মুম্বই, ১১ সেপ্টেম্বর: অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণে লোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ি কেনা, উচ্চশিক্ষার খরচ চালানো বা জরুরি প্রয়োজন মেটানো—সব ক্ষেত্রেই ঋণ আমাদের আর্থিক সামর্থ্যকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। তবে ঋণ নেওয়ার সময় সাধারণত দুটি বিকল্প সামনে আসে—সিকিউরড (জামানতযুক্ত) ঋণ ও আনসিকিউরড (জামানতবিহীন) ঋণ (Unsecured Loans)। এই দুই ধরনের ঋণের কাজের ধরন আলাদা, তাই কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত তা বুঝে নেওয়া জরুরি।
সিকিউরড ঋণ কী?
সিকিউরড ঋণের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা একটি সম্পদ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জামানত রাখেন। যেমন—বাড়ি, জমি, গাড়ি, সোনার অলঙ্কার বা ফিক্সড ডিপোজিট। ঋণ পরিশোধ না হলে ব্যাংকের সেই জামানত বাজেয়াপ্ত করার অধিকার থাকে। সাধারণত গৃহঋণ, গাড়ির ঋণ, স্বর্ণঋণ, ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ঋণ ইত্যাদি সিকিউরড লোনের অন্তর্ভুক্ত।
আনসিকিউরড ঋণ (Unsecured Loans) কী?
আনসিকিউরড ঋণে কোনো জামানতের প্রয়োজন হয় না। এখানে ব্যাংক আপনার আয়, ক্রেডিট স্কোর ও পরিশোধের সক্ষমতা বিচার করে ঋণ অনুমোদন করে। ব্যক্তিগত ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড এই শ্রেণির মধ্যে পড়ে।
কোন ঋণ কখন নেবেন?
ঋণের পরিমাণ: ছোট অঙ্কের জন্য আনসিকিউরড লোন সহজ, কারণ তা কেবল আয়ের ওপর নির্ভরশীল। বড় অঙ্কের জন্য, যেমন বাড়ি বা গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সিকিউরড লোন সুবিধাজনক।
সুদ ও চার্জ: জামানতযুক্ত ঋণে সুদের হার সাধারণত কম হয়। তবে জামানতবিহীন ঋণে সুদ অনেক বেশি এবং প্রিপেমেন্ট ফি থাকতে পারে।
মেয়াদ: ব্যক্তিগত ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড সাধারণত ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে শোধ করতে হয়। অন্যদিকে হোম লোনের মতো সিকিউরড লোন ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত নেওয়া যায়।
ক্রেডিট স্কোরের প্রভাব: যে কোনো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয়। তবে আনসিকিউরড ঋণে ডিফল্ট করলে প্রভাব আরও গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ: দীর্ঘমেয়াদী দরকারের জন্য, যেমন বাড়ি কেনা, সিকিউরড লোন সবচেয়ে লাভজনক। স্বল্পমেয়াদী দরকারের জন্য, যেমন ছ’মাস থেকে দুই বছরের খরচ, আনসিকিউরড লোন দ্রুত পাওয়া যায়, যদিও এর খরচ বেশি।
জামানতভিত্তিক ঋণে সুদ কম, অঙ্ক বেশি ও মেয়াদ দীর্ঘ পাওয়া যায়, তবে প্রসেসিং সময় বেশি লাগে।
আনসিকিউরড ঋণে সুদ বেশি, অঙ্ক কম এবং আয় ও ক্রেডিট প্রোফাইলের ওপর নির্ভরশীল। তবে এগুলো দ্রুত অনুমোদন হয়।
একসঙ্গে অনেক ঋণ নিলে “ক্রেডিট হাঙ্গার” বলে ধরে নেওয়া হয়, যা স্কোরের ক্ষতি করে। তাই শুধুমাত্র প্রকৃত প্রয়োজনেই আনসিকিউরড ঋণ নিন।
জামানত দেওয়ার সময় সতর্ক হোন। ধরুন, আপনার ১ কোটি টাকার সম্পদ আছে, আর প্রয়োজন মাত্র ৮০ লাখ টাকা। সে ক্ষেত্রে পুরো সম্পদ জামানত না দিয়ে সীমিত অংশ বন্ধক রাখাই ভালো। এতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে বাকি অংশ ব্যবহার করা সহজ হবে।
ঋণ আমাদের আর্থিক জীবনকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, তবে অযথা ঋণ নেওয়া উচিত নয়। সঠিক উদ্দেশ্য, আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিস্তি এবং সময়মতো পরিশোধ—এই তিনটি মেনে চললে ঋণ হবে সহায়ক, বোঝা নয়। নিজের প্রয়োজন ও সামর্থ্য বিচার করে সঠিক ঋণ বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।