ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে শেয়ার বাজারে রেকর্ড উত্থান

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর সোমবার সকালে ভারতীয় শেয়ার বাজারে (Stock Market) ব্যাপক উত্থান পরিলক্ষিত হয়েছে। সেনসেক্স এবং নিফটি…

Stock market news

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর সোমবার সকালে ভারতীয় শেয়ার বাজারে (Stock Market) ব্যাপক উত্থান পরিলক্ষিত হয়েছে। সেনসেক্স এবং নিফটি সূচক দুটিই সকালের লেনদেনে ২.৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সকাল ১০:১১ নাগাদ, সেনসেক্স ২,১৮৫ পয়েন্ট বা ২.৭৫ শতাংশ বেড়ে ৮১,৬৪০.০১-এ লেনদেন করছিল, যেখানে নিফটি ৬৭২.৮০ পয়েন্ট বা ২.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৪,৬৮০.৮০-এ পৌঁছেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের শেয়ার বাজার এবং অর্থনীতি ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বাহ্যিক প্রতিকূলতার মধ্যেও অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে। দেশীয় অর্থনীতির স্থিতিশীল ভিত্তি এবং দৃঢ় গঠন বৈশ্বিক সমস্যার প্রভাব থেকে বাজারকে রক্ষা করেছে, যা প্রমাণ করে যে প্রতিটি সংকট শেষ পর্যন্ত সমাধানের পথ খুঁজে পায়।

মেহতা ইকুইটিজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (রিসার্চ) প্রশান্ত তপসে বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের উত্তেজনা হ্রাস পাওয়ায় সোমবার সকালের লেনদেনে নিফটি সূচকে ব্যাপক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কোনো নতুন লঙ্ঘন ঘটলে বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সুইজারল্যান্ডে বাণিজ্য আলোচনার ইতিবাচক খবর বৈশ্বিক বাজারের মনোবল বাড়িয়েছে।

   

এইচডিএফসি সিকিউরিটিজের প্রাইম রিসার্চ প্রধান দেবর্ষ বকিল জানান, ভারতের বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে এবং বিশ্ব বাজারে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে সহায়তা করবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতিশীল প্রবাহ এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। ভারতের ভারসাম্যপূর্ণ বৈশ্বিক সম্পর্ক এবং শক্তিশালী অংশীদারিত্ব বিনিয়োগের জন্য তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে, যা বাজারের এই উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গত সপ্তাহে প্রধান সূচকগুলি সামান্য মিশ্র ফলাফল দেখিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা এবং সুইজারল্যান্ডে মার্কিন ও চীনা কর্মকর্তাদের বাণিজ্য আলোচনার খবর বিনিয়োগকারীদের মনোবল বাড়িয়েছে। এই ঘটনাগুলি ব্যাপক আলোচনা এবং শুল্ক হ্রাসের পথ প্রশস্ত করেছে, যা বৈশ্বিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সেনসেক্সের শীর্ষ লাভবান শেয়ারগুলির মধ্যে ছিল অদানি পোর্টস, বাজাজ ফিনান্স, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, ইটার্নাল, পাওয়ার গ্রিড, এনটিপিসি, বাজাজ ফিনসার্ভ, টাটা স্টিল, এলঅ্যান্ডটি এবং এসবিআই। কেবলমাত্র সান ফার্মা শীর্ষ ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ার ছিল। এশিয়ার বাজারে চীন, হংকং এবং সিউল সবুজ অঞ্চলে লেনদেন করছিল, যেখানে জাপান লাল অঞ্চলে ছিল। গত শুক্রবার মার্কিন বাজারে ডাও জোন্স ০.২৯ শতাংশ কমে ৪১,২৪৯.৩৮-এ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ০.০৭ শতাংশ কমে ৫,৬৫৯.৯১-এ এবং নাসডাক ১৭,৯২৮.৯২-এ বন্ধ হয়েছিল।

Advertisements

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (এফআইআই) টানা ষোলো দিন নেট ক্রেতা থাকার পর ৯ মে নেট বিক্রেতায় পরিণত হয়, ৩,৭৯৮.৭১ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে। বিপরীতে, দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (ডিআইআই) একই দিনে ৭,২৭৭.৭৪ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করে নেট ক্রেতা হিসেবে রয়ে গেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুদ্ধবিরতি বাজারের জন্য স্বস্তির কারণ হলেও, ভবিষ্যতে উত্তেজনা পুনরায় বৃদ্ধি পেলে অস্থিরতা ফিরে আসতে পারে। তবে, ভারতের শক্তিশালী অর্থনৈতিক মৌলিক দিক, বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্কের অগ্রগতি এবং ক্রমবর্ধমান বিদেশি বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি সুযোগ, তবে সতর্কতা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

এই উত্থান ভারতীয় শেয়ার বাজারের শক্তি এবং সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে। ভারতের অর্থনীতি এবং বাজারের এই স্থিতিস্থাপকতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা জাগিয়েছে, এবং ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। বাজারের গতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের উপর নজর রাখা বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।