সুগন্ধার গাড়ি কারখানায় সারদা কেলেঙ্কারির সিঁদুরে মেঘ!

রানা দাস: টাটা তাড়িয়ে টোটো! হুগলির সুগন্ধার কারখানায় (Sugandha Car Factory) রাজ্যের মন্ত্রী এবং শাসকদলের নেতাদের উপস্থিতি দেখে এটাই মনে আসে। সেই টোটো কারখানার মঞ্চ…

Hooghly’s Sugandha car factory aims for affordable EVs, but Shantanu Ghosh’s Saradha scam links raise doubts. Will this venture erase Singur’s scars or repeat past failures?

রানা দাস: টাটা তাড়িয়ে টোটো! হুগলির সুগন্ধার কারখানায় (Sugandha Car Factory) রাজ্যের মন্ত্রী এবং শাসকদলের নেতাদের উপস্থিতি দেখে এটাই মনে আসে। সেই টোটো কারখানার মঞ্চ থেকেই বড় ঘোষণা হয়েছে। পুজোর পর ১ লাখ টাকার গাড়ি তৈরি হবে। গাড়ি বলতে চার চাকার গাড়ি। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন রতন টাটা। তবে এটা ই-ভেহিকল, অর্থাৎ তেলে চলে না। এর জ্বালানি বিদ্যুৎ। সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো প্রকল্প করতে দেয়নি তৃণমূল। আর তাঁদের দলের নেতারাই এখন একলাখি গাড়ি কারখানার হাওয়া তুলছেন। সেটাও আবার হুগলিতে। সিঙ্গুরের কাছে সুগন্ধায়। এতেই সারদা কেলেঙ্কারির সিঁদুরে মেঘ ভাসছে বাংলার বাতাসে।

বাঙালি শিল্পপতি শান্তনু ঘোষের নেতৃত্বে এবং তাঁর সহযোগী দুই মহিলা কর্ণধার সম্রাজ্ঞী ঘোষ ও সম্পূর্ণা ঘোষের হাত ধরে সুগন্ধায় গড়ে উঠেছে আধুনিক কারখানা। ১২ একর জমির উপর কারখানায় ১ লাখ টাকার গাড়ি তৈরি হবে। খুব ভালো উদ্যোগ। এমন কারখানা তো বাংলার অর্থনীতি বদলে দেবে। তাহলে চিন্তা কী? নেতিবাচক ভাবনার তো কিছুই নেই। কথায় বলে, বাঙালি নাকি কাঁকড়ার জাত। সবেতেই উলটো সুর ধরে। চাকরি ছেড়ে ব্যবসার চিন্তা করে না। তাই বাঙালির উন্নতি হয় না। তারপরেও সুগন্ধার কারখানা নিয়ে আতঙ্ক কাটছে না।

   
Bengali Industrialist
সিঙ্গুরের কাছেই ১ লাখের গাড়ি কারখানার উদ্যোগ বাঙালি শিল্পপতির

উন্নতির অন্তরায় কোনও ভাবনা হতে পারে না। কারখানার উদ্যোগ সবসময়ই স্বাগত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে উদ্যোক্তাদের নিয়ে। সস্তার গাড়ি কারখানার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা শান্তনু ঘোষ। যিনি এর আগেও অনেক সস্তার পণ্য তৈরি করেছিলেন। গাড়ির কারখানাও করেছিলেন। সেই সঙ্গে ছিল সস্তার কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন। সবই ডুবেছে। সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে শ্রীঘরে-ও যান শান্তনু।

২০ থেকে ২২ বছর আগে সস্তার কম্পিউটার বাজারে আনেন শান্তনু। তাঁর “আমার পিসি”-র প্রচার বেশ জনপ্রিয় হয়। বাঙালি শিল্পপতিকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমেও বেশ চর্চা চলে। এরপর ২০০৬ সালে বাজারে বাইক নিয়ে আসেন শান্তনুর সংস্থা। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেই কারখানার উদ্বোধন করেন। সিঙ্গুরে তখন টাটাদের কারখানা তৈরির কাজ চলছে। এরই মাঝে হুগলিতে আরেকটা গাড়ির কারখানা। বাংলায় তৈরি বাঙালির সস্তার গাড়ি। বিরাট ব্যাপার। এখানেই শেষ নয়, সস্তার মোবাইল ফোনও বাজারে আনেন শান্তনু ঘোষ।

Advertisements

সস্তা কম্পিউটার, বাইক কিংবা মোবাইল ফোন—কোনোটাই সেভাবে বাজারে চলেনি। সবেতেই ধস নেমেছে। উলটে এসবের সঙ্গে জড়িয়েছে সারদা চিটফান্ডের নাম। শান্তনু ঘোষের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ করেছিলেন খোদ সুদীপ্ত সেন। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, সারদা গ্রুপের কাছে গাড়ির কারখানা বিক্রি করেন শান্তনু। সারদা গ্রুপ বাইক তৈরি করছে দেখিয়ে বাজার থেকে টাকা তোলে সুদীপ্ত সেনের এজেন্টরা। কারখানার আড়ালে নাকি চিটফান্ডের কারবার চলত বলে অভিযোগ।

এসব প্রকাশ্যে আসে ২০১৩ সালে। তখন রাজ্যে পালাবদল হয়ে গিয়েছে। সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শান্তনু ঘোষকে গ্রেফতারও করা হয়। জেল থেকে ফিরে তিনি ফের স্বমহিমায়। কারখানা চালাচ্ছেন। নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আনছেন। এতে সমস্যার কিছুই নেই। কিন্তু সস্তার গাড়ির বিষয়টি নিয়েই নানা প্রশ্ন জাগে। আগে তো সস্তার সামগ্রী তৈরির নামে অনেক কীর্তি দেখেছে বঙ্গবাসী। এবারও তেমন কিছু হবে না তো? ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়…।