২০২৫ সালে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গন্না চাষিরা (Sugarcane Farmers) তাদের বকেয়া পাওনা এবং ন্যায্য মূল্যের দাবিতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক, পাঞ্জাব এবং অন্যান্য রাজ্যের চাষিরা চিনিকলগুলোর কাছ থেকে তাদের পাওনা টাকা এখনো পাননি, যা তাদের জীবিকা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। এই প্রতিবাদগুলো ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, এবং চাষিরা (Sugarcane Farmers) সরকার ও চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তর প্রদেশের শামলি জেলার থানা ভবনের বাজাজ চিনিকলের সামনে চাষিরা (Sugarcane Farmers) পঞ্চম দিন ধরে ধর্না দিচ্ছেন। সংযুক্ত কিষান সংঘর্ষ সমিতির নেতৃত্বে এই আন্দোলন ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন (বিকেইউ-টিকাইত)-এর সমর্থন পেয়েছে। বিকেইউ-টিকাইতের জাতীয় সহ-সভাপতি মৈনপাল সিং প্রতিবাদস্থলে যোগ দিয়ে চাষিদের (Sugarcane Farmers) পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “চাষিদের দাবি ন্যায্য। চিনিকলগুলোর ব্যর্থতার কারণে এই প্রতিবাদের সূচনা হয়েছে। আমরা তাদের পাশে আছি এবং তাদের পাওনা না মেটা পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।”
একইভাবে, কর্ণাটকের চাষিরা (Sugarcane Farmers) তাদের পাওনা টাকা এবং ন্যায্য মূল্যের দাবিতে ২০ আগস্ট, ২০২৫-এ বেঙ্গালুরুর বিধান সৌধ ঘেরাও করার পরিকল্পনা করেছেন। কর্ণাটক রাজ্য রায়থা সংঘ এবং কর্ণাটক স্টেট সুগারকেন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এইচ. ভাগ্যরাজ জানিয়েছেন, ২০২৫-২৬ মৌসুমের জন্য ন্যায্য ও লাভজনক মূল্য (এফআরপি) প্রতি টনে ৪,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। তিনি আরও দাবি করেছেন যে চিনিকলগুলোকে ফসল কাটা ও পরিবহনের খরচ বহন করতে হবে। চাষিরা চিনিকলগুলোর ভুল ওজন পদ্ধতির বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন।
পাঞ্জাবে, নাকোদার কো-অপারেটিভ সুগার মিলের কাছে ১৯ কোটি টাকার বকেয়া পাওনা নিয়ে ভারতী কিষান ইউনিয়ন (ডোয়াবা) এবং অন্যান্য কৃষক সংগঠন ২০ আগস্ট, ২০২৫-এ একটি মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করেছে। এই প্রতিবাদে ভূমি সংগ্রহ, বকেয়া পাওনা এবং বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতির বিষয়গুলো উঠে এসেছে। চাষিরা জানিয়েছেন, ফাগওয়ারা, দাসুয়া, মুকেরিয়ান, বুট্টরান, মোরিন্দা এবং আমলোহ’র মতো বিভিন্ন চিনিকল থেকে তাদের পাওনা এখনো মেটেনি।
এই সমস্যা শুধু ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নেপালেও চাষিরা ৬৫০ মিলিয়ন রুপির বকেয়া পাওনা এবং ভর্তুকি হ্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তারা সরকারের কাছে ৭০ রুপি প্রতি কুইন্টাল ভর্তুকির দাবি জানিয়েছেন, কিন্তু সরকার তা অর্ধেক করে ৩৫ রুপি করেছে। এই সিদ্ধান্ত চাষিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে, এবং তারা কাঠমান্ডুতে রাস্তা অবরোধের হুমকি দিয়েছেন।
ভারতের উত্তর প্রদেশে, চাষিরা ২০২০-২১ মৌসুমে ২২,৯০০ কোটি টাকার বকেয়া পাওনার জন্য লড়াই করছেন, যার মধ্যে ১৩,৬০০ কোটি টাকা শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশের চাষিদের জন্য। এই পরিস্থিতি চাষিদের অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এবং অনেকে ব্যাংক ও স্থানীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
চাষিরা অভিযোগ করেছেন যে সরকার এবং চিনিকলগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করছে না। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে চাষিদের পাওনা ১৪ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা হবে, এবং বিলম্বের ক্ষেত্রে ১৫% সুদ দেওয়া হবে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি। চাষিরা আরও দাবি করেছেন যে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হোক, যাতে মধ্যস্থতাকারীদের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে চাষিদের সুবিধা নিশ্চিত হয়।
এই প্রতিবাদগুলো শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি চাষিদের জীবনযাত্রার মান এবং তাদের অধিকারের প্রশ্ন। আখ চাষিরা তাদের কঠোর পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার অধিকার রাখে। সরকার এবং চিনিকলগুলোর উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা। পরিবেশবান্ধব চাষ পদ্ধতি এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে চাষিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব। এই আন্দোলন চাষিদের ঐক্য এবং তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।