ব্যক্তিগত ঋণ (Personal loan) দ্রুত এবং সুবিধাজনকভাবে অর্থের প্রয়োজন মেটানোর একটি জনপ্রিয় উপায়। এটি একটি অসুরক্ষিত ঋণ, অর্থাৎ এর জন্য কোনো জামানত দিতে হয় না। বাড়ির মেরামত, চিকিৎসা ব্যয়, ভ্রমণ পরিকল্পনা বা বড় কেনাকাটার জন্য অনেকেই এই ঋণের উপর ভরসা করেন। যেহেতু এটি জামানতবিহীন, তাই সুদের হার আপনার ক্রেডিট প্রোফাইল এবং ঋণদাতার নীতির উপর নির্ভর করে। তাই সর্বনিম্ন সুদের হার পাওয়ার জন্য কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি, যাতে আপনাকে অতিরিক্ত খরচের বোঝা না বহন করতে হয়। এখানে কিছু কার্যকর পরামর্শ দেওয়া হল, যা আপনাকে সেরা সুদের হারে ব্যক্তিগত ঋণ পেতে সাহায্য করবে।
ক্রেডিট স্কোর উন্নত করুন
আপনার ক্রেডিট স্কোর ঋণের সুদের হার নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৭৫০ বা তার বেশি স্কোর থাকলে ঋণদাতারা আপনাকে দায়িত্বশীল গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করে এবং কম সুদের হার প্রস্তাব করে।
কীভাবে উন্নত করবেন:
- ইএমআই এবং ক্রেডিট কার্ডের বিল সময়মতো পরিশোধ করুন।
- ক্রেডিট ব্যবহারের হার ৩০ শতাংশের নিচে রাখুন।
- অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করা থেকে বিরত থাকুন।
- নিয়মিত আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট পরীক্ষা করে ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করুন।
- একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর শুধু কম সুদের হারই নিশ্চিত করে না, বরং ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনাও বাড়ায়।
একাধিক ঋণদাতার প্রস্তাব তুলনা করুন
বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি) এবং ডিজিটাল ঋণদাতাদের সুদের হারে বেশ পার্থক্য থাকে। প্রথম যে প্রস্তাবটি পাবেন, তাতেই রাজি হয়ে যাবেন না। অনলাইন ঋণ তুলনা ওয়েবসাইট বা অ্যাগ্রিগেটর ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রস্তাব পাশাপাশি তুলনা করুন। শুধু সুদের হার নয়, প্রসেসিং ফি, ফোরক্লোজার চার্জ এবং অন্যান্য লুকানো খরচও বিবেচনায় রাখুন। এই তুলনা আপনাকে সবচেয়ে লাভজনক ঋণ বেছে নিতে সাহায্য করবে।
স্বল্প মেয়াদের ঋণ বেছে নিন
দীর্ঘ মেয়াদের ঋণে ইএমআই কম হয়, কিন্তু মোট সুদের পরিমাণ বেশি হয়। স্বল্প মেয়াদের ঋণ বেছে নিলে সুদে সঞ্চয় করা সম্ভব।
উদাহরণ:
- ৫ লক্ষ টাকার ঋণ ১১% সুদে ৫ বছরের জন্য নিলে মোট সুদ হবে ১.৫৩ লক্ষ টাকা।
- একই ঋণ ২ বছরের জন্য নিলে সুদ হবে মাত্র ৫৮,০০০ টাকা।
- আপনার আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী স্বল্প মেয়াদ বেছে নিলে সুদের বোঝা অনেকটাই কমবে।
প্রি-অ্যাপ্রুভড অফারের সুবিধা নিন
অনেক ব্যাঙ্ক তাদের বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য প্রি-অ্যাপ্রুভড ঋণের প্রস্তাব দেয়। এই অফারে সাধারণত কম সুদের হার, কম কাগজপত্র এবং দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের সুবিধা থাকে। যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে কোনো ব্যাঙ্কের নিয়মিত গ্রাহক হয়ে থাকেন, তাহলে সরাসরি ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও ভালো হারের জন্য আলোচনা করতে পারেন। এটি আপনার সময় এবং অর্থ দুটোই বাঁচাতে পারে।
উৎসব বা বিশেষ মৌসুমের অফারের সুযোগ নিন
দীপাবলি, বড়দিন বা নববর্ষের মতো উৎসবের সময় অনেক ঋণদাতা সুদের হারে ছাড় বা প্রসেসিং ফি মওকুফের মতো আকর্ষণীয় অফার দেয়। কিছু ব্যাঙ্ক এই সময়ে তাদের নিয়মিত গ্রাহকদের জন্য বিশেষ প্রি-অ্যাপ্রুভড ডিলও প্রকাশ করে। তাই এই মৌসুমে ঋণের জন্য আবেদন করলে আপনি কম সুদে ঋণ পেতে পারেন এবং অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন। এই সময়ে বাজারে প্রতিযোগিতা বেশি থাকায় ঋণদাতারা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে এই সুবিধাগুলো দেয়।
সহ-আবেদনকারীর সঙ্গে আবেদন করুন
যদি আপনার আয় বা ক্রেডিট স্কোর কম হয়, তাহলে সহ-আবেদনকারীর সঙ্গে ঋণের জন্য আবেদন করা একটি ভালো কৌশল হতে পারে। সহ-আবেদনকারী হতে পারেন আপনার স্ত্রী, পিতা-মাতা বা ভাই-বোন, যাদের নিয়মিত আয় রয়েছে। এটি ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর পাশাপাশি সুদের হার কমাতেও সাহায্য করতে পারে। তবে মনে রাখবেন, আপনার এবং সহ-আবেদনকারী উভয়ের ক্রেডিট স্কোর পরীক্ষা করা হবে। যদি সহ-আবেদনকারী ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনাকেও তার দায় বহন করতে হবে।
আয়ের স্থিতিশীলতা বজায় রাখুন
ঋণদাতারা স্থিতিশীল আয় এবং নিয়মিত চাকরি থাকা ব্যক্তিদের পছন্দ করে, বিশেষ করে যদি তারা স্বনামধন্য সংস্থায় কাজ করেন। সেরা সুদের হার পেতে আপনার অন্তত ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান নিয়োগকর্তার অধীনে কমপক্ষে ৬ মাস কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা উচিত। আপনার বেতন নিয়মিতভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আসা উচিত। স্ব-নিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আয়ের প্রমাণ হিসেবে আয়কর রিটার্ন (আইটিআর) এবং জিএসটি ফাইলিং দেখাতে হতে পারে। স্থিতিশীল আয় ঋণদাতাদের কাছে আপনার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতার নিশ্চয়তা দেয়, যা কম সুদের হার পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার আগে আপনার আর্থিক পরিস্থিতি এবং প্রয়োজনীয়তা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন। একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর, সঠিক ঋণদাতার সঙ্গে তুলনা, স্বল্প মেয়াদের ঋণ, প্রি-অ্যাপ্রুভড বা উৎসবের অফার, সহ-আবেদনকারী এবং স্থিতিশীল আয়ের মাধ্যমে আপনি সেরা সুদের হারে ঋণ পেতে পারেন। এই পদক্ষেপগুলো আপনাকে অতিরিক্ত খরচ থেকে বাঁচিয়ে আর্থিকভাবে আরও সুরক্ষিত রাখবে। তাই ঋণের জন্য আবেদন করার আগে প্রস্তুতি নিন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যান।