Stocks vs Mutual Funds: বর্তমানে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব বুঝে অনেক মানুষই বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। তবে অনেক বিনিয়োগকারীর জন্য বড় প্রশ্ন থেকে যায়—মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবেন, না কি সরাসরি স্টকে (শেয়ারে) অর্থ ঢালবেন? দুটোই জনপ্রিয় বিনিয়োগের মাধ্যম এবং দুটোরই রয়েছে নিজস্ব সুবিধা ও ঝুঁকি। সঠিক বিনিয়োগ মাধ্যম বেছে নেওয়া সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে বিনিয়োগকারীর ঝুঁকির মানসিকতা, আর্থিক লক্ষ্য এবং কতদিনের জন্য বিনিয়োগ করতে চান তার ওপর।
মিউচুয়াল ফান্ড এবং স্টক কী?
মিউচুয়াল ফান্ড হল এমন একটি বিনিয়োগ মাধ্যম যেখানে অনেক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন স্টক, বন্ড, অথবা অন্যান্য আর্থিক যন্ত্রে বিনিয়োগ করা হয়। এ ধরনের ফান্ডগুলো একজন বা একাধিক ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। দিনে একবার, বাজার বন্ধের পর, ফান্ডের নিট সম্পদমূল্যের (NAV) ভিত্তিতে ফান্ডের ইউনিটের দাম নির্ধারিত হয়। এখানে বিনিয়োগকারীরা ফান্ডের ইউনিটের মালিক হলেও, সরাসরি স্টক বা বন্ডের মালিকানা পান না।
অন্যদিকে, স্টক বা শেয়ার অর্থাৎ কোনো কোম্পানির মালিকানার একটি অংশ। কোম্পানি ভালো করলে, বিনিয়োগের মূল্য দ্রুত বাড়তে পারে। কিন্তু কোম্পানির ব্যবসায় ধস নামলে, বিনিয়োগকারীদেরও ক্ষতি হতে পারে। সরাসরি স্টকে বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির মুনাফা এবং ক্ষতির ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে বিনিয়োগকারীর ওপর।
মিউচুয়াল ফান্ড বনাম স্টক: পার্থক্য কোথায়?
ডাইভার্সিফিকেশন বা বৈচিত্র্য
মিউচুয়াল ফান্ডের অন্যতম বড় সুবিধা হল ডাইভার্সিফিকেশন। একটি ফান্ডের মধ্যেই একাধিক স্টক, বন্ড বা অন্যান্য সম্পদে বিনিয়োগের সুযোগ পাওয়া যায়। এটি ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু স্টক বেছে নিলে, বৈচিত্র্য আনতে হলে প্রায় ১৫–২০টি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হয়, যা একজন নতুন বিনিয়োগকারীর পক্ষে বেশ জটিল হতে পারে।
ঝুঁকি এবং রিটার্ন
মিউচুয়াল ফান্ডের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম, কারণ ফান্ডটি বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগের মাধ্যমে ঝুঁকি ছড়িয়ে দেয়। তবে রিটার্নও মাঝারি ধরনের হয় এবং এটি সম্পূর্ণভাবে ফান্ডের পারফর্ম্যান্স ও বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। অন্যদিকে, সরাসরি স্টকে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি বেশি, তবে সফল হলে রিটার্নও অনেক বেশি হতে পারে। তাই, যাদের বাজারের ওঠাপড়া সামলানোর মানসিক শক্তি আছে, তাদের জন্য স্টক বিনিয়োগ লাভজনক হতে পারে।
খরচ এবং ট্যাক্স সুবিধা
মিউচুয়াল ফান্ডের খরচ তুলনামূলক কম। বিশেষ করে ELSS (ইকুইটি-লিঙ্কড সেভিংস স্কিম) ফান্ডের ক্ষেত্রে, আয়কর আইনের ৮০সি ধারার অধীনে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। অন্যদিকে, স্টকে বিনিয়োগ করলে এই ধরনের করছাড়ের সুবিধা থাকে না। তাছাড়া, সরাসরি স্টকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক কোম্পানিতে আলাদা করে টাকা ঢালতে হয়, যা বেশ ব্যয়বহুলও হতে পারে।
নতুন বিনিয়োগকারীর জন্য কোনটি ভালো?
যদি আপনি নতুন বিনিয়োগকারী হয়ে থাকেন বা স্থির এবং ধারাবাহিক রিটার্ন চান, তবে মিউচুয়াল ফান্ডই বেশি উপযোগী। কারণ এটি সহজে পরিচালনা করা যায়, ঝুঁকি কম, এবং পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের জন্য, যারা বাজারের ওঠাপড়া বুঝতে পারেন এবং ঝুঁকি নিতে পারেন, তাদের জন্য স্টক বিনিয়োগ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
মিউচুয়াল ফান্ড এবং স্টক—দুটিরই রয়েছে আলাদা আলাদা সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা। মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে ডাইভার্সিফিকেশন, ট্যাক্স বেনিফিট এবং তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকির সুবিধা পাওয়া যায়। স্টক বিনিয়োগে বেশি ঝুঁকি থাকলেও সম্ভাব্য রিটার্নও বেশি। তাই, আপনার আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা এবং বিনিয়োগের মেয়াদ বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জ্ঞান এবং ধৈর্যই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।