HomeBusinessসুইগি-র ওপর ১৬৫ কোটি টাকারও বেশি কর দাবি, জানুন কারণ

সুইগি-র ওপর ১৬৫ কোটি টাকারও বেশি কর দাবি, জানুন কারণ

- Advertisement -

অনলাইন খাদ্য ও মুদি সরবরাহকারী সংস্থা সুইগি (Swiggy) আবারও সমস্যায় পড়েছে। এবার ২০২১-২২ অর্থবছরের সঙ্গে যুক্ত নতুন কর বিতর্কে জড়িয়েছে এই সংস্থা। শনিবার একটি নিয়ন্ত্রক ফাইলিংয়ে সুইগি জানিয়েছে, তাদের দুটি কর মূল্যায়ন আদেশ দেওয়া হয়েছে, যার মোট দাবি ১৬৫ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে একটি আদেশ এসেছে পুণের প্রফেশন ট্যাক্স অফিসারের কার্যালয় থেকে, যেখানে সুইগি-র ওপর ৭.৫৯ কোটি টাকার জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।

পুণের এই নোটিসে অভিযোগ করা হয়েছে যে, সুইগি তাদের কর্মচারীদের বেতন থেকে সঠিকভাবে প্রফেশন ট্যাক্স কাটেনি। এটি মহারাষ্ট্র রাজ্যের পেশা, বাণিজ্য, পেশাগত কাজ এবং কর্মসংস্থানের ওপর কর আইন, ১৯৭৫-এর অধীনে একটি বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয়তা। তবে সুইগি এই দাবির বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের কাছে এই আদেশের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আইনি যুক্তি রয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে তারা এর বিরুদ্ধে পর্যালোচনা বা আপিল দায়ের করার পরিকল্পনা করছে।

   

নিয়ন্ত্রক ফাইলিংয়ে সুইগি বলেছে, “কোম্পানি বিশ্বাস করে যে এই আদেশের বিরুদ্ধে তাদের শক্তিশালী যুক্তি রয়েছে এবং তারা পর্যালোচনা/আপিলের মাধ্যমে তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।” সংস্থাটি আরও স্পষ্ট করেছে যে, এই সমস্যা তাদের আর্থিক অবস্থা বা দৈনন্দিন কার্যক্রমের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না। এই ঘটনার কয়েকদিন আগে সুইগি-র ওপর আরেকটি মূল্যায়ন আদেশ জারি করা হয়েছিল, এবার বেঙ্গালুরুর ডেপুটি কমিশনার অফ ইনকাম ট্যাক্স, সেন্ট্রাল সার্কেল ১(১)-এর কাছ থেকে।

সুইগির কর সমস্যা এখানেই শেষ নয়। একই অর্থবছর—২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ—এর জন্য আরেকটি আদেশে ১৫৮ কোটি টাকার অতিরিক্ত কর দাবি করা হয়েছে। এই বড় দাবির পেছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিষয়। প্রথমত, ব্যবসায়ীদের দেওয়া বাতিলকরণ চার্জ, যা কর কর্তৃপক্ষ আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ৩৭ ধারার অধীনে অনুমোদন করেনি। দ্বিতীয়ত, কর রিফান্ড থেকে প্রাপ্ত সুদের আয়, যা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, সঠিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি।

নিয়ন্ত্রক ফাইলিংয়ে সুইগি জানিয়েছে, “কোম্পানি ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের জন্য একটি মূল্যায়ন আদেশ পেয়েছে, যেখানে ১৫৮.২৫ কোটি টাকার একটি সংযোজন করা হয়েছে।” এই বিপুল দাবি সত্ত্বেও সুইগি আত্মবিশ্বাসী। সংস্থাটি বলেছে, তাদের আইনি অবস্থান শক্তিশালী এবং তারা ইতিমধ্যেই এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের কাজ শুরু করেছে। পুণের প্রফেশন ট্যাক্স সমস্যার মতোই, সুইগি আশ্বাস দিয়েছে যে এই নতুন আদেশ তাদের আর্থিক স্বাস্থ্য বা দৈনন্দিন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না।

সুইগি এই দুটি কর দাবির বিরুদ্ধে লড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা আইনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে উভয় আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বা পর্যালোচনার প্রক্রিয়া শুরু করবে। পুণের প্রফেশন ট্যাক্স নোটিসের ক্ষেত্রে, সুইগি দাবি করেছে যে তাদের কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রফেশন ট্যাক্স কাটার প্রক্রিয়ায় কোনও ত্রুটি নেই। একইভাবে, বেঙ্গালুরুর আয়কর দাবির বিরুদ্ধে তারা বলেছে, বাতিলকরণ চার্জ এবং সুদের আয় নিয়ে তাদের হিসাব সঠিক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কর বিতর্ক প্রায়ই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে রূপ নেয়। তবে সুইগির আত্মবিশ্বাস ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ এবং আইনি ভিত্তি রয়েছে। সংস্থাটি আশা করছে, আপিলের মাধ্যমে এই দাবিগুলো কমানো বা বাতিল করা সম্ভব হবে।

এটি সুইগির প্রথম কর বিতর্ক নয়। এর আগে ২০২৩ সালে, জিএসটি বিভাগ সুইগির বিরুদ্ধে ৩২৬.৭ কোটি টাকার দাবি জানিয়েছিল, যা ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের জন্য ছিল। এছাড়া, আয়কর বিভাগ ২০১৭-১৮ সময়ের জন্য ৯৯ লাখ টাকার একটি নোটিস জারি করেছিল। এই ঘটনাগুলো সুইগির ওপর ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রক তদারকির ইঙ্গিত দেয়।

সম্প্রতি, ২০২৪ সালের নভেম্বরে সুইগি পাবলিক কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই সময়ে এমন কর দাবি সংস্থাটির জন্য আর্থিক চাপ তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সুইগি বারবার জানিয়েছে, এই দাবিগুলো তাদের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলবে না।

সুইগি ভারতের শীর্ষস্থানীয় খাদ্য ও মুদি সরবরাহকারী প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে একটি। ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে সংস্থাটির অপারেটিং রাজস্ব ছিল ৩,৯৯৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৩১% বেশি। তবে তাদের ক্ষতি বেড়ে ৭৯৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা দ্রুত বাণিজ্য ব্যবসায় বিনিয়োগের ফল। এই কর দাবি সত্ত্বেও, সুইগি দাবি করেছে যে তাদের কার্যক্রম এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা অটুট থাকবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের কর বিতর্ক বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন নয়। সুইগির প্রতিদ্বন্দ্বী জোম্যাটোও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৮০৩ কোটি টাকার জিএসটি দাবির সম্মুখীন হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো ভারতে গিগ অর্থনীতি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর ক্রমবর্ধমান কর নজরদারির ইঙ্গিত দেয়।

সুইগির বিরুদ্ধে ১৬৫ কোটি টাকারও বেশি কর দাবি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তবে সংস্থাটির আইনি লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি এবং আর্থিক প্রভাব নিয়ে আত্মবিশ্বাস বিনিয়োগকারীদের জন্য আশার আলো। আগামী দিনে এই আপিলের ফলাফল সুইগির ভবিষ্যৎ কৌশল এবং ভারতের ডিজিটাল ব্যবসায় কর নিয়মের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

- Advertisement -
Business Desk
Business Desk
Stay informed about the latest business news and updates from Kolkata and West Bengal on Kolkata 24×7
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular