ফরেনসিক অডিটে আর্থিক জালিয়াতির পর্দাফাঁস SEBI-র

ভারতের মূলধন বাজারে আর্থিক অনিয়ম দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। আধুনিক ও সুচিন্তিত পন্থায় এক শ্রেণির সংস্থা ও প্রোমোটাররা নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখ এড়িয়ে…

SEBI Uncovers Sophisticated Financial Frauds Using Forensic Audits: Chairman T K Pandey

ভারতের মূলধন বাজারে আর্থিক অনিয়ম দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। আধুনিক ও সুচিন্তিত পন্থায় এক শ্রেণির সংস্থা ও প্রোমোটাররা নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখ এড়িয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন—এমনই উদ্বেগজনক তথ্য জানালেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI)-র চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পাণ্ডে। ‘Future Proof Forensics 2025’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “বাজারের অখণ্ডতা রক্ষা করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। কারণ এই অখণ্ডতার উপরই নির্ভর করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং মূলধন গঠনের ধারাবাহিকতা।”

বিভ্রান্তিকর লেনদেন ও অব্যবহৃত ঋণের ফাঁদ:
তুহিন কান্ত পাণ্ডে একাধিক গুরুতর আর্থিক অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরেন, যেগুলি সাম্প্রতিক ফরেনসিক তদন্তে সামনে এসেছে। একটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, একটি তালিকাভুক্ত সংস্থা তাদের সম্পত্তি একটি সহযোগী সংস্থার নামে স্থানান্তর করে। সেই সম্পত্তির ভিত্তিতে সহযোগী সংস্থাটি ঋণ তোলে এবং সেই অর্থ প্রোমোটার সংক্রান্ত একটি প্রতিষ্ঠানের পুরনো ঋণ মেটাতে ব্যবহৃত হয়।
তিনি বলেন, “এই ঘটনায় দেখা গেছে, কোম্পানি নিজে সরাসরি কিছু না করলেও, পরোক্ষভাবে তারা প্রোমোটারদের সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ হানিকর হয়েছে।”

   

চক্রাকারে লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক বিবরণীর বিকৃতি:
আরেকটি ঘটনার প্রসঙ্গে পাণ্ডে বলেন, একটি কোম্পানি এবং একাধিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘সার্কুলার ট্রানজ্যাকশন’ চালানো হয়। এর মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে মুনাফা ও তহবিলের ভ্রান্ত চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়, যাতে বাজারে তাদের ভাবমূর্তি ইতিবাচক থাকে। পরে সেই তহবিল ‘রিলেটেড পার্টি ট্রানজ্যাকশন’-এর আড়ালে আসল মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

প্রেফারেনশিয়াল শেয়ার ইস্যু: বিনিয়োগকারীদের বিপদে ফেলা হচ্ছে!
তিনি আরও বলেন, কিছু ক্ষেত্রে প্রেফারেনশিয়াল শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানিগুলি অর্থ তোলে এবং সেই অর্থ আবার নানা স্তরের মাধ্যমে ওই শেয়ারপ্রাপ্তদের কাছেই ফিরিয়ে দেয়। এই ধরনের স্কিমে জাল ব্যাংক স্টেটমেন্ট পেশ করা হয় এবং নিরীক্ষকরা এই অনিয়ম সঠিকভাবে রিপোর্ট করেন না। তুহিন পাণ্ডে বলেন, “প্রোমোটার বা অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা লক-ইন পিরিয়ড শেষ হওয়ার ঠিক আগেই ভুল তথ্য দিয়ে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে রাখে, যাতে তারা লাভ করে বেরিয়ে যেতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ খুচরো বিনিয়োগকারীরা।”

Advertisements

SEBI-র জোরালো ফরেনসিক নজরদারি ও ভবিষ্যৎ রণনীতি:
তুহিন কান্ত পাণ্ডে স্পষ্ট ভাষায় জানান, “এই ধরনের আর্থিক প্রতারণা বাজারের স্বচ্ছতা ও আস্থার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। আমরা এখন ফরেনসিক টুলস ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই অনিয়ম চিহ্নিত করতে জোর দিচ্ছি। আমাদের টার্গেট শুধু তদন্ত নয়, প্রতিরোধও।”
তিনি বলেন, SEBI ভবিষ্যতে আরও ফরেনসিক অডিট চালিয়ে এই ধরনের অপরাধ চিহ্নিত ও প্রতিরোধে বিশেষ উদ্যোগ নেবে। ফরেনসিক তদন্তের মাধ্যমে জালিয়াতি শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেন এই বার্তাটি গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে লক্ষাধিক খুচরো বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যাঁরা বিভিন্ন আইপিও, প্রেফারেনশিয়াল ইস্যু এবং সেকেন্ডারি মার্কেটের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন। বাজারে কোনো সংস্থার আর্থিক তথ্য যদি ভুয়ো বা বিভ্রান্তিকর হয়, তাহলে সেটি সৎ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপদ ডেকে আনে। সেই দিকটি মাথায় রেখেই SEBI এখন আর শুধু তথ্য যাচাইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং গভীর ফরেনসিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র উন্মোচনের দিকে অগ্রসর হয়েছে।

SEBI চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য ও পদক্ষেপ বাজারে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি ধারাবাহিক ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করে, তবে আগামী দিনে বাজার আরও স্বচ্ছ, সুরক্ষিত এবং বিনিয়োগবান্ধব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।