প্রবল দাবদাহে যখন রাজ্যের সর্বত্র হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ, তখন পূর্বস্থলীর কৃষকদের কপালে ফুটেছে সাফল্যের চওড়া হাসি। ধান-পাট বা আলু-সবজি চাষে যেখানে বারবার লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছিল, সেখানে আখ চাষ করে এবার লক্ষ্মীলাভ (Sugarcane farming success) করছেন পূর্বস্থলীর চাষিরা। চলতি বছরের অস্বাভাবিক গরমে আখের রসের চাহিদা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, বাজারে আখের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে বিগত বছরের তুলনায় আখ চাষিরা এবছর বহুগুণ বেশি লাভ করছেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ১ ও ২ নম্বর ব্লক ছাড়াও নদীয়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আখ চাষ। পূর্বস্থলীর নসরতপুর, সমুদ্রগর, মানিকনগর অঞ্চলে কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরেই ধান-পাটের বদলে আখকেই বিকল্প ফসল হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যেখানে আগে এক বিঘা জমিতে আঁখ চাষ করে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হত, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকারও বেশি। কৃষকেরা বলছেন, উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় এবং বাজারে আখের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই বিপুল লাভ সম্ভব হয়েছে।
Also Read | ধান-পাট নয়! অন্য ফসলে লক্ষ্মীলাভ বাংলা চাষিদের
চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকেই তাপমাত্রা লাগাতার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রয়েছে। প্রচণ্ড রোদের তাপে হাঁসফাঁস করছে রাজ্যবাসী। শহর হোক বা গ্রাম, গরমের হাত থেকে সাময়িক স্বস্তি পেতে মানুষ ছুটছেন আখের রসের দোকানে। এই চাহিদা সরাসরি প্রভাব ফেলেছে আখের বাজারে। গত বছর যেখানে প্রতি আখ ৮-১০ টাকায় বিক্রি হত, এবছর তা ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা জমির ফসলের যোগ্য মূল্য পেয়ে দারুণ খুশি।
আখ বিপণনের জন্য পূর্বস্থলীর সমুদ্রগর রেল স্টেশনের কাছে গোয়ালপাড়া এলাকায় গড়ে উঠেছে বৃহত্তম আখ বাজার। প্রতিদিন প্রায় ১২০০ বান্ডিল (প্রতি বান্ডিলে ২৫টি আখ) বিক্রি হচ্ছে এখানে। এখান থেকে আখ কলকাতা, হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, হুগলি, রানিগঞ্জ ছাড়াও বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাজারেও পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এত বড় আকারে ও এত ভালো দামে আগে কখনো আখ বিক্রি হয়নি।
চাষিরা আরও জানান, আখ চাষ ধান-পাটের তুলনায় অনেক সহজ এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ। একবার জমিতে আখ রোপণ করা হলে কম যত্নেই ভালো ফলন হয়। এমনকি সামান্য জল সংকটের মধ্যেও আখ টিকে থাকতে পারে, যা ধানের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। ফলে অনেক কৃষক এখন ধান-পাট ছেড়ে সারা বছর ধরে লাভের আশায় আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
গোয়ালপাড়া আখ বাজারে এখন যেন চাষিদের মেলা বসেছে। প্রতিদিন সকালে নানা এলাকা থেকে চাষিরা তাদের উৎপাদিত আখ নিয়ে বাজারে ভিড় করছেন। বিক্রির পর তাদের মুখে ফুটে উঠছে পরিতৃপ্তির হাসি। চাষিরা মনে করছেন, সরকারি সহায়তা ও উন্নত বিপণন ব্যবস্থা পেলে আখ চাষের এই সাফল্য আরও বহুগুণ বাড়বে এবং এর মাধ্যমে পূর্বস্থলীর অর্থনীতিতেও নতুন গতি আসবে।
প্রচণ্ড দাবদাহে যখন রাজ্যবাসী গরমে কাহিল, তখন পূর্বস্থলীর কৃষকদের কাছে এই সময়টা যেন পৌষ মাসের আনন্দ। ধান-পাটের লোকসানের হতাশা পেছনে ফেলে আখ চাষের মাধ্যমে তারা ফিরে পেয়েছেন নতুন জীবনের আশা।