নতুন উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তাদের (Startup India) ক্ষমতায়নকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে ধারাবাহিক উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বিশেষত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তরের শহরগুলোর উদ্যোক্তাদের আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করা এবং তাদের ক্ষমতায়নের জন্য সরকার বদ্ধপরিকর বলে পুনরায় জানিয়েছেন বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্টার্টআপ উপদেষ্টা পরিষদের (National Startup Advisory Council – NSAC) ১০ম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গয়াল। বৈঠকে বিভিন্ন খাতের শিল্পনেতা, স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা, নীতিনির্ধারক ও অন্যান্য মূল অংশীদাররা অংশ নেন।
বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, “উদ্ভাবনই ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে নতুনভাবে কল্পনা করার ভিত্তি। আমাদের লক্ষ্য গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D)-এর উপর জোর দিয়ে এবং যৌথ সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এক সমন্বিত ও শক্তিশালী স্টার্টআপ পরিবেশ গড়ে তোলা।”
গয়াল আরও উল্লেখ করেন যে, যৌথ প্রচেষ্টা ছাড়া একটি প্রাণবন্ত এবং টেকসই উদ্যোক্তা পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “এই যৌথ প্রয়াসই আমাদেরকে ‘বিকসিত ভারত ২০৪৭’-এর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
মন্ত্রী X (পূর্বের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে জানিয়েছেন যে, তিনি ডীপ-টেক স্টার্টআপগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক মতবিনিময় করেছেন। এই আলোচনা থেকে তিনি তাদের অভিজ্ঞতা, অন্তর্দৃষ্টি এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কিত ফিডব্যাক সংগ্রহ করেছেন।
ডীপ-টেক স্টার্টআপগুলোর সঙ্গে আলোচনায় মূলত অর্থায়নে সহজ প্রবেশাধিকার, অবকাঠামো সহায়তা, নিয়ন্ত্রক নীতিমালার সহজীকরণ এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
মন্ত্রী গয়াল বলেন, “এই মতবিনিময় থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি কীভাবে ডীপ-টেক ইকোসিস্টেমকে আরও মজবুত করা যায় এবং বিভিন্ন খাতে উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করা যায়। এটি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে যে, আমরা একটি ভবিষ্যতমুখী এবং উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার দিকে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
এদিকে, শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য প্রচার বিভাগ (DPIIT) স্টার্টআপ ইন্ডিয়া প্রোগ্রামের অধীনে পঞ্চম সংস্করণের জন্য ‘ন্যাশনাল স্টার্টআপ অ্যাওয়ার্ডস’ (NSA)-এর জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেছে।
NSA হলো স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার একটি ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ, যা ২০২০ সালে প্রথম চালু হয়। এই পুরস্কার কর্মসূচির লক্ষ্য হলো উদ্ভাবনী এবং সমাজে প্রভাব ফেলতে সক্ষম স্টার্টআপগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া। কৃষি, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, ফিনটেক, এরোস্পেস, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সাইবার সিকিউরিটি, অ্যাক্সেসিবিলিটি প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্টার্টআপগুলোকে এই পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়।
প্রতিটি সংস্করণে নতুন নতুন বিভাগ যুক্ত করা হয়, যাতে সময়ের সঙ্গে উদ্ভাবনী চাহিদা ও সম্ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা যায়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করছে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে চালু হওয়া স্টার্টআপ ইন্ডিয়া কর্মসূচি দেশের উদ্যোক্তা মানচিত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এটি যুব সমাজ, নারী, ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের বিশেষভাবে ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বিশেষত দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরগুলো থেকে আগত উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই কর্মসূচি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে DPIIT-এর মাধ্যমে ১.৭৫ লক্ষের বেশি স্টার্টআপকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই স্টার্টআপগুলো ভারতের প্রায় প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে আছে এবং কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, এবং ডীপ-টেকসহ বিভিন্ন খাতকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
সরকারের এই সমন্বিত প্রচেষ্টা শুধু নতুন উদ্যোগকেই উৎসাহ দিচ্ছে না, বরং একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলছে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সামাজিক সমস্যার সমাধান, এবং বৈশ্বিক মঞ্চে ভারতের প্রতিযোগিতা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছরগুলোতে ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ এবং শক্তিশালী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। সরকারের উদার নীতি, আর্থিক সহায়তা, এবং আন্তর্জাতিক সংযোগের সুযোগ এই সম্ভাবনাকে আরও বেগবান করছে।
মোদী সরকারের ভিশন ‘বিকসিত ভারত ২০৪৭’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্টার্টআপ এবং উদ্যোক্তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক এই নতুন অর্থনৈতিক বিপ্লবের মাধ্যমে ভারত দ্রুত আত্মনির্ভর ও বিকশিত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে।
সরকারের এই সমস্ত উদ্যোগ ভারতের যুব সমাজকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে যে, নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে তারা দেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।