আয় করমুক্ত হলেও রিটার্ন ফাইল করা কি বাধ্যতামূলক? বিস্তারিত জানুন

২০২৫ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করার মরসুম জোরকদমে চলছে। ইতিমধ্যেই ১.২৩ কোটিরও বেশি মানুষ তাদের রিটার্ন জমা দিয়েছেন। চলতি বছরের জন্য নির্ধারিত ডেডলাইন অনুযায়ী,…

Confused About ITR Forms

২০২৫ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করার মরসুম জোরকদমে চলছে। ইতিমধ্যেই ১.২৩ কোটিরও বেশি মানুষ তাদের রিটার্ন জমা দিয়েছেন। চলতি বছরের জন্য নির্ধারিত ডেডলাইন অনুযায়ী, নন-অডিটকৃত রিটার্ন ফাইল করার শেষ তারিখ ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫। আয়কর বিধি অনুযায়ী, পুরনো কর ব্যবস্থায় বার্ষিক আয় ২.৫ লাখ টাকার বেশি হলে এবং নতুন কর ব্যবস্থায় ৩ লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

তবে প্রশ্ন উঠছে, এর চেয়ে কম আয় হলে কি রিটার্ন জমা দেওয়া একেবারেই দরকার নেই? AQUILAW-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ট্যাক্স) রজর্ষি দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, কারো রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না, তা নির্ভর করে তার বয়স ও কোন কর ব্যবস্থা (পুরনো বা নতুন) বেছে নিয়েছেন তার উপর।

   

বয়স ও কর ব্যবস্থা অনুযায়ী সীমা:
পুরনো কর ব্যবস্থায়, ৬০ বছরের নিচে যাদের মোট বার্ষিক আয় ২.৫ লাখ টাকার বেশি, তাদের রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়সীদের জন্য এই সীমা ৩ লাখ টাকা। আবার, ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ সুপার সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য এই সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে, নতুন কর ব্যবস্থায় সবার জন্যই মোট আয় ৩ লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক। FY 2024-25 অর্থবর্ষের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য।

আয় কম হলেও কখন রিটার্ন ফাইল করতে হবে?
রজর্ষি দাশগুপ্তের মতে, যাদের আয় উপরোক্ত সীমার নিচে, তাদের সাধারণত রিটার্ন ফাইল করার প্রয়োজন নেই। তবে কিছু শর্তে রিটার্ন ফাইল করতেই হবে। যেমন—
1️⃣ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকার বেশি জমা হলে।
2️⃣ কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি জমা হলে।
3️⃣ বার্ষিক বিক্রয় বা ব্যবসার টার্নওভার ৬০ লাখ টাকার বেশি হলে।
4️⃣ পেশাগত আয় ১০ লাখ টাকার বেশি হলে।
5️⃣ বিদ্যুৎ বিল বছরে ১ লাখ টাকার বেশি হলে।
6️⃣ TDS বা TCS-এর পরিমাণ ২৫,০০০ টাকার বেশি হলে।
7️⃣ বিদেশি সম্পত্তি থেকে আয় বা বিদেশি অ্যাসেট থাকলে।
8️⃣ বছরে ২ লাখ টাকা বা তার বেশি বিদেশ সফর ব্যয়ে খরচ করলে, নিজের বা অন্য কারো জন্য।
9️⃣ যে কোনও ভারতীয় রেসিডেন্টের যদি বিদেশে অ্যাসেট বা সাইনিং অথরিটি থাকে, তাকেও রিটার্ন ফাইল করতে হবে।

পুরনো কর ব্যবস্থা (Old Tax Regime) কী?
যারা বিভিন্ন কর ছাড় এবং কাটছাঁটের সুবিধা পেতে চান, তাদের জন্য পুরনো কর ব্যবস্থা উপযুক্ত। এর মাধ্যমে Section 80C (১.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত), হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স (HRA), লিভ ট্রাভেল অ্যালাউন্স (LTA), হোম লোনের সুদ (Section 24), স্বাস্থ্য বীমা প্রিমিয়াম (Section 80D), শিক্ষালোনের সুদ (Section 80E), এবং স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন (৫০,০০০ টাকা) ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ছাড় পাওয়া যায়।

পুরনো কর ব্যবস্থার স্ল্যাব (FY 2024-25):
২.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত: কোনো কর নেই।
২.৫ লাখ–৫ লাখ টাকা: ৫%।
৫ লাখ–১০ লাখ টাকা: ২০%।
১০ লাখ টাকার বেশি: ৩০%।

Advertisements

উল্লেখযোগ্য যে, Section 87A অনুযায়ী, যদি কারো নেট ট্যাক্সেবল ইনকাম ৫ লাখ টাকার মধ্যে থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ করের ওপর ছাড় পাওয়া যায় এবং কার্যত কোনো কর দিতে হয় না।

নতুন কর ব্যবস্থা (New Tax Regime) কী?
২০২০ সালে চালু হওয়া এই ব্যবস্থা ২০২৩ সালের বাজেটে আরও সহজ করা হয়েছে। এর মূল বৈশিষ্ট্য হল—কর হারের হার তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু বেশি ছাড় বা কাটছাঁটের সুবিধা নেই। FY 2023-24 থেকে নতুন কর ব্যবস্থাতেও ৫০,০০০ টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন প্রযোজ্য হয়েছে, যা আগে শুধু পুরনো কর ব্যবস্থায় ছিল।

নতুন কর ব্যবস্থার স্ল্যাব (FY 2024-25):
৩ লাখ টাকা পর্যন্ত: কোনো কর নেই।
৩ লাখ–৬ লাখ টাকা: ৫%।
৬ লাখ–৯ লাখ টাকা: ১০%।
৯ লাখ–১২ লাখ টাকা: ১৫%।
১২ লাখ–১৫ লাখ টাকা: ২০%।
১৫ লাখ টাকার বেশি: ৩০%।

কোনটি বেছে নেবেন?
কোন কর ব্যবস্থা বেছে নেবেন, তা পুরোপুরি ব্যক্তির আয়ের ধরন এবং বিনিয়োগ অভ্যাসের উপর নির্ভর করছে। যারা বেশি বিনিয়োগ করে ছাড় পেতে চান, তাদের জন্য পুরনো কর ব্যবস্থা ভালো। আবার যাদের ছাড়ের প্রয়োজন কম, তাদের জন্য নতুন ব্যবস্থা কম ট্যাক্সে সহজ সমাধান।

যদিও অনেকেই ভাবেন, আয় কম হলে রিটার্ন দেওয়ার দরকার নেই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন শর্তের কারণে অনেককেই রিটার্ন ফাইল করতে হয়। যেকোনো আর্থিক বা আইনি জটিলতা এড়াতে সঠিক সময়ে রিটার্ন জমা দেওয়া উচিত। তাছাড়া, ভবিষ্যতের জন্য ব্যাঙ্ক লোন, ভিসা প্রসেসিং বা আর্থিক রেকর্ডের ক্ষেত্রে রিটার্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে কাজ করে। যারা এখনও রিটার্ন জমা দেননি, তারা দেরি না করে শীঘ্রই ফাইল করে ফেলুন। মনে রাখবেন, শেষ তারিখ ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫।