বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI) মঙ্গলবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছে। আগামী ২১ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ‘ভিসিএফ সেটেলমেন্ট স্কিম ২০২৫’, যা চলবে ১৯ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। এই স্কিমের মাধ্যমে মাইগ্রেট করা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড (VCF)-এর তরফে ওয়াইন্ডিং-আপ প্রভিশন সম্পর্কিত লঙ্ঘন মীমাংসার সুযোগ দেওয়া হবে।
সেবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভিসিএফ সেটেলমেন্ট স্কিম ২০২৫-এর উদ্দেশ্য হলো, যেসব ভিসিএফ তাদের স্কিমের লিকুইডেশন পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে পারেনি এবং এখনও অনালিকুইডেটেড ইনভেস্টমেন্ট ধরে রেখেছে, তাদের একটি মীমাংসার সুযোগ দেওয়া। এরা ইতিমধ্যে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (AIF) রেগুলেশনে মাইগ্রেট করেছে।
ভিসিএফ থেকে এআইএফে রূপান্তরের ইতিহাস
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১২ সালের মে মাসে এআইএফ রেগুলেশন প্রবর্তনের পর সেবি ভিসিএফ রেগুলেশন বাতিল করে। এর ফলে, অনেক ভিসিএফ তখন নতুন নিয়ম অনুযায়ী এআইএফ কাঠামোতে স্থানান্তরিত হয়।
তবে বাস্তবে দেখা গেছে, বেশ কিছু ভিসিএফ তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে সব ধরনের বিনিয়োগ লিকুইডেট করতে পারেনি। বিনিয়োগের জটিল প্রকৃতি, বাজার পরিস্থিতি, অথবা অন্যান্য আইনি জটিলতার কারণে এই ফান্ডগুলো তাদের স্কিমের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, সেবি বিভিন্ন ভিসিএফের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রতিনিয়ত অভিযোগ ও আবেদনগুলো বিবেচনা করে এআইএফ রেগুলেশনে বিশেষ একটি রূপান্তর প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করে। এই প্রক্রিয়ায় মাইগ্রেশনের সময়সীমা এবং প্রয়োজনীয় নিয়মাবলীও নির্ধারিত হয়।
এক বছরের অতিরিক্ত সময়সীমা:
ভিসিএফগুলোকে তাদের বিনিয়োগ লিকুইডেট করে স্কিম বন্ধ করার জন্য আরও এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, মাইগ্রেশন সম্পূর্ণ হওয়ার পর, বিনিয়োগকারীদের অনুমতি সাপেক্ষে ‘ডিসলিউশন পিরিয়ড’-এ প্রবেশ করারও সুযোগ রয়েছে।
সেবি জানিয়েছে, মাইগ্রেশনের জন্য চূড়ান্ত তারিখ হলো ২০২৫ সালের ১৯ জুলাই। এর মধ্যে কোনো ভিসিএফ যদি মাইগ্রেশনের আবেদন না করে, তাহলে সেবি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সেবি এক বিবৃতিতে বলেছে,
“মাইগ্রেশনের শেষ তারিখের (১৯ জুলাই, ২০২৫) পরে, সেসব ভিসিএফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাদের স্কিমের লিকুইডেশন পিরিয়ড শেষ হয়েছে কিন্তু এখনও বন্ধ করা হয়নি এবং যারা এখনও অনালিকুইডেটেড ইনভেস্টমেন্ট ধরে রেখেছে, এবং যারা ‘ভিসিএফ সেটেলমেন্ট স্কিম ২০২৫’ এর সুযোগ গ্রহণ করেনি।”
কেন এই স্কিম গুরুত্বপূর্ণ?
ভিসিএফ সেটেলমেন্ট স্কিম ২০২৫ চালু করার মাধ্যমে সেবি মূলত বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়। ভিসিএফগুলোর অব্যাহত বিনিয়োগ এবং স্কিম বন্ধ করতে বিলম্বের কারণে বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই তাদের অর্থ আটকে যেতে দেখে। এতে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি বিনিয়োগকারীদের বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
এছাড়াও, স্কিমটি বাজারে স্বচ্ছতা এবং নিয়ম মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। সেবি বিশ্বাস করে, এই স্কিমের মাধ্যমে ভিসিএফগুলো একটি সহজ, নির্দিষ্ট এবং সময়োপযোগী উপায়ে তাদের বাকি থাকা কার্যক্রম মীমাংসা করতে পারবে।
বোর্ডের অনুমোদন:
গত মাসে সেবির বোর্ড এই প্রস্তাবকে অনুমোদন করেছে। বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে বাজার বিশেষজ্ঞরা স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, সেবির এই পদক্ষেপ ভিসিএফ ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং এক ধরনের নির্দিষ্টতা তৈরি করবে।
সারসংক্ষেপ:
* স্কিমের শুরু: ২১ জুলাই, ২০২৫
* শেষ তারিখ: ১৯ জানুয়ারি, ২০২৬
* মাইগ্রেশনের শেষ তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৫
* মূল উদ্দেশ্য: মাইগ্রেট করা ভিসিএফগুলোর অনালিকুইডেটেড ইনভেস্টমেন্ট নিষ্পত্তির সুযোগ প্রদান।
* সেবির পরবর্তী পদক্ষেপ: মাইগ্রেশনের সময়সীমা শেষের পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
সেবির এই পদক্ষেপ বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। সেবি স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কোনো আপস করা হবে না এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফান্ডগুলোকে তাদের দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে হবে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্কিম কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের ভিসিএফ এবং এআইএফ ইকোসিস্টেম আরও শক্তিশালী হবে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ভারতের বাজারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে।