মার্কিন শেয়ার বাজার (Stock Market) গত সোমবার সামান্য পতনের সঙ্গে বন্ধ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের সময়সীমা বাড়িয়েছেন, যদিও সোনার দাম এখনও কম রয়েছে তার ঘোষণার পর যে সোনার বারের উপর কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। বাজারে এনভিডিয়া এবং এএমডি-র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ বিক্রির জন্য মার্কিন সরকারের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে, যা একটি অস্বাভাবিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এনভিডিয়া এবং এএমডি-র চুক্তি
ট্রাম্প প্রশাসন এনভিডিয়ার এইচ২০ চিপ এবং এএমডি-র এমআই৩০৮ চিপ বিক্রির আয়ের ১৫% পাবে, যা চীনে রপ্তানির জন্য রয়েছে। এই তথ্য জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে। তবে, চুক্তির পূর্ণাঙ্গ শর্তাবলী সোমবার পর্যন্ত স্পষ্ট ছিল না। এই চুক্তির ফলে এনভিডিয়া (NVDA) এবং এএমডি (AMD)-র শেয়ার মূল্য সামান্য কমেছে, প্রায় ০.৩%। বর্তমানে এনভিডিয়ার শেয়ার মূল্য ১৮২.১৫ মার্কিন ডলার এবং এএমডি-র শেয়ার মূল্য ১৭২.২৮ মার্কিন ডলারে রয়েছে।
এই চুক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি একটি নতুন নজির স্থাপন করতে পারে, যেখানে রপ্তানি লাইসেন্সের জন্য কোম্পানিগুলোকে সরকারের সঙ্গে আয় ভাগ করে নিতে হবে। এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং এই চুক্তির পক্ষে মত প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা বিশ্ববাজারে অংশগ্রহণের জন্য মার্কিন সরকারের নিয়ম মেনে চলি। আমরা আশা করি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ম আমেরিকাকে চীন এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে।”
ইনটেলের প্রধান নির্বাহীর হোয়াইট হাউস সফর
ইনটেলের প্রধান নির্বাহী সোমবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ইনটেলের চীনের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য তাকে সমালোচনা করে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন। তবে, সাক্ষাতের পর ট্রাম্প বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় বৈঠক ছিল। তার সাফল্য এবং উত্থান একটি আশ্চর্যজনক গল্প।” এই ঘটনার পর ইনটেলের (INTC) শেয়ার মূল্য বেড়েছে, বর্তমান মূল্য ২০.৬৮ মার্কিন ডলার। এই উত্থান ইনটেলের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশাবাদ ফিরিয়ে এনেছে, যদিও কোম্পানিটি সম্প্রতি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
বাজারের সামগ্রিক প্রবণতা
মার্কিন শেয়ার বাজারে সোমবার ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক কিছুটা পড়লেও, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ (SPY) সূচকের বর্তমান মূল্য ৬৩৫.৯২ মার্কিন ডলারে প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। নাসডাক কম্পোজিটও স্থিতিশীল ছিল। ইউরোপীয় শেয়ার বাজার সামান্য পতনের সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতের শেয়ারগুলো কমেছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে আগামী শুক্রবার ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা উল্লেখ করা হচ্ছে।
সোনা ও সয়াবিনের বাজার
সোনার ফিউচার মূল্য ২.৫% কমেছে, যদিও গত সপ্তাহে সুইস সোনার বারের উপর ৩৯% শুল্ক আরোপের খবরে দাম বেড়েছিল। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণায় স্পষ্ট করা হয়েছে যে সোনার উপর কোনো শুল্ক থাকবে না, যা বাজারে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। অন্যদিকে, সয়াবিনের দাম বেড়েছে, কারণ ট্রাম্প প্রস্তাব করেছেন যে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের সয়াবিন আমদানি চারগুণ বাড়াক। এই প্রস্তাব চীনের সঙ্গে বাণিজ্য শান্তি চুক্তির সময়সীমা বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে এসেছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ও অন্যান্য খাত
বিটকয়েনের দাম ১২০,০০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত শেয়ার যেমন কয়েনবেস এবং মাইক্রোস্ট্র্যাটেজির মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ক্রিপ্টো শিল্পের উপর নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বাজারের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চীনের সঙ্গে শুল্ক শান্তি চুক্তির সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশাবাদ জাগিয়েছে, তবে এনভিডিয়া এবং এএমডি-র চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের চুক্তি ভবিষ্যতে অন্যান্য শিল্পের জন্যও নতুন নিয়ম তৈরি করতে পারে। এছাড়া, আগামী মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) তথ্য প্রকাশিত হবে, যা বাজারের দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মার্কিন শেয়ার বাজার বর্তমানে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের উপর নির্ভর করে ওঠানামা করছে। এনভিডিয়া এবং এএমডি-র চুক্তি বাজারে নতুন গতিশীলতা এনেছে, যদিও শেয়ার মূল্যে সামান্য পতন দেখা গেছে। ইনটেলের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি এবং সোনার শুল্কমুক্ত ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিটকয়েন এবং সয়াবিনের দাম বৃদ্ধি বাজারের কিছু খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও, সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগকারীরা সতর্কতার সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন। আগামী দিনগুলোতে বাণিজ্য নীতি এবং অর্থনৈতিক তথ্য বাজারের দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।