১০০–২০০ টাকায় পেট্রল নেওয়া মানেই বাড়ছে জালিয়াতির সুযোগ! জানুন বিপদটা কোথায়

আমরা অনেকেই যখন পেট্রল বা ডিজেল ভরতে যাই, তখন চোখ রাখি মিটারের দিকে, কান রাখি মেশিনের শব্দে। মিটার শূন্য থেকে শুরু হতে দেখেই নিশ্চিন্ত হই…

India Petrol Diesel Prices

আমরা অনেকেই যখন পেট্রল বা ডিজেল ভরতে যাই, তখন চোখ রাখি মিটারের দিকে, কান রাখি মেশিনের শব্দে। মিটার শূন্য থেকে শুরু হতে দেখেই নিশ্চিন্ত হই যে সব ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন—এই সতর্কতা সত্ত্বেও জ্বালানি জালিয়াতি এখনো আশঙ্কাজনকভাবে সাধারণ ঘটনা।

শুধু মিটার ‘জিরো’ হওয়া মানেই আপনি ১০০ শতাংশ নিরাপদ নন। অনেক সময় কৌশলী জালিয়াতি এমনভাবে ঘটে যে গ্রাহক বুঝতেই পারেন না, আসলে তিনি কম জ্বালানি পাচ্ছেন। আর এই প্রতারণা হতে পারে আপনি যত লিটারই নেন বা যত টাকারই দেন না কেন।

   

রাউন্ড ফিগার টাকার বিপদ:
অনেকেই অভ্যাসবশত ১০০ টাকা, ২০০ টাকা, ৫০০ টাকা বা ১০০০ টাকার মতো ‘রাউন্ড ফিগার’ টাকায় জ্বালানি ভরেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু অসাধু পেট্রল পাম্প কর্মী এই সুযোগটাই কাজে লাগায়। অভিযোগ আছে, রাউন্ড ফিগারের ক্ষেত্রে কিছু মেশিন এমনভাবে সেট করা হয় যাতে প্রকৃত জ্বালানি দেওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দেওয়া যায়, অথচ বাইরে থেকে তা ধরা না পড়ে।

এই কারণে পরামর্শ দেওয়া হয়, টাকা দিয়ে জ্বালানি চাওয়ার বদলে সরাসরি লিটার হিসেবে চাওয়া নিরাপদ। যেমন—“₹২০০ পেট্রল দিন” বলার পরিবর্তে বলুন—“৫ লিটার পেট্রল দিন।” এতে প্রতারণার সম্ভাবনা কিছুটা কমে যায়।

ডিজিটাল মিটার বেছে নিন:
পুরনো মেশিনে ক্যালিব্রেশন বা রক্ষণাবেক্ষণের অভাব থাকলে সহজেই গরমিল ঘটতে পারে। উপরন্তু, পুরনো এনালগ মিটার তুলনামূলকভাবে বেশি সহজে টেম্পার করা যায়। তাই সম্ভব হলে সর্বদা ডিজিটাল মিটারযুক্ত পাম্পে জ্বালানি নিন। ডিজিটাল মিটার শুধু নির্ভুল পরিমাপই দেয় না, বরং যন্ত্রে হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও তুলনামূলক কম থাকে।

মিটার রিসেট দেখুন:
কর্মী যতই বলুক, “মিটার জিরো আছে,” নিজের চোখে নিশ্চিত হন। জ্বালানি শুরু করার আগে মিটার রিসেট হচ্ছে কিনা দেখুন। কখনোই অনুমান বা বিশ্বাসের ওপর ভরসা করবেন না। এক সেকেন্ডের অসতর্কতাই কয়েকশো টাকা ক্ষতির কারণ হতে পারে।

Advertisements

ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা:
প্রতিদিন দেশের হাজারো পেট্রল পাম্পে বিপুল পরিমাণ লেনদেন হয়। কেবলমাত্র ইউপিআই মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণই ₹৩৫,১৮৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নগদ টাকার বদলে ইউপিআই বা কার্ডে পেমেন্ট করলে পরিমাণের সঠিক হিসাব রাখা সহজ হয় এবং একটি ডিজিটাল ট্রেইল তৈরি হয়। কোনো বিরোধের ক্ষেত্রে এই লেনদেনের রেকর্ড কাজে আসতে পারে।

সব পাম্প খারাপ নয়:
অবশ্যই মনে রাখতে হবে, দেশের অধিকাংশ পেট্রল পাম্প সততার সঙ্গে ব্যবসা করে। তবে একাধিক জায়গায় গ্রাহকের কাছ থেকে কম জ্বালানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এবং এ কারণে বহুবার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই চোখ-কান খোলা রেখে জ্বালানি ভরানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
1. লিটার হিসেবে জ্বালানি চেয়ে নিন – টাকা দিয়ে নয়, লিটার দিয়ে অর্ডার দিন।
2. ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করুন – পুরনো মিটার থাকলে অন্য পাম্প বেছে নিন।
3. মিটার রিসেট দেখুন – শূন্য থেকে শুরু হচ্ছে কিনা নিশ্চিত করুন।
4. ডিজিটাল পেমেন্ট করুন – নগদের বদলে ইউপিআই বা কার্ড ব্যবহার করুন।
5. গাড়ি থেকে নামুন – জ্বালানি ভরার সময় কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করুন।

সতর্কতাই আপনার সেরা সুরক্ষা:
পেট্রল পাম্প জালিয়াতি নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি উভয় সংস্থাই মাঝে মাঝে নজরদারি চালালেও প্রতিদিনের প্রতারণা ঠেকাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা গ্রাহকেরই। আপনি যদি সচেতন হন, সতর্ক থাকেন এবং লেনদেনের প্রতিটি ধাপ খেয়াল রাখেন, তবে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।

অর্থনৈতিক মন্দা ও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দামে যেখানে প্রতিটি ফোঁটা জ্বালানি মূল্যবান, সেখানে সামান্য অসতর্কতা বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই “বিশ্বাস ভালো, কিন্তু প্রমাণ আরও ভালো”—এই নীতি মেনে চলুন, এবং নিজের পকেটকে সুরক্ষিত রাখুন।