RBI-এর রেপো রেট হ্রাসের সত্ত্বেও শেয়ার বাজারে হতাশা

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (শুক্রবার) ভারতীয় শেয়ার বাজারে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) তার মনেটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) বৈঠকে রেপো…

stock-market-today-rbi-repo-rate-cut-fails-to-cheer-sensex-nifty

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (শুক্রবার) ভারতীয় শেয়ার বাজারে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) তার মনেটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) বৈঠকে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৬.২৫ শতাংশ করার ঘোষণা করেছে। তবে এই ঘোষণা সত্ত্বেও শেয়ার বাজারের পতন থামেনি। সেনসেক্স এবং নিফটির পতন অনেক বিনিয়োগকারী এবং বিশেষজ্ঞদের জন্য আশ্চর্যকর ছিল, কারণ তাঁরা আশা করেছিলেন যে রেপো রেট কমানোর ফলে শেয়ার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ দিন শেয়ার বাজারে সকালেই কিছুটা খারাপ প্রবণতা দেখা যায়। সেনসেক্স ২২০ পয়েন্ট কমে ৭৭,৮৩৭.৭০ তে পৌঁছায় এবং নিফটি ৮৫ পয়েন্ট কমে ২৩,৫৭০.৭৫ তে নেমে আসে। এর কিছুক্ষণ পর সেনসেক্স আরো ৮৭.৩২ পয়েন্ট কমে ৭৭,৯৭০.৮৪ তে পৌঁছায়, এবং নিফটি ৩২.৬ পয়েন্ট কমে ২৩,৫৭০.৭৫ তে চলে আসে।

   

আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা ঘোষণা করেছেন যে, এমপিসি সর্বসম্মতভাবে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সাধারণভাবে শেয়ার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা ছিল, কারণ এই ধরনের নীতি পরিবর্তন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার আশা জাগায়। কিন্তু বাস্তবে, শেয়ার বাজারে হতাশাজনক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষত, সেনসেক্সের ব্লু-চিপ শেয়ারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পতন হয়েছে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান পেইন্টস, নেস্টলে, এইচসিএল টেক, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস, পাওয়ারগ্রিড, আইটিসি, এবং স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া সহ বেশ কিছু বড় কোম্পানির শেয়ার দাম কমেছে।

তবে কিছু শেয়ার উত্থানও করেছে, যেমন ভার্থী এয়ারটেল, আলট্রাটেক সিমেন্ট, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, টাটা স্টিল এবং জোমাটো। এটি প্রমাণ করে যে, শেয়ার বাজারের বিভিন্ন খাতের মধ্যে বৈচিত্র্য এবং অনিশ্চয়তা রয়েছে।

একই সময়ে, ভারতের রুপি ডলারের বিপরীতে কিছুটা উন্নতি করেছে। রুপি ১৬ পয়সা চড়ে ৮৭.৪৩ ডলারের বিপরীতে পৌঁছায়, যা তার সর্বকালের সর্বনিম্ন স্তরের থেকে কিছুটা পুনরুদ্ধার। তবে, শেয়ার বাজারের অবস্থা তেমন পরিবর্তিত হয়নি এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এমপিসি বৈঠকের ফলাফল বাজারে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। মেহতা ইক্যুইটি লিমিটেডের সিনিয়র ভিপি (রিসার্চ) প্রশান্ত তাপসে মন্তব্য করেছেন, “আজকের বাজারের মনোযোগ আরবিআই এমপিসি বৈঠকের ফলাফলে নিবদ্ধ থাকবে।” অর্থাৎ, বাজারের প্রধান দৃষ্টিপদ ছিল আরবিআইয়ের সিদ্ধান্ত, কিন্তু তার পরেও শেয়ার বাজারে বড় পরিবর্তন দেখা যায়নি।

এশীয় বাজারের পরিস্থিতিও শেয়ার বাজারের জন্য সহায়ক ছিল না। টোকিও এবং সিওল শেয়ার বাজার নিম্নমুখী প্রবণতা দেখেছে, তবে হংকং কিছুটা ইতিবাচক অবস্থানে ছিল। অন্যদিকে, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মার্কিন শেয়ার বাজারে কিছুটা উত্থান লক্ষ করা গেছে, যা কিছুটা বিশ্ববাজারের প্রতি আশাবাদী মনোভাব সৃষ্টি করেছে।

বিশ্ববাজারের এই মিশ্র প্রবণতা এবং আন্তর্জাতিক তেলের দাম বৃদ্ধি বাজারে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। ব্রেন্ট ক্রুড অপরিশোধিত তেলের দাম ০.৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৪.৬৮ ডলারে পৌঁছেছে, যা মূলত বিশ্বের জ্বালানি খাতে কিছুটা ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। তবে, বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেলিং প্রবণতা বিরাজমান রয়েছে। এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীরা ৩,৫৪৯.৯৫ কোটি রুপির শেয়ার বিক্রি করেছেন।

শেয়ার বাজারের আরো একটি বড় কারণ হলো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের (এফআইআই) বিক্রির প্রবণতা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় বাজারের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে এফআইআইরা ৩,৫৪৯.৯৫ কোটি রুপি মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছে, যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এদিকে, ৬ ফেব্রুয়ারি সেনসেক্স ২১৩.১২ পয়েন্ট কমে ৭৮,০৫৮.১৬ তে বন্ধ হয়েছে এবং নিফটি ৯২.৯৫ পয়েন্ট কমে ২৩,৬০৩.৩৫ তে নেমে এসেছে।

শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা ভবিষ্যতে কীভাবে পরিবর্তিত হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, আরবিআইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ থাকবে আরবিআইয়ের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের দিকে, যা অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং শেয়ার বাজারের গতি প্রভাবিত করতে পারে।

আজকের শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি প্রমাণ করেছে যে, যদিও আরবিআই তার রেপো রেট কমানোর ঘোষণা দিয়েছে, তবুও বাজারের প্রতিক্রিয়া তেমন ইতিবাচক হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, শেয়ার বাজারের অস্থিরতা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রি প্রবণতা বাজারের ওপর বড় প্রভাব ফেলছে। বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখার জন্য আরও সময় এবং আরবিআইয়ের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করতে হবে।