Stock market fall India
মঙ্গলবার দিনভর অস্থিরতা ছেয়ে রইল ভারতের শেয়ারবাজারে। সপ্তাহের শুরুটা আশাব্যঞ্জক হলেও দিনের শেষে সূচকের ধারায় দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) সেনসেক্স এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) নিফটি ৫০-উভয় সূচকই লাল চিহ্নে শেষ করল দিনের লেনদেন।
দিনের লেনদেন শেষে সেনসেক্স নামল প্রায় ২০০ পয়েন্ট, বন্ধ হল ৮০,১৫০–এর সামান্য ওপরে। অপরদিকে নিফটি ৫০ হারাল ৪৫ পয়েন্ট, দাঁড়াল ২৪,৫৮০–তে। সকালবেলায় বাজার ইতিবাচকভাবে শুরু হলেও দুপুর নাগাদ সেই গতি হারিয়ে ফেলে। আগের দিনের সমস্ত লাভ প্রায় মুছে গেল মঙ্গলবারের পতনে।
কিছু শেয়ার আশা জাগিয়েছিল
সেনসেক্সের ৩০–টি শেয়ারের মধ্যে কিছু সংস্থার পারফরম্যান্স আশার আলো জুগিয়েছে। পাওয়ার গ্রিড, এনটিপিসি, টাটা স্টিল, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার (এইচইউএল) ও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ—এরা দিন শেষে সবুজ চিহ্নে বন্ধ হয়। তবে মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা (এমঅ্যান্ডএম), আইসিআইসিআই ব্যাংক, এশিয়ান পেইন্টস, কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাংক ও টাটা মোটরস বড়সড় চাপের মুখে পড়ে লাল চিহ্নে বন্ধ হয়।
বড় সূচকের তুলনায় ছোট শেয়ারগুলো তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল। নিফটি মাইক্রোক্যাপ ২৫০ সূচক বেড়েছে প্রায় ০.৮৫ শতাংশ। খাতভিত্তিক সূচকের মধ্যে এফএমসিজি সূচক সবচেয়ে উজ্জ্বল, প্রায় ১.১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীতে বেসরকারি ব্যাংক সূচক রক্তাক্ত হয়েছে, পতন ০.৭০ শতাংশ।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগকারীরা আপাতত সতর্ক ভঙ্গিতে ট্রেডিং করছেন। কারণ, এই সপ্তাহেই বসছে জিএসটি কাউন্সিলের দু’দিনব্যাপী বৈঠক। বৈঠকে বড় ধরনের কর কাঠামো পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। করনীতিতে বড় রদবদলের আশঙ্কা ও সম্ভাবনা, উভয় দিক থেকেই ব্যবসায়ী মহলে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার সকালে বাজার আশাপ্রদ সূচনা Stock market fall India
যদিও মঙ্গলবার সকালে বাজার আশাপ্রদ সূচনা করেছিল। সকাল ৯টা ২৬ মিনিট নাগাদ সেনসেক্স ছিল ৮০,৪৫৪–এ, অর্থাৎ প্রায় ৯০ পয়েন্ট উপরে। নিফটি ৫০ তখন ২৪,৬৪০–এ দাঁড়িয়েছিল, যা আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেশি। তবে সেই ধারা টিকল না দিনের শেষে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেও অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য সম্পর্ককে আখ্যা দিয়েছেন,“সম্পূর্ণ একপাক্ষিক বিপর্যয়” হিসেবে। এর পরেই খবর আসে, মার্কিন প্রশাসন ভারতের ওষুধ শিল্পের ওপর সর্বোচ্চ ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে।
ফার্মা সেক্টরের জন্য ভয়ানক ক্ষতি
এই প্রস্তাব কার্যকর হলে তা ভারতের ফার্মা সেক্টরের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এতে ওষুধ সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটবে এবং সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। ওষুধের দাম মারাত্মক হারে বাড়তে পারে।
মার্কিন বাজার সোমবার বন্ধ থাকলেও, সপ্তাহের শেষে গত শুক্রবার সেখানে দেখা গিয়েছিল পতনের ধারা। ডাও জোন্স সূচক নেমেছিল ০.২ শতাংশ, ন্যাসডাক প্রায় ১.১৫ শতাংশ এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক হারিয়েছিল ০.৬৪ শতাংশ। ফলে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ভারতের বাজারকেও প্রভাবিত করছে।
এছাড়া বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা (এফআইআই) ভারতের বাজারে টানা বিক্রির ধারা অব্যাহত রেখেছেন। সোমবার তারা প্রায় ১,৪৩০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন, স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী। অপরদিকে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (ডিআইআই) বাজারকে টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে এসেছেন। তারা সোমবার প্রায় ৪,৩৪৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে বর্তমানে তিনটি বড় চাপ কাজ করছে—
১. জিএসটি কাউন্সিল বৈঠক থেকে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে সেই নিয়ে অনিশ্চয়তা।
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি ও সম্ভাব্য শুল্কবৃদ্ধি, বিশেষত ফার্মা খাতকে কেন্দ্র করে।
৩. বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিক বিক্রির চাপ।
তবে আশার দিক হলো দেশীয় বিনিয়োগকারীরা বাজারকে ভরসা দিচ্ছেন। পাশাপাশি শক্তিশালী কোম্পানিগুলির (যেমন রিলায়েন্স, এনটিপিসি, এইচইউএল) ইতিবাচক পারফরম্যান্স বাজারকে বড় ধস থেকে বাঁচিয়েছে।
মোটের ওপর বলা যায়, মঙ্গলবারের বাজারে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট। বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি এখন নিবদ্ধ আসন্ন জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকের দিকে। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আগামী কয়েক দিনের বাজারের গতি কোনদিকে যাবে। এদিকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি, ভারতের শেয়ারবাজারে আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে সতর্কভাবে বিনিয়োগ করার পরামর্শই দিচ্ছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
Business: The Indian stock market experienced a volatile day, with both the Sensex and Nifty 50 closing in the red. The fall was driven by investor caution ahead of a key GST Council meeting. Learn which stocks saw gains and losses and the factors influencing market sentiment.