HomeBusinessসেবির কড়া নজরদারিতে ব্লুস্মার্ট, ফরেনসিক তদন্তে বড় পদক্ষেপ

সেবির কড়া নজরদারিতে ব্লুস্মার্ট, ফরেনসিক তদন্তে বড় পদক্ষেপ

- Advertisement -

ভারতের ইলেকট্রিক ট্যাক্সি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ব্লুস্মার্ট (BluSmart) বর্তমানে এক গভীর আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান গ্রান্ট থরনটনকে (Grant Thornton) সংস্থাটির আর্থিক কার্যক্রমের ফরেনসিক অডিট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI)–এর একটি তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

SEBI সম্প্রতি ব্লুস্মার্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অনমোল জাগ্গিকে (Anmol Jaggi) সিকিউরিটিজ বাজারে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কোম্পানির তহবিল অন্যত্র সরিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত খরচে ব্যবহার করেছেন। এই অভিযোগের পর ব্লুস্মার্টের আর্থিক পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা কোম্পানির ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

   

সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ব্লুস্মার্টের আর্থিক অবস্থা এখন উদ্বেগজনক। তাই কোম্পানির নগদ লেনদেন ও তহবিল ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখার জন্য গ্রান্ট থরনটনকে আনা হয়েছে। একজন অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা বলেন, “কোম্পানির নগদ প্রবাহের চিত্র অত্যন্ত চিন্তাজনক।” এর ফলে সম্ভাব্য আর্থিক জালিয়াতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ব্লুস্মার্ট ভারতের ইলেকট্রিক মোবিলিটি সেক্টরে উবার ও ওলার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। বর্তমানে দিল্লি, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুতে ৮,০০০টিরও বেশি ইলেকট্রিক ক্যাব পরিচালনা করে ব্লুস্মার্ট। ২০২৩ সালে শুধুমাত্র দিল্লিতেই ব্লুস্মার্টের মার্কেট শেয়ার ছিল ৯ শতাংশ। পাশাপাশি সংস্থাটি ব্যাপক ইভি চার্জিং পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে।

কিন্তু এই আর্থিক কেলেঙ্কারি তাদের সাফল্যকে ছায়াচ্ছন্ন করে দিয়েছে। SEBI-এর তদন্তে উঠে এসেছে, অনমোল জাগ্গি সহ-প্রতিষ্ঠিত আরেকটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনসোল ইঞ্জিনিয়ারিং (Gensol Engineering)-এর সঙ্গে এই দুর্নীতির যোগসূত্র রয়েছে। ব্লুস্মার্টকে ইলেকট্রিক গাড়ি লিজ দেওয়ার জন্য জেনসোল ৯৭৮ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছিল ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন সংস্থা (IREDA) এবং পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন (PFC) থেকে।

ঋণ পাওয়ার কথা ছিল ৬,৪০০টি ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার জন্য। তবে কেনা হয়েছে মাত্র ৪,৭০৪টি গাড়ি। বাকি ২৬২ কোটি টাকা ব্যক্তিগত খাতে ব্যয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্তে জানা গেছে, এই টাকা দিয়ে বিলাসবহুল বাড়ি কেনা, দামী ভোগ্যপণ্য কেনা এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।

এই কেলেঙ্কারির জেরে ব্লুস্মার্টের শীর্ষস্থানীয় একাধিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। কোম্পানি সাময়িকভাবে রাইড বুকিং পরিষেবাও বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী অ্যাপে জমা রাখা ব্যালান্স ব্যবহার করতে পারছেন না। যদিও ব্লুস্মার্ট আশ্বাস দিয়েছে যে পরিষেবা আবার চালু হবে, এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

ব্লুস্মার্টে বিনিয়োগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল BP Ventures, যা ব্রিটিশ তেল সংস্থা BP-র একটি সহ-প্রতিষ্ঠান। এখনও পর্যন্ত তারা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে এই নীরবতা কোম্পানির ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে।

গ্রান্ট থরনটনের ফরেনসিক অডিটের ফলাফলই ঠিক করবে ব্লুস্মার্টের ভবিষ্যৎ পথ। যদি দুর্নীতির প্রমাণ মেলে, তবে কোম্পানিকে আইনি ও আর্থিক দিক থেকে বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। অন্যদিকে, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে যদি ব্লুস্মার্ট নিজেকে দোষমুক্ত প্রমাণ করতে পারে, তাহলে হয়তো সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা কিছুটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

ব্লুস্মার্টের এই কেলেঙ্কারি শুধু একটি কোম্পানির সমস্যা নয়, বরং ভারতের নবীন ইলেকট্রিক মোবিলিটি উদ্যোগগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের বহিঃপ্রকাশ। এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সাধারণ জনগণ এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় থাকে।

- Advertisement -
Business Desk
Business Desk
Stay informed about the latest business news and updates from Kolkata and West Bengal on Kolkata 24×7
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular