মিউচুয়াল ফান্ডে ঝুঁকির বদলে লাভ করুন, জানুন ডাইভার্সিফিকেশনের সেরা ৫ উপায়

SIP Investment Tips: বর্তমানে ধন-সম্পদ বৃদ্ধির অন্যতম জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠেছে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ। ধীরে ধীরে এটি ফিক্সড ডিপোজিট বা পোস্ট অফিস স্কিমের মতো ঐতিহ্যবাহী…

SIP Investment Tips

SIP Investment Tips: বর্তমানে ধন-সম্পদ বৃদ্ধির অন্যতম জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠেছে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ। ধীরে ধীরে এটি ফিক্সড ডিপোজিট বা পোস্ট অফিস স্কিমের মতো ঐতিহ্যবাহী বিনিয়োগ পদ্ধতির চেয়েও বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। ব্যাংকবাজার-এর সাম্প্রতিক ‘মানিমুড ২০২৫’ রিপোর্ট অনুসারে, ৬২ শতাংশ মানুষ মিউচুয়াল ফান্ডকেই তাঁদের পছন্দের বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। এর মধ্যে SIP বা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান-এর চাহিদা চোখে পড়ার মতো।

তবে মনে রাখা দরকার, মিউচুয়াল ফান্ড একটি মার্কেট-লিংকড বিনিয়োগ মাধ্যম হওয়ায়, এতে লাভের পাশাপাশি ঝুঁকিও রয়েছে। এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে এক অন্যতম কৌশল হলো ‘ডাইভার্সিফিকেশন’। অর্থাৎ, একাধিক ফান্ড এবং সম্পদ শ্রেণির মধ্যে আপনার বিনিয়োগকে ছড়িয়ে দেওয়া। এতে যদি কোনো একটি ফান্ড প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম না-ও করে, তাহলে অন্যগুলো সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে।
নিচে ডাইভার্সিফিকেশন সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হল:

   

১. ‘বৈচিত্র্য’ মানেই শুধু সংখ্যাগত ভিন্নতা নয়:
অনেক নতুন বিনিয়োগকারী মনে করেন, তাঁরা যদি চার-পাঁচটি মিউচুয়াল ফান্ড কিনে ফেলেন, তবে তাতেই ডাইভার্সিফিকেশন সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু যদি সেই সব ফান্ড একই রকম কোম্পানিতে (যেমন শুধুই লার্জ-ক্যাপ) বিনিয়োগ করে থাকে, তাহলে প্রকৃত ডাইভার্সিফিকেশন হচ্ছে না।

সঠিক কৌশল হলো–বিভিন্ন সম্পদ শ্রেণি (যেমন ইকুইটি, ডেট, গোল্ড), এবং উপ-শ্রেণি (লার্জ-ক্যাপ, মিড-ক্যাপ, ফ্লেক্সি-ক্যাপ, সেক্টরাল ফান্ড ইত্যাদি) অনুযায়ী বিনিয়োগ ছড়িয়ে দেওয়া। এতে এক ধাক্কায় বাজারে বড় পতন এলেও আপনার সম্পূর্ণ পোর্টফোলিও ঝুঁকিতে পড়বে না।

২. একবারে সব টাকা বিনিয়োগ না করে ধাপে ধাপে করুন:
অনেকেই মনে করেন, বাজারে যখন পতন হয়, তখন একসাথে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করলে লাভ বেশি হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাজারের সর্বনিম্ন পয়েন্ট কোথায়, তা জানা প্রায় অসম্ভব। বরং এমন সময়ে দাম আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এই ঝুঁকি এড়াতে SIP বা মাসিকভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ একটি বুদ্ধিমান পদক্ষেপ। এর ফলে ‘রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং’-এর সুবিধা পাওয়া যায় এবং বাজারের টাইমিং নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন পড়ে না।

৩. সম্পদ বরাদ্দে পরিকল্পনা জরুরি:
আপনার পোর্টফোলিওতে কতটা ইকুইটি, কতটা ডেট এবং কতটা অল্টারনেট ইনভেস্টমেন্ট থাকবে, তা পরিকল্পিতভাবে নির্ধারণ করাটাই হলো ‘অ্যাসেট অ্যালোকেশন’। এর ওপর নির্ভর করে আপনার ঝুঁকি এবং প্রত্যাশিত রিটার্নের ভারসাম্য তৈরি হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়–আপনি যদি ₹১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে ₹৪০,০০০ লার্জ-ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডে, ₹২৫,০০০ মিড-ক্যাপ বা ফ্লেক্সি-ক্যাপ ফান্ডে, ₹২৫,০০০ শর্ট-টার্ম ডেট ফান্ডে এবং ₹১০,০০০ গোল্ড ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এটি একটি ব্যালান্সড অ্যাসেট অ্যালোকেশন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

Advertisements

৪. স্টক ওভারল্যাপ দেখুন:
একাধিক মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলেও যদি সেই সব ফান্ডে একই রকম শেয়ার থাকে, তাহলে প্রকৃত ডাইভার্সিফিকেশন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, দুটি লার্জ-ক্যাপ ফান্ডে যদি একই ৫-৬টি কোম্পানির স্টক থাকে, তাহলে ঝুঁকি ছড়িয়ে না গিয়ে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।

এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে অনলাইন টুল ব্যবহার করে ‘স্টক ওভারল্যাপ’ চেক করুন। এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন ইনভেস্টমেন্ট স্টাইল বেছে নেওয়াও ভালো পন্থা।

৫. বিভিন্ন AMC থেকে ফান্ড বাছুন:
AMC বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হল সেই সংস্থা যারা মিউচুয়াল ফান্ড চালায়। ভিন্ন AMC-র মধ্যে পরিচালন পদ্ধতি, ইনভেস্টমেন্ট থিম এবং ঝুঁকি গ্রহণের কৌশলে পার্থক্য থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, একটি AMC-র ভ্যালু-অরিয়েন্টেড ফান্ড এবং অন্য একটি AMC-র গ্রোথ-অরিয়েন্টেড ফান্ড–এই দুটো একসঙ্গে রাখা মানে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের আওতায় বিনিয়োগ করা, যা ওভারল্যাপ কমায় এবং বৈচিত্র্য বাড়ায়।

মিউচুয়াল ফান্ড নিঃসন্দেহে সম্পদ বৃদ্ধির একটি আধুনিক ও স্মার্ট উপায়। তবে শুধুমাত্র ফান্ড বেছে নেওয়াই যথেষ্ট নয়, তা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বেছে নিতে হবে। ডাইভার্সিফিকেশন কেবল ঝুঁকি কমায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রিটার্ন আনার পথ প্রশস্ত করে। তাই বিনিয়োগের আগে নিজের লক্ষ্য ও ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা বুঝে পরিকল্পনা করুন। মনে রাখবেন, অর্থ শুধু উপার্জনের নয়, সঠিকভাবে পরিচালনার বিষয়ও বটে।