নিরাপদ সঞ্চয় করতে চান? জেনে নিন PPF-এর সুদ ও কর সুবিধা

ভারতের সাধারণ মানুষের জন্য সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার যে কয়েকটি স্কিম চালু করেছে, তার মধ্যে পাবলিক…

ppf tax saving investment options

ভারতের সাধারণ মানুষের জন্য সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার যে কয়েকটি স্কিম চালু করেছে, তার মধ্যে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) অন্যতম। দীর্ঘ 15 বছরের লক-ইন পিরিয়ডের এই স্কিমে সুরক্ষিত রিটার্ন এবং কর ছাড় সুবিধা দেওয়া হয়, যা একে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সেভিংস অপশনগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) মূলত 1968 সালে চালু হয়েছিল। এটি এমন একটি স্কিম, যেখানে বিনিয়োগকারী বছরভিত্তিক ন্যূনতম 500 টাকা থেকে সর্বোচ্চ 1.5 লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন।

দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের উপযোগী:
PPF-এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর 15 বছরের লক-ইন পিরিয়ড। এই সময়কালে বিনিয়োগকারীর টাকা সুরক্ষিত থাকে এবং ধাপে ধাপে সুদ যোগ হতে থাকে। একদিকে এই দীর্ঘ সময়কাল বাধ্য করে নিয়মিত সঞ্চয় করতে, অন্যদিকে ভবিষ্যতে একটি বড় ফান্ড তৈরি করতে সাহায্য করে।

   

স্থির সুদের হার:
সরকার প্রতি তিন মাস অন্তর PPF-এর সুদের হার নির্ধারণ করে। বর্তমানে (জুলাই 2024 অনুযায়ী), এই সুদের হার 7.1 শতাংশ। এই হারটি ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা সাধারণ ফিক্সড ডিপোজিটের চেয়ে অনেক বেশি হলেও, শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত ফান্ডের চেয়ে কিছুটা কম। তবে মূল আকর্ষণ হলো, এই সুদটি গ্যারান্টেড এবং বাজারের ওঠানামার উপর নির্ভরশীল নয়। সুদ বার্ষিক ভিত্তিতে কম্পাউন্ড হয়, ফলে দীর্ঘমেয়াদে বড় অঙ্কের অর্থ জমে যায়।

কর সুবিধা:
PPF-এ বিনিয়োগ করলে, সেটি Section 80C অনুযায়ী কর ছাড়ের সুযোগ দেয়। বছরে সর্বোচ্চ 1.5 লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ওপর এই ছাড় পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এখানে জমা হওয়া সুদ এবং ম্যাচিউরিটির সময় প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থটিও সম্পূর্ণ করমুক্ত। ফলে, এই স্কিমটি একাধারে সেভিংস ও কর সাশ্রয়ের সুযোগ এনে দেয়।

লোন ও আংশিক উত্তোলনের সুবিধা:
বিনিয়োগের তৃতীয় বছর থেকে ষষ্ঠ বছরের মধ্যে PPF-এর ওপর ঋণ নেওয়ার সুবিধা রয়েছে। এটি অনেকের কাছে জরুরি সময়ে অর্থের জোগান দেওয়ার জন্য কার্যকর একটি বিকল্প।
ছয় বছর পর বিনিয়োগকারী চাইলে আংশিক টাকা তুলতে পারেন। তবে এখানে কিছু শর্ত থাকে, যা ফান্ডের ব্যালেন্সের নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত সীমিত থাকে।

মেয়াদ শেষের পর বর্ধনের সুযোগ:
১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হলে, বিনিয়োগকারী চাইলে ৫ বছরের জন্য এক্সটেনশন নিতে পারেন। এই এক্সটেনশন একাধিকবার নেওয়া যায়, এবং প্রতিবারই ৫ বছরের জন্য দেওয়া হয়।

Advertisements

কীভাবে PPF অ্যাকাউন্ট খুলবেন?
PPF অ্যাকাউন্ট খোলা খুবই সহজ। দেশের প্রায় সব বড় ব্যাংক এবং পোস্ট অফিসের মাধ্যমে এটি করা যায়।
প্রক্রিয়া:
প্রথমে আপনার সুবিধাজনক কোনো ব্যাংক বা পোস্ট অফিস নির্বাচন করুন।
সেখানে গিয়ে PPF অ্যাকাউন্ট খোলার ফর্ম সংগ্রহ করুন বা অনলাইনে ফর্ম পূরণ করুন (যদি ব্যাংক সেই সুবিধা দেয়)।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন পরিচয়ের প্রমাণ, ঠিকানার প্রমাণ এবং পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দিন।
ন্যূনতম ৫০০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট চালু করুন। বছরে সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে।
অ্যাকাউন্ট খোলার পর একটি পাসবুক দেওয়া হবে, যেখানে আপনার অ্যাকাউন্টের সমস্ত বিবরণ থাকবে।

কার জন্য উপযুক্ত?
PPF বিশেষ করে সেইসব বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত, যারা ঝুঁকিমুক্ত ও সুরক্ষিত বিনিয়োগ চান এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি বড় ফান্ড গড়তে চান। পেনশন, সন্তানের উচ্চশিক্ষা বা ভবিষ্যতের কোনো জরুরি প্রয়োজনে এই ফান্ড খুবই কার্যকর।

জনগণের চাহিদা:
আজকের দিনে যেখানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের উচ্চ-রিটার্ন অফার করা ফান্ড রয়েছে, অনেকেই ঝুঁকির কারণে সেগুলি এড়িয়ে চলেন। এই ক্ষেত্রে PPF একটি নিরাপদ বিকল্প। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। সরকারি গ্যারান্টি, কর ছাড় এবং নিশ্চিত রিটার্নের কারণে PPF দীর্ঘদিন ধরেই আস্থার প্রতীক হয়ে আছে।

বিনিয়োগের জগতে একটি কথা প্রচলিত — “সঞ্চয়ই ভবিষ্যতের সুরক্ষা।” এই প্রবাদটিকে পূর্ণতা দেয় PPF। যাদের ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা কম, যারা দীর্ঘমেয়াদী, ধাপে ধাপে অর্থ সঞ্চয়ের মাধ্যমে একটি নিশ্চিত ফান্ড তৈরি করতে চান, তাদের জন্য PPF নিঃসন্দেহে সেরা বিকল্প। সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মিত বিনিয়োগের মাধ্যমে PPF আপনার ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News