পদ্মার দামে ছ্যাঁকা! বাংলাদেশের বাজারে ঝড় তুলছে গুজরাটের ইলিশ

পদ্মার ইলিশ মানেই স্বাদের অনন্য অভিজ্ঞতা। কিন্তু এ বার সেই স্বাদের দাম আকাশছোঁয়া (Padma Hilsa Price)। এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে গেলে বাংলাদেশের বাজারে গুনতে…

Skyrocketing Padma Hilsa Prices in Bangladesh Push Buyers to Cheaper Gujarat Hilsa

পদ্মার ইলিশ মানেই স্বাদের অনন্য অভিজ্ঞতা। কিন্তু এ বার সেই স্বাদের দাম আকাশছোঁয়া (Padma Hilsa Price)। এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে গেলে বাংলাদেশের বাজারে গুনতে হচ্ছে ৩২০০–৩৫০০ টাকা! দেড় কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম ছুঁইছুঁই ৪০০০ টাকা। এমন দামে মাছ কিনতে গিয়ে হতবাক ক্রেতারা, আবার একই সঙ্গে বিপাকে পড়ছেন বিক্রেতারাও। প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত তিন দশকের অভিজ্ঞতায় এমন দাম তাঁরা আগে দেখেননি।

ফলে ক্রেতাদের একাংশ এখন ঝুঁকছেন ভারতীয় ইলিশের দিকে। বিশেষ করে গুজরাট ও মুম্বই উপকূল থেকে আসা ইলিশ। ওজন ও আকারে বড় হলেও পদ্মার মতো স্বাদ নেই, তবে দাম তুলনায় অনেকটাই সস্তা। বাংলাদেশের বাজারে এ সব ভারতীয় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ একই আকারের মাছ কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে পদ্মার ইলিশের প্রায় অর্ধেক দাম।

   

ঢাকার বাজারে চড়া দর
ঢাকার কারওয়ান বাজার, কিচেন মার্কেট, মহম্মদপুর বাজার, বিজয় সরণি-সহ একাধিক মাছের বাজারে ভোর থেকেই শুরু হয় ইলিশ বিক্রি। মরশুমে এই বাজারগুলিতে মূলত ইলিশই পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ছোট ইলিশ (প্রায় ৫০০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০০–১৬০০ টাকায়। একটু বড়, অর্থাৎ ৭০০–৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি প্রতি ১৮৫০–২০০০ টাকা। কিন্তু এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম হু হু করে বেড়ে ৩২০০ টাকার ওপরে পৌঁছে যাচ্ছে। দেড় কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দর ছুঁই ৩৭০০–৪০০০ টাকা।

ঢাকার মাছ ব্যবসায়ী মহম্মদ খালেক আনোয়ার বলেন, “অতিরিক্ত দামের জন্য এখন আর সকলের পক্ষে পদ্মার ইলিশ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তুলনায় ভারত থেকে আসা ইলিশ অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। তাই ক্রেতাদের বড় অংশ ভারতীয় ইলিশই কিনছে।”

ভারতীয় ইলিশের দাপট
বাংলাদেশের বাজারে এ বছর শুধু গুজরাট নয়, পশ্চিমবঙ্গ ও মায়ানমারের দিক থেকেও ইলিশ আসছে। পশ্চিমবঙ্গের মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মায়ানমারের ইরাবতী নদী থেকে ধরা ইলিশও এ বার এসেছে। এক কেজির বেশি ওজনের এই ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়। গুজরাট ও মুম্বই উপকূলে ধরা বড় আকারের ইলিশ—যার ওজন দেড় থেকে দুই কেজি—প্রতি কেজি মাত্র ১০০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশি ক্রেতারা চাহিদা মতো সেগুলো কিনতে শুরু করেছেন।

তবে স্বাদের প্রশ্নে এখনও পদ্মার ইলিশই অদ্বিতীয়। সেটাই বলছেন ঢাকার এক ক্রেতা আবদুল করিম, “পদ্মার ইলিশের স্বাদ যে কোনও ভারতীয় ইলিশের থেকে আলাদা। কিন্তু দাম এত বেশি যে সেটা কিনে খাওয়া সত্যিই কঠিন।”

Advertisements

পদ্মার ইলিশ নিয়ে দুশ্চিন্তা
বাংলাদেশের ইলিশের দাম এত বেড়ে যাওয়ার পিছনে কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে জোগান কমে যাওয়া ও অতিরিক্ত চাহিদা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীতে ইলিশের প্রজনন ও মজুত রক্ষায় একাধিক নিয়ম চালু করা হলেও তাতে খুব একটা ফল মিলছে না। ফলে বাজারে সরবরাহ কম এবং দাম বেশি।

পশ্চিমবঙ্গের মাছ আমদানিকারক সংগঠনের অন্যতম সদস্য শুভময় দাস জানান, “এখানে সব সময় বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা থাকে। আমরা চেষ্টা করছি আরও বেশি করে বাংলাদেশের ইলিশ আনতে। কিন্তু দাম এতটাই বেশি যে ক্রেতারা সেটি নিতে পারছেন না।”

ক্রেতাদের ভোগান্তি
ঢাকার খুচরো বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ পরিবারগুলো বড় ইলিশ কেনার সাহসই করছেন না। অনেকেই ছোট আকারের ভারতীয় ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরছেন। এক গৃহিণী হাসিনা বেগম বলেন, “ইলিশ ছাড়া পূজো বা ঈদের আনন্দ অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিন্তু এ বছর পদ্মার ইলিশ কেনা প্রায় অসম্ভব। তাই ভারতীয় ইলিশেই ভরসা রাখতে হচ্ছে।”

বাংলাদেশে ইলিশ শুধু মাছ নয়, সংস্কৃতিরও অংশ। উৎসবের দিন থেকে পারিবারিক আড্ডা—সব ক্ষেত্রেই ইলিশ অপরিহার্য। কিন্তু এ বছর পদ্মার ইলিশের দাম এতটাই বেশি যে অনেকের কাছেই তা অপ্রাপ্য হয়ে উঠছে। সেই সুযোগে ভারতীয় ইলিশ, বিশেষ করে গুজরাট ও মুম্বই উপকূলের ইলিশ বাজার দখল করছে। ব্যবসায়ীদের মতে, স্বাদের দিক থেকে পদ্মার ইলিশ এখনও সেরা হলেও দামের ধাক্কায় ক্রেতারা বাধ্য হচ্ছেন বিকল্প বেছে নিতে।