গাড়ির বীমা প্রিমিয়াম কমানোর সহজ উপায় জানুন

ভারতে গাড়ির বীমা (Car Insurance) একটি বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয়তা। প্রতিটি বীমা পলিসির জন্য বীমাগ্রহীতাকে বীমা কোম্পানির কাছে প্রিমিয়াম প্রদান করতে হয়। তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং…

Car Insurance Premium

ভারতে গাড়ির বীমা (Car Insurance) একটি বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয়তা। প্রতিটি বীমা পলিসির জন্য বীমাগ্রহীতাকে বীমা কোম্পানির কাছে প্রিমিয়াম প্রদান করতে হয়। তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং কৌশল অনুসরণ করে গাড়ির বীমা প্রিমিয়ামের খরচ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। গাড়ির বীমা প্রিমিয়াম নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়, যেমন গাড়ির মূল্য এবং বীমার ধরন, স্বাভাবিকভাবেই গাড়ির মালিকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। তবে, কিছু বিষয়, যেমন প্রিমিয়াম প্রদানের সময়সূচী, দাবির ইতিহাস ইত্যাদি, গাড়ির মালিকের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই বিষয়গুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বীমা প্রিমিয়ামে সাশ্রয় করা সম্ভব।

   

গাড়ির বীমা একটি বার্ষিক পরিষেবা, তাই সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে গাড়ির মালিক এই খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদে এই সাশ্রয়ের পরিমাণ কখনও কখনও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে। নিম্নে কিছু কার্যকর পরামর্শ দেওয়া হলো, যা গাড়ির বীমা প্রিমিয়ামে সাশ্রয় করতে সহায়ক হবে।

মাসিক প্রিমিয়াম প্রদানের সুবিধা

বীমা প্রিমিয়াম একবারে বছরের শুরুতে প্রদান করা অনেকের জন্য সুবিধাজনক মনে হতে পারে, কারণ এতে বারবার পেমেন্টের ঝামেলা থাকে না। কিন্তু, বার্ষিক প্রিমিয়াম একবারে প্রদান করতে গেলে একটি বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়, যা অনেকের পক্ষে আর্থিকভাবে চাপের কারণ হতে পারে। বর্তমানে কিছু বীমা কোম্পানি মাসিক প্রিমিয়াম প্রদানের সুবিধা দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মাসিক প্রিমিয়াম প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হয় না এবং বার্ষিক প্রিমিয়ামের সমান কভারেজই পাওয়া যায়। এর ফলে গাড়ির মালিকের পক্ষে আর্থিক ব্যবস্থাপনা সহজ হয় এবং নগদ প্রবাহের ওপর চাপ কমে। মাসিক প্রিমিয়ামের মাধ্যমে একই স্তরের বীমা সুবিধা পাওয়া যায়, যা আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি মানসিক স্বস্তিও প্রদান করে।

নো-ক্লেইম বোনাসের সুবিধা

গাড়ির বীমার ক্ষেত্রে ‘নো-ক্লেইম বোনাস’ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা, যা অনেক গাড়ির মালিক পুরোপুরি উপলব্ধি করেন না। যদি কোনো বীমা বছরে কোনো দাবি না করা হয়, তাহলে বীমা কোম্পানি পরবর্তী বছরে প্রিমিয়ামে ছাড় প্রদান করে। এই ছাড় কয়েক বছর ধরে চলতে থাকলে প্রিমিয়ামের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় হতে পারে। কিন্তু অনেক গাড়ির মালিক এই সুবিধা সম্পর্কে না জানার কারণে বা অল্প পরিমাণের ক্ষতির জন্য দাবি করে ফেলেন, ফলে এই বড় সাশ্রয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ছোটখাটো মেরামতের জন্য ২,৫০০ টাকা খরচ হয়, তবে তা নিজের পকেট থেকে মেটানোই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। কারণ, এই দাবি না করার ফলে নো-ক্লেইম বোনাসের মাধ্যমে কয়েকগুণ বেশি সাশ্রয় হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, নতুন গাড়ি কেনার সময় নো-ক্লেইম বোনাস স্থানান্তর করা উচিত, যাতে এই সুবিধা অব্যাহত থাকে।

বাজার গবেষণা ও তুলনা

গাড়ির বীমা কেনার সময় বাজারে উপলব্ধ বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে গবেষণা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক গাড়ির ডিলার নির্দিষ্ট বীমা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকেন এবং গ্রাহকদের সেই কোম্পানির বীমা পলিসি গ্রহণের জন্য চাপ দিতে পারেন। কিন্তু এতে গ্রাহকের পছন্দের স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়ে। অনলাইনে বিভিন্ন বীমা কোম্পানির প্রস্তাব তুলনা করা এখন অনেক সহজ। একটু সময় ব্যয় করে বাজার গবেষণা করলে কম খরচে ভালো কভারেজের বীমা পলিসি পাওয়া সম্ভব। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম, কভারেজ এবং অতিরিক্ত সুবিধা তুলনা করার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া, কিছু কোম্পানি বিশেষ ছাড় বা প্রচারমূলক অফার দেয়, যা সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

অন্যান্য সাশ্রয়ের উপায়

প্রিমিয়াম কমানোর জন্য আরও কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন, গাড়িতে অ্যান্টি-থেফট ডিভাইস বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থাপন করলে কিছু বীমা কোম্পানি প্রিমিয়ামে ছাড় দেয়। এছাড়া, একই বীমা কোম্পানির কাছ থেকে একাধিক পলিসি (যেমন গাড়ি এবং স্বাস্থ্য বীমা) কিনলে বান্ডেল ছাড় পাওয়া যায়। নিয়মিত বীমা পলিসি নবায়ন করা এবং সময়মতো প্রিমিয়াম প্রদান করাও দীর্ঘমেয়াদে খরচ কমাতে সহায়ক।

গাড়ির বীমা প্রিমিয়ামে সাশ্রয় করা কেবল আর্থিক বুদ্ধিমত্তারই পরিচয় দেয় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে উল্লেখযোগ্য অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ করে দেয়। মাসিক প্রিমিয়াম প্রদান, নো-ক্লেইম বোনাসের সুবিধা গ্রহণ এবং বাজার গবেষণার মাধ্যমে সঠিক বীমা পলিসি নির্বাচনের মতো কৌশলগুলো এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাড়ির মালিক হিসেবে একটু সচেতনতা এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে বীমার খরচ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই, বীমা নেওয়ার আগে সময় নিয়ে বিকল্পগুলো বিশ্লেষণ করুন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।

Advertisements