মুদ্রাস্ফীতি সত্ত্বেও সেনসেক্স ও নিফটির উত্থান

ভারতের প্রধান শেয়ার বাজার সূচক—৩০টি শেয়ারের সেনসেক্স এবং নিফটি ৫০ (Sensex-Nifty)—শুক্রবার সকালে সামান্য নিম্নমুখী হয়ে লেনদেন শুরু করেছে। টানা চার দিনের ঊর্ধ্বগতির পর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা…

sensex-nifty-rise-despite-inflation

ভারতের প্রধান শেয়ার বাজার সূচক—৩০টি শেয়ারের সেনসেক্স এবং নিফটি ৫০ (Sensex-Nifty)—শুক্রবার সকালে সামান্য নিম্নমুখী হয়ে লেনদেন শুরু করেছে। টানা চার দিনের ঊর্ধ্বগতির পর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নেওয়ার ফলে এই পতন দেখা গিয়েছিল। তবে, সকালের প্রাথমিক দরপতনের পর বাজারে ক্রেতারা ফিরে আসায় সূচক দুটি দ্রুতই ইতিবাচক অঞ্চলে প্রত্যাবর্তন করেছে। এই ওঠানামার ধরন গত রাতে ওয়াল স্ট্রিটে দেখা গিয়েছিল, যার প্রভাব আজ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাজারগুলিতে মিশ্র লেনদেনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।

সকাল ১০টায়, সেনসেক্স ২২৩.৭২ পয়েন্ট বা ০.২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৬,৫৭১.৭৮-এ পৌঁছেছে, আর নিফটি ৬৭.৩৫ পয়েন্ট বা ০.২৯ শতাংশ বেড়ে ২৩,২৫৮.০০-এ দাঁড়িয়েছে। মোট ২,৫৩১টি শেয়ারের দাম বেড়েছে, ৬১৫টি শেয়ার কমেছে এবং ১৩৪টি শেয়ার অপরিবর্তিত রয়েছে।

   

বৃহত্তর বাজারে খুচরো বিনিয়োগকারীদের তরফে শক্তিশালী ক্রয় দেখা গেছে। এর ফলে নিফটি স্মলক্যাপ ১০০ এবং নিফটি মিডক্যাপ ১০০ সূচক প্রায় ১ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরো বিনিয়োগকারীদের এই উৎসাহ বাজারে একটি ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি করেছে।

সেক্টরভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিফটি আইটি সূচক সবচেয়ে খারাপ পারফর্মার হয়েছে, যা ০.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী আইটি জায়ান্ট অ্যাকসেঞ্চার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের জন্য প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল রাজস্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়ার পর এইচসিএল টেক, ইনফোসিস, টিসিএস, উইপ্রো এবং টেক মাহিন্দ্রার মতো বড় খেলোয়াড়রা তিন দিনের ঊর্ধ্বগতির ধারা ভেঙে পড়েছে। এই দুর্বল পূর্বাভাস নিফটি ৫০ সূচকের সামগ্রিক লাভকে সীমিত করে দিয়েছে।

জিওজিত ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ ভি কে বিজয়কুমার বলেন, “এই সপ্তাহে বাজারে যে র‍্যালি দেখা গেছে, যেখানে নিফটি ৩.৫ শতাংশ বেড়েছে, তা এমন সময়ে এসেছে যখন বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়ছে। ২ এপ্রিল থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে এই উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই র‍্যালির মূল চালিকাশক্তি হল দুই দিনে বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (এফআইআই) ক্যাশ মার্কেটে ক্রয় এবং সম্ভবত আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, ফিউচার মার্কেটে তাদের শর্ট পজিশনের তীব্র হ্রাস এবং লং পজিশনের বৃদ্ধি।”

১৮ মার্চ, বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (এফআইআই) এক মাসের মধ্যে প্রথমবার ভারতীয় শেয়ারে নেট ক্রেতা হয়েছিলেন। যদিও পরবর্তী সেশনে তারা আবার বিক্রি শুরু করেছিলেন, তবে শেষ সেশনে তারা পুনরায় নেট ক্রেতা হয়ে উঠেছেন। বিজয়কুমার আরও বলেন, “এই পরিবর্তন খুচরো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছে, যারা বৃহত্তর বাজারে ক্রয় পুনরায় শুরু করেছেন।”

শুক্রবারের লেনদেনে বাজারে ওঠানামার ধরন লক্ষ্য করা গেছে। সকালে সূচকগুলি নিম্নমুখী হলেও, দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং ইতিবাচক অঞ্চলে প্রত্যাবর্তন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। তবে, আইটি খাতের দুর্বলতা বাজারের সামগ্রিক গতিকে কিছুটা প্রভাবিত করেছে। অ্যাকসেঞ্চারের দুর্বল পূর্বাভাস বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতে চাপ সৃষ্টি করেছে, যার প্রভাব ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলির ওপরও পড়েছে।
এদিকে, বৃহত্তর বাজারে স্মলক্যাপ এবং মিডক্যাপ সূচকগুলির উত্থান খুচরো বিনিয়োগকারীদের উৎসাহের প্রতিফলন। এই বিনিয়োগকারীরা সাম্প্রতিক দরপতনের পর ক্রয়ের সুযোগ গ্রহণ করছেন, যা বাজারে একটি ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে সাহায্য করছে।

ওয়াল স্ট্রিটে গত রাতে দেখা ওঠানামা এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাজারে মিশ্র লেনদেন ভারতীয় বাজারের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। বাণিজ্য উত্তেজনা এবং আসন্ন পাল্টা শুল্কের প্রভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করলেও, এফআইআই-দের ক্রয় এবং ফিউচার মার্কেটে তাদের অবস্থান পরিবর্তন বাজারে আশার আলো জ্বালিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে বর্তমান ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকতে পারে, তবে আইটি খাতের দুর্বলতা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এর গতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এফআইআই-দের ক্রয় প্রবণতা এবং খুচরো বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাজারকে সমর্থন দিলেও, আগামী দিনে বাণিজ্য নীতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের গতিবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

ভারতীয় শেয়ার বাজারে শুক্রবার সকালের লেনদেনে সেনসেক্স এবং নিফটি ৫০ (Sensex-Nifty) সামান্য পতনের পর পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ইতিবাচক অঞ্চলে ফিরেছে। আইটি খাতে চাপ থাকলেও, বৃহত্তর বাজারে স্মলক্যাপ এবং মিডক্যাপ সূচকগুলির উত্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। এফআইআই-দের ক্রয় এবং খুচরো বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা বাজারকে শক্তি দিচ্ছে, তবে ভবিষ্যৎ গতিপথ বিশ্ববাজার এবং অর্থনৈতিক নীতির ওপর নির্ভর করবে।