অবশেষে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। ধান-পাট বা আলু-সবজি চাষে যেখানে বারবার লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে, সেখানে আখ চাষ (Sugarcane Farming) করে লক্ষ্মীলাভ করছেন পূর্বস্থলীর বহু চাষি। চলতি বছরের প্রচণ্ড দাবদাহ এবং অস্বস্তিকর গরমে আখের রসের চাহিদা আকাশছোঁয়া, যার সুবাদে আখের দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। ফলে বিগত বছরের তুলনায় আখ চাষিরা এবার অনেক বেশি লাভের মুখ দেখছেন।
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ ও ২ নম্বর ব্লক ছাড়াও নদীয়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে আখ চাষ। পুর্বস্থলীর নসরতপুর, সমুদ্রগর, মানিকনগর প্রভৃতি এলাকায় গত কয়েক বছর ধরেই চাষিরা ধান-পাটের বদলে আখকে বিকল্প চাষ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আগে যেখানে এক বিঘা জমিতে আঁখ চাষ করে কৃষকেরা ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করতেন, এবার সেই লাভ বেড়ে পৌঁছেছে ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকারও বেশি।
চলতি বছরের গরম শুরু হতেই আখের রসের চাহিদা বাড়তে থাকে। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র পথচলতি মানুষরা একটু স্বস্তির আশায় আখের রসের দোকানের সামনে ভিড় করছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আখের দামও বেড়েছে। গত বছর যেখানে প্রতি আঁখ ৮-১০ টাকায় বিক্রি হতো, এবছর তা ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা খুশি মনেই জমির ফসলের দাম পাচ্ছেন।
আখ বিপণনের সুবিধার জন্য সমুদ্রগর রেলস্টেশনের কাছাকাছি গোয়ালপাড়ায় গড়ে উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের একমাত্র আখ বাজার। প্রতিদিন সেখানে হাজার বারোশো বান্ডিল (প্রতি বান্ডিলে ২৫টি আখ) বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকে আখ কলকাতা, আসানসোল, দুর্গাপুর, হাওড়া, হুগলি, রানিগঞ্জ এমনকি বিহার ও ঝাড়খণ্ডেও পাঠানো হচ্ছে। চাষিরা বলছেন, এখন বাজারদর এত ভালো যে উৎপাদন খরচ তুলেও তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লাভ করতে পারছেন।
চাষিরা আরও জানাচ্ছেন, আখ চাষ তুলনামূলকভাবে ধান-পাটের চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ। একবার জমিতে আখ লাগালে সেটি খুব বেশি যত্ন ছাড়াই ভালো ফলন দেয়। আর বাজারে চাহিদা থাকলে দামও ভালো মেলে। ফলে অনেক কৃষক এখন ধান-পাট ছেড়ে আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে জলসংকট বা অনাবৃষ্টির সময়ও আখ বেশ টিকে থাকতে পারে, যা কৃষকদের জন্য বাড়তি সুবিধা।
বর্তমানে গোয়ালপাড়া আখ বাজারে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। চাষিরা বলছেন, সরকারি সহায়তা এবং আরও উন্নত বিপণন ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সাফল্য আরও বাড়ানো সম্ভব। আখ চাষকে কেন্দ্র করে পূর্বস্থলীর কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে একটা নতুন দিশা দেখা যাচ্ছে।
সারা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে যখন দাবদাহে হাঁসফাঁস করছেন সাধারণ মানুষ, তখন আখের রস হয়ে উঠেছে এক প্রাকৃতিক তৃষ্ণা নিবারক। আর সেই চাহিদার সুফল পাচ্ছেন পূর্বস্থলীর আখচাষিরা। অনেকেই বলছেন, ধান-পাটের লোকসানের দুঃখ ভুলিয়ে আখ চাষ এখন তাদের জীবনে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে।