আপনি কেবল ১,০০০ টাকা ন্যূনতম অর্থপ্রদান করেন, তবে অবশিষ্ট ১৯,০০০ টাকার উপর সুদ যোগ হতে থাকবে। বার্ষিক ৩৬ শতাংশ হারে এই টাকার মাসিক সুদ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫৭০ টাকা। অর্থাৎ যতদিন না আপনি পুরো অর্থ পরিশোধ করছেন, ততদিন সুদ যোগ হতে থাকবে এবং ঋণের বোঝা ক্রমেই ভারী হবে। তাই সর্বদা চেষ্টা করা উচিত সম্পূর্ণ বিল মিটিয়ে ফেলার, নইলে অন্তত যতটা সম্ভব বেশি পরিশোধ করার।

   

ক্রেডিট কার্ড সাধারণত ৪৫ দিন পর্যন্ত সুদমুক্ত ক্রেডিট সুবিধা দেয়, শর্ত একটাই—বিল সময়মতো পরিশোধ করতে হবে। বড় কেনাকাটা করার পরিকল্পনা থাকলে বিলিং তারিখের ঠিক পরেই লেনদেন করা বুদ্ধিমানের কাজ। এতে আপনি পুরো ৪৫ দিনের সুযোগ পাবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, নগদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে এই সুদমুক্ত সুবিধা প্রযোজ্য হয় না।

যদি আপনি উচ্চ সুদের কার্ড ঋণে জড়িয়ে পড়েন, তবে ব্যালেন্স ট্রান্সফার একটি উপকারী বিকল্প হতে পারে। এর মাধ্যমে একটি কার্ডের বকেয়া অন্য একটি কার্ডে স্থানান্তর করা যায় কম সুদের হারে। অনেক সময় প্রাথমিক কয়েক মাসের জন্য সুদ শূন্যও থাকে। যেমন, ১ লক্ষ টাকা ঋণ যদি ৩৬ শতাংশ সুদের বদলে ১২ শতাংশে স্থানান্তর করা যায়, তবে বছরে প্রায় ২৪,০০০ টাকা সাশ্রয় সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাতকরণ ফি ও শর্তাবলী সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।

স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা অন্য কোনো ব্যয়বহুল সামগ্রী ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনার পর যদি পুরো টাকা একসঙ্গে পরিশোধ সম্ভব না হয়, তবে তা ইএমআই বা কিস্তিতে রূপান্তর করা যেতে পারে। সাধারণত ইএমআইতে সুদের হার তুলনামূলক কম হয়। যেমন, ৬০,০০০ টাকার পণ্য যদি ৩৬ শতাংশ সুদে এক বছরের মধ্যে শোধ করতে হয়, তবে সুদের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২১,৬০০ টাকা। অথচ সেটিকে ১৮ শতাংশ হারে ১২ মাসের ইএমআইতে নিলে সুদ দিতে হবে মাত্র ৫,৪০০ টাকার মতো। ফলে সাশ্রয় অনেকটাই হবে।

আপনার ব্যাংকের আরোপিত সুদের হার সবসময়ই চূড়ান্ত নয়। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত গ্রাহক হলে বা নিয়মিত পরিশোধ করে থাকলে ব্যাংককে অনুরোধ করতে পারেন সুদের হার কিছুটা কমানোর জন্য কিংবা কিছু চার্জ মওকুফ করার জন্য। যেমন, যদি সুদের হার ৩৬ শতাংশ থেকে নেমে ২৮ শতাংশে আসে, তবে ৫০,০০০ টাকার বকেয়ায় বছরে প্রায় ৪,০০০ টাকা সাশ্রয় সম্ভব। তাই একবার চেষ্টা করে দেখাই ভালো।

Advertisements

যাদের একবারে পুরো বিল মেটানো কঠিন মনে হয়, তারা খরচকে একাধিক কার্ডে ভাগ করে নিতে পারেন। একটি কার্ডের বিল পুরোপুরি মিটিয়ে ফেলুন, আরেকটিতে ছোট অংশ রাখুন। এতে একদিকে সুদের খরচ কমবে, অন্যদিকে আপনার ক্রেডিট স্কোরও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে।

ক্রেডিট কার্ড থেকে নগদ উত্তোলন সবচেয়ে ব্যয়বহুল লেনদেনের মধ্যে একটি। এখানে সুদ গুনতে হয় লেনদেনের দিন থেকেই, এবং সঙ্গে থাকে বাড়তি চার্জ। উদাহরণস্বরূপ, ১০,০০০ টাকা নগদ তুললে মাত্র এক মাসেই প্রায় ৮০০ টাকারও বেশি খরচ পড়তে পারে। তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া নগদ উত্তোলন থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।

ক্রেডিট কার্ডের সুদ জমতে জমতে দ্রুত বেড়ে যায়, ফলে সামান্য অসাবধানতাও বড় আর্থিক চাপ তৈরি করতে পারে। তবে কিছু সহজ অভ্যাস বদলালেই এই বাড়তি খরচ এড়ানো সম্ভব। সর্বদা ন্যূনতম অর্থপ্রদানের বেশি পরিশোধ করা, সুদমুক্ত সময়সীমা কাজে লাগানো, ব্যালেন্স ট্রান্সফার বা ইএমআইয়ের সুযোগ নেওয়া, ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা এবং নগদ উত্তোলন থেকে দূরে থাকা—এসব পদক্ষেপ ক্রেডিট কার্ডের খরচকে অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারে।

সবশেষে মনে রাখা দরকার, ক্রেডিট কার্ড হলো দায়িত্বশীল ব্যবহারকারীর জন্য আশীর্বাদ, আর অসচেতন ব্যবহারকারীর জন্য বোঝা। তাই ব্যবহার করুন বিচক্ষণতার সঙ্গে, সাশ্রয় করুন নিজের কষ্টার্জিত অর্থ।