নতুন আয়কর বিল ২০২৫ (Income Tax Bill 2025) লোকসভায় পাস হয়েছে। বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত পাণ্ডা-র নেতৃত্বাধীন ৩১ সদস্যের সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে একাধিক সংশোধন যুক্ত হয়েছে বিলটিতে। এই নতুন আইনে দেরিতে রিটার্ন দাখিলকারী করদাতাদের রিফান্ড বা ফেরতের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্পষ্টতা দূর হয়েছে। এখন থেকে আর্থিক বছরের নির্ধারিত সময়সীমার পরে বিলম্বিত (belated) বা সংশোধিত (revised) রিটার্ন দাখিল করলেও অতিরিক্ত কেটে রাখা করের ফেরত পাওয়া যাবে।
তবে ছোট করদাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বস্তির প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত আইনটিতে স্থান পায়নি—শুধুমাত্র রিফান্ড পেতে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া। সংসদীয় নির্বাচিত কমিটি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল, এমন পরিস্থিতিতে ছোট করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের ঝামেলা থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত, বিশেষত যাদের আয় মৌলিক করমুক্ত সীমার (basic exemption threshold) নিচে।
আইনের ধারা ৪৩৩ এখনো বলবৎ:
নতুন বিলের ধারা ৪৩৩ (Section 433) স্পষ্ট করে বলছে—“এই অংশের অধীনে প্রতিটি রিফান্ড দাবি অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে করতে হবে, ধারা ২৬৩ অনুযায়ী।” অর্থাৎ যে কোনও করদাতা রিফান্ড চাইলে সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের জন্য রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক, অন্য কোনো উপায়ে রিফান্ড দাবি করা যাবে না।
এর ফলে, আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকা বহু ছোট করদাতা এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সিটিজেনকেও শুধুমাত্র রিফান্ডের জন্য রিটার্ন জমা দিতে হবে, যদি তাঁদের আয় থেকে উৎসে কর কর্তন (TDS) হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া:
ট্যাক্সআরাম ডটকমের (TaxAaram.com) প্রতিষ্ঠাতা ও ডিরেক্টর মায়াঙ্ক মোহাঙ্কা ‘মানিকন্ট্রোল’-কে বলেছেন, “নির্বাচিত কমিটির রিপোর্টে প্রতিফলিত ধারণা ছিল যে, ছোট করদাতাদের শুধুমাত্র রিফান্ড পেতে রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজন নাও হতে পারে। কিন্তু নতুন বিলের ধারা ৪৩৩ এখনো সেই বাধ্যবাধকতা বজায় রেখেছে।”
তিনি আরও জানান, এই বাধ্যবাধকতা অনিচ্ছাকৃতভাবে ছোট করদাতাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন বা মামলার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যদিও তাঁদের আয় করযোগ্য সীমার নিচে। শুধু রিফান্ড দাবি না করায় তাঁদের নন-ফাইলিং-এর জন্য শাস্তির মুখোমুখি হতে হতে পারে।
সুদিত কে. পারেখ অ্যান্ড কো. এলএলপি-র পার্টনার অনিতা বাসরুরও একই মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, “ছোট করদাতা এবং অবসরপ্রাপ্তদের অনেক ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র অতিরিক্ত কেটে রাখা ট্যাক্সের রিফান্ডের জন্য রিটার্ন ফাইল করতে হয়, যদিও তাঁদের আয় করযোগ্য নয়। নতুন আইন এই প্রথা অব্যাহত রেখেছে।”
দেরিতে রিটার্ন দিলেও রিফান্ড পাওয়া যাবে
নতুন আইন অবশ্য এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে—যে কোনও রিফান্ড দাবি দেরিতে দাখিল করা রিটার্নের মাধ্যমেও করা যাবে। আগে এ নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল, ফলে করদাতারা নিশ্চিত ছিলেন না যে বিলম্বিত রিটার্ন-এ রিফান্ড দাবি গ্রহণ হবে কি না। এই সংশোধনের ফলে এখন থেকে সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও রিটার্নের মাধ্যমে অতিরিক্ত ট্যাক্স ফেরত নেওয়া যাবে।
তবে প্রক্রিয়াটি একই থাকবে—আয়কর রিটার্ন জমা, তা প্রসেসিং করা, তারপর সিস্টেমে রিফান্ড অনুমোদন ও প্রদানের ধাপ সম্পূর্ণ করতে হবে। অর্থাৎ আয় যাই হোক না কেন, রিফান্ড দাবি করতে গেলে করদাতাকে পুরো রিটার্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
ছোট করদাতাদের সমস্যা কোথায়?
প্রতি বছর অনেক ছোট করদাতা—বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিকরা—ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা অন্য বিনিয়োগে সুদ আয়ের উপর TDS কেটে নেওয়ার কারণে কর ফেরতের জন্য রিটার্ন জমা দেন। তাঁদের আয় করযোগ্য সীমার নিচে হলেও, শুধু এই রিফান্ডের জন্য জটিল রিটার্ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হয়।
সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছিল যে, আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকলে এবং TDS কেটে নেওয়া হয়েছে, তবে একটি সরলীকৃত প্রক্রিয়ায়—রিটার্ন ছাড়াই—রিফান্ড পাওয়া উচিত। কিন্তু সরকার সেই সুপারিশ গ্রহণ করেনি।
আইন বিশেষজ্ঞদের মত:
কর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি একধরনের ‘কমপ্লায়েন্স বার্ডেন’ যা ছোট করদাতাদের জন্য অপ্রয়োজনীয়। কারণ, তাঁদের কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই, তবু রিফান্ডের জন্য পূর্ণাঙ্গ রিটার্ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হয়। এর ফলে প্রযুক্তিগত ভুল, বিলম্ব ও জরিমানার আশঙ্কা বাড়ে।
তবে কিছু কর বিশেষজ্ঞ মনে করেন, রিটার্নের মাধ্যমে রিফান্ড প্রক্রিয়ার নিয়ম রাখলে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং ভুয়া রিফান্ড দাবির সম্ভাবনা কমে। কিন্তু ছোট করদাতাদের জন্য আলাদা সরল পদ্ধতি চালু করা হলে তাঁরা উপকৃত হবেন।