মিউচুয়াল ফান্ডে কোথায় বিনিয়োগ করবেন, SIP না লাম্প সাম?

Best mutual fund strategy: শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য পথচলা কখনোই সহজ নয়। বাজারে অস্থিরতা থাকলে সেই পথ আরো কঠিন হয়ে ওঠে। এ সময় আত্মবিশ্বাস ধরে…

Best mutual fund strategy

Best mutual fund strategy: শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য পথচলা কখনোই সহজ নয়। বাজারে অস্থিরতা থাকলে সেই পথ আরো কঠিন হয়ে ওঠে। এ সময় আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা এবং বিনিয়োগে নিয়মিত থাকা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড একটি সহায়ক হাত হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে, সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (SIP) বা লাম্প সাম বিনিয়োগের মধ্যে কোনটি বেছে নেবেন, তা নিয়ে প্রায়শই দ্বিধায় পড়ে যান নবীন বিনিয়োগকারীরা।

SIP: ধৈর্য ও নিয়মিত বিনিয়োগের প্রতীক

টাটা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের হেড-প্রোডাক্টস, শেইলি গাঙ্গ বলেন, “SIP এবং লাম্প সাম—উভয় বিনিয়োগেই নিজ নিজ সুবিধা রয়েছে। তবে SIP বিশেষভাবে উপকারী বাজারের ওঠানামার সময়।” SIP-এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়, যার ফলে বিভিন্ন দামে ইউনিট কেনা সম্ভব হয় এবং গড় ক্রয়মূল্য হ্রাস পায়। এটি ‘রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং’ নামে পরিচিত।

   

বিশেষ করে বাজার যখন অস্থির, তখন SIP ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়া এবং সম্ভব হলে পরিমাণ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন শেইলি। এতে বিনিয়োগের শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং আবেগতাড়িত হয়ে বাজার ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

লাম্প সাম: সুযোগের সময় সঠিক পদক্ষেপ

অন্যদিকে, লাম্প সাম বিনিয়োগও এক সময়ে লাভজনক হতে পারে, বিশেষ করে যখন বাজারে বড় পতন ঘটে বা মূল্যায়ন কমে যায়। এই সময় এককালীন বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতে বড় মুনাফা অর্জনের সুযোগ থাকে। তবে এটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে।

শেইলি পরামর্শ দেন, যদি বাজার অস্থির থাকে বা উচ্চ মূল্যায়ন পর্যায়ে থাকে, তাহলে লাম্প সাম অর্থ ‘Balanced Advantage Funds’-এ স্থানান্তর করা যায়। এই ধরণের ফান্ড বাজার পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক সূচকের ভিত্তিতে তাদের ইক্যুইটি এক্সপোজার পরিবর্তন করে থাকে। এতে প্রোফেশনাল ম্যানেজাররা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি সুবিধাজনক বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়।

বিভিন্ন সময়ে অস্থিরতা: সুযোগের আরেক নাম

কোটাক মিউচুয়াল ফান্ডের জয়েন্ট প্রেসিডেন্ট ও ন্যাশনাল হেড সেলস, মানিশ মেহতা বলেন, “গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস, ডট কম বাবল বা কোভিড—এই সব অস্থির সময়ে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের যাত্রা শুরু করেছেন বা বিদ্যমান বিনিয়োগে যুক্ত হয়ে গড় খরচ কমিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, এইরকম সময়গুলো বাস্তবে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে। শেয়ারবাজার কখনই সোজা পথ নয়, তবে ধৈর্য ও কৌশল থাকলে এর মধ্যেও সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়।

অ্যাক্টিভ বনাম প্যাসিভ ফান্ড: কোনটি বেছে নেবেন নতুন বিনিয়োগকারীরা?

শেইলি গাঙ্গের মতে, নতুন বিনিয়োগকারীদের উচিত তাদের পোর্টফোলিও দুটি ভাগে ভাগ করা – কোর পোর্টফোলিও ও স্যাটেলাইট পোর্টফোলিও।

  • কোর পোর্টফোলিও: এই অংশে বৈচিত্র্য আনা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, Largecap ফান্ডে বিনিয়োগ করার সময় অ্যাক্টিভ ফান্ডের পাশাপাশি Nifty 50 ETF বা ইনডেক্স ফান্ডেও অংশ রাখা যেতে পারে। এছাড়া Flexicap এবং Large & Midcap ফান্ডগুলিতে অ্যাক্টিভ ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সেক্টর বা সাব-সেগমেন্ট অনুযায়ী ভালো রিটার্নের সম্ভাবনা থাকে।
  • স্যাটেলাইট পোর্টফোলিও: এই অংশে সেক্টরভিত্তিক অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ ফান্ডে বিনিয়োগ করে আরও বৈচিত্র্য আনা যায়। যেমন, ব্যাংকিং ও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস, ফার্মা ও হেলথকেয়ার সেক্টরের ফান্ডে বিনিয়োগ ভবিষ্যতের বাজার চাহিদা অনুযায়ী লাভজনক হতে পারে।

বাজারে নতুনদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ধৈর্য ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। SIP পদ্ধতি একজন নতুন বিনিয়োগকারীকে নিয়মিত বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যা দীর্ঘমেয়াদে বড় মূলধনের সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, বাজারে পতনের সময় লাম্প সাম বিনিয়োগ একটি বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ হতে পারে, তবে সেটি সঠিক ফান্ড নির্বাচন ও বাজার বোঝার উপর নির্ভর করে।

সবশেষে, পোর্টফোলিও তৈরি করার সময় অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ উভয় ধরণের ফান্ডের মিশ্রণ বিনিয়োগে ভারসাম্য আনে এবং দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ায়। বিনিয়োগ একটি যাত্রা, এবং এই যাত্রায় সঠিক দিশা ও কৌশলই নতুন বিনিয়োগকারীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

Advertisements