মিসড শেয়ার ট্রান্সফারের জন্য SEBI-র নতুন সময়সীমা

শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য এক বড় স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে ভারতের শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI)। সংস্থাটি সম্প্রতি ঘোষণা…

SEBI New 2025-2026 Deadline for Missed Physical Share Transfers

শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য এক বড় স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে ভারতের শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI)। সংস্থাটি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, ২০২৫ সালের ৭ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসের একটি বিশেষ উইন্ডো চালু করা হবে, যেখানে শেয়ার ট্রান্সফার ডিড পুনরায় দাখিল করা যাবে।

Advertisements

এই সুবিধা শুধুমাত্র সেই সমস্ত শেয়ারের জন্য প্রযোজ্য, যা ২০১৯ সালের ১ এপ্রিলের আগে শারীরিকভাবে (ফিজিকাল ফর্মে) ট্রান্সফারের জন্য জমা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ত্রুটি বা ঘাটতির কারণে সেই সময় তা প্রত্যাখ্যাত বা ফেরত দেওয়া হয়েছিল।

   

SEBI জানিয়েছে, এর আগের ডেডলাইন ছিল ২০২১ সালের ৩১ মার্চ। কিন্তু শেয়ারহোল্ডার, রেজিস্ট্রারস অ্যান্ড ট্রান্সফার এজেন্টস (RTAs) এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির কাছ থেকে একাধিক বার অনুরোধ আসার পর, SEBI বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে আলোচনা করে এই এককালীন বিশেষ সুযোগের ঘোষণা করেছে। লক্ষ্য একটাই — বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং বিনিয়োগের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা।

এই ছয় মাসের বিশেষ সময়কালে সমস্ত পুনরায় দাখিল করা শেয়ার (যেগুলি ইতিমধ্যেই RTAs বা কোম্পানির কাছে মুলতুবি আছে, সেগুলিও অন্তর্ভুক্ত) শুধুমাত্র ডিম্যাট (Dematerialised) ফর্মেই প্রক্রিয়া করা হবে। অর্থাৎ, এখন আর শারীরিক শেয়ারের লেনদেন বা হস্তান্তর হবে না, বরং ডিজিটাল শেয়ারের রূপান্তর ও স্থানান্তরই অনুমোদিত হবে।

SEBI আরও জানিয়েছে, প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং RTAs কে অবশ্যই সমস্ত প্রযোজ্য নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং প্রক্রিয়াটিকে যথাসম্ভব স্বচ্ছ ও বিনিয়োগকারী-বান্ধব করতে হবে।

দুই মাস অন্তর প্রচার বাধ্যতামূলক:
SEBI নির্দেশ দিয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জ, RTAs এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতি দুই মাস অন্তর এই বিশেষ উইন্ডো সম্পর্কিত তথ্য প্রিন্ট মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে, যাতে সম্ভাব্যভাবে প্রভাবিত সব শেয়ারহোল্ডারের কাছে বার্তা পৌঁছানো যায়।

তাদেরকে এই পুনরায় দাখিল করা ট্রান্সফারের জন্য বিশেষ টিম গঠন করতে হবে। পাশাপাশি, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কতটা যোগাযোগ হয়েছে এবং কতগুলো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য প্রতিমাসে SEBI-র কাছে রিপোর্ট আকারে জমা দিতে হবে।

ডিজিটাল মালিকানা বৃদ্ধির লক্ষ্য:
শারীরিক শেয়ার পদ্ধতি থেকে ধীরে ধীরে ডিজিটাল মালিকানার দিকে অগ্রসর হওয়াই SEBI-র মূল লক্ষ্য। এর ফলে শেয়ার লেনদেনের জটিলতা কমবে, ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুত ও নিরাপদ হবে।

SEBI এর আগেও একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বাজারের আধুনিকীকরণে জোর দিয়েছে। এই নতুন উদ্যোগ তারই অংশ।

কমন কন্ট্র্যাক্ট নোট (CCN) ও VWAP চালু:
এর পাশাপাশি, SEBI একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে। ২০২৫ সালের ২৭ জুন থেকে একটি নতুন কমন কন্ট্র্যাক্ট নোট (CCN) চালু হবে, যেখানে সিঙ্গেল ভলিউম-ওয়েটেড অ্যাভারেজ প্রাইস (VWAP) ব্যবহৃত হবে।

বর্তমানে, ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা (বড় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান) এক্সচেঞ্জভিত্তিক একাধিক ট্রেড কনফার্মেশন পান। এতে রিকনসিলিয়েশন এবং সেটেলমেন্টে সমস্যা দেখা দেয়। নতুন CCN ব্যবস্থায় একটিমাত্র কনফার্মেশনে সমস্ত লেনদেনের গড় দাম দেখানো হবে। এর ফলে পোস্ট-ট্রেড প্রসেসিং সহজ হবে এবং বাজার অংশগ্রহণকারীদের জন্য কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা বাড়বে।

এই পরিবর্তনটি ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের প্রশাসনিক ঝামেলা কমিয়ে দেবে এবং লেনদেনের সময় ও খরচ বাঁচাবে। SEBI আশা করছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতীয় পুঁজিবাজারে আস্থা আরও বাড়বে এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করবে।

মোটের ওপর, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ডিজিটালাইজেশনকে প্রাধান্য দিয়ে SEBI যে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা ভারতের শেয়ারবাজারের জন্য এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। একদিকে যেমন পুরনো শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বড় সুবিধা এসেছে, অন্যদিকে বাজারের ভবিষ্যৎ আরও সুসংগঠিত ও নিরাপদ হচ্ছে।

SEBI-র এই ঘোষণার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি এবং আশার আলো দেখা দিয়েছে। যারা আগে শেয়ার ট্রান্সফার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, তারা এখন নতুন করে একটি সুযোগ পেতে চলেছেন, যা তাদের বিনিয়োগের মূল্য সুরক্ষিত রাখবে।