বৃহস্পতিবার ভারতের শেয়ার বাজারে সামান্য পতন লক্ষ্য করা গেছে। সেনসেক্স (Sensex) ১৫৩.১৭ পয়েন্ট বা ০.২০ শতাংশ কমে ৭৮,১১৮.১১ পয়েন্টে পৌঁছেছে, এবং নিফটি (Nifty) ৫৫.০০ পয়েন্ট বা ০.২৩ শতাংশ কমে ২৩,৬৪১.৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারে ১,৯১৮টি শেয়ার উপরে উঠেছে, ১,১৬০টি শেয়ার কমেছে এবং ১২০টি শেয়ার অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI)-এর আর্থিক নীতির পর্যালোচনার জন্য অপেক্ষা করছে, যা আগামীকাল (৭ ফেব্রুয়ারি) গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রার প্রথম মুদ্রানীতি পর্যালোচনা হবে। বাজারের এই মনোভাবের মধ্যে কিছুটা আশা রয়েছে যে আরবিআই সুদের হার কমাতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন যে, ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) তার নীতিগত পদক্ষেপে কিছুটা শিথিলতা আনতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের বেতন কমানোর সিদ্ধান্তের পর, যা খরচ বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে, আরবিআইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ অনেকটা প্রভাব ফেলবে। বিশেষত, রিজার্ভ ব্যাংক যদি সুদের হার কমায়, তবে তা ভারতের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থিতিশীল কৌশল এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের কারণে বৈশ্বিক বাজারে কিছু উদ্বেগ রয়েছে, যা ভারতের বাজারে কিছুটা প্রভাব ফেলছে।
বাজারে কিছু সেক্টর ইতিবাচক দিকে এগিয়ে গেছে, তবে কিছু সেক্টর পিছিয়ে থেকেছে। প্রযুক্তি (IT) এবং তেল ও গ্যাস খাতের শেয়ারগুলি নিফটির সহায়তায় কিছুটা উপরের দিকে গিয়েছে। যদিও FMCG (ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস) খাতের শেয়ারগুলি পিছিয়ে ছিল। সুতরাং, সেক্টর ভিত্তিক নথি অনুযায়ী, প্রযুক্তি শেয়ারগুলি বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। কোগনিজ্যান্ট টেকনোলজি সলিউশনস, একটি আমেরিকান কোম্পানি, শক্তিশালী চতুর্থ ত্রৈমাসিক ফলাফল ঘোষণা করেছে যা রাজস্বের পূর্বাভাস ছাড়িয়েছে, তবে তারা ২০২৫ সালের জন্য দুর্বল গাইডেন্স দিয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের মনোভাব এবং বিশ্লেষকদের মতামত
গেওজিট ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলী ভি কে বিজয়কুমার বলেছেন, “বাজার এখন একটি কনসলিডেশন ফেজে প্রবেশ করেছে, যেখানে আগামী ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে। কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বাজার একটি মৃদু উত্থান পেতে পারে যদি আরবিআই ২৫ বেস পয়েন্ট সুদের হার কমায়। যদিও ক্রমাগত অবমূল্যায়ন হওয়া ভারতীয় রুপি এই সিদ্ধান্তের জন্য পক্ষে একটি অনুকূল ম্যাক্রো পরিস্থিতি সরবরাহ না করলেও, বাজেটের পরে যা আশাবাদী মনোভাব তৈরি করেছে, সেই প্রেক্ষাপটে আরবিআই ২৫ বেস পয়েন্ট হার কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাক্রো পরিস্থিতি উদীয়মান বাজারের জন্য ইতিবাচক হচ্ছে। ডলার ইনডেক্স ১০৭.৫৬ তে পতিত হয়েছে এবং ১০ বছরের সুদের হার ৪.৪ শতাংশে কমেছে, যা ভারতসহ ইমার্জিং মার্কেটের জন্য ইতিবাচক। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা (FII) জানুয়ারিতে যেভাবে বিক্রি করেছিল, সেভাবে বিক্রি চালিয়ে যাবে না। আর্থিক খাত আজকের বাজারের মূল ফোকাস হতে পারে।”
তবে, ব্রডার মার্কেটে কিছুটা লাভ লক্ষ্য করা গেছে। বিএসই মিডক্যাপ (BSE Midcap) সূচক ০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং বিএসই স্মলক্যাপ (BSE Smallcap) সূচক ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজকের বাজারে প্রযুক্তি শেয়ারগুলির প্রতি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। কোগনিজ্যান্ট টেকনোলজি সলিউশনসের চতুর্থ ত্রৈমাসিক ফলাফল খুবই শক্তিশালী ছিল, যা বাজারের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। তবে, কোম্পানিটি ২০২৫ সালের জন্য দুর্বল গাইডেন্স দিয়েছে, যেখানে তারা ৩.৫-৬ শতাংশের মধ্যে ধারাবাহিক মুদ্রায় রাজস্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। এসব শর্তের পরও, নিফটি আইটি সূচক ০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইনফোসিস, টিসিএস এবং পার্সিস্টেন্ট সিস্টেমসের ভাল ফলাফলের কারণে হয়েছে।
ভারতের শেয়ার বাজার এখন সাবধানী অবস্থায় রয়েছে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা আরবিআইয়ের পরবর্তী নীতিগত সিদ্ধান্তের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। যদিও কিছু সেক্টর ইতিবাচক দিক দেখাচ্ছে, তেমনি কিছু সেক্টরের মধ্যে চাপও দেখা যাচ্ছে। বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষত মার্কিন-চীন বাণিজ্য বিতর্ক, বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, তবে আরবিআইয়ের নীতি পরিবর্তনের ফলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হতে পারে। শেয়ার বাজারে আশাবাদী মনোভাব বজায় থাকলেও, সঠিক বিনিয়োগ কৌশল গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।