পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে সেবির নয়া উদ্যোগ

ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI), স্বার্থের সংঘাত সম্পর্কিত বিষয়গুলির মোকাবিলায় যথাযথ অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও প্রকাশ কাঠামো রয়েছে বলে জানিয়েছে…

SEBI Urges CFOs to Slash Financial Results-Annual Report Time Gap

ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI), স্বার্থের সংঘাত সম্পর্কিত বিষয়গুলির মোকাবিলায় যথাযথ অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও প্রকাশ কাঠামো রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ব্যবস্থাপনার আরও দৃঢ়ীকরণের লক্ষ্যে, সেবি একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে বলে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় জানালেন অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি।

স্বার্থের সংঘাত ও প্রকাশ কাঠামোতে সংস্কার:
রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “সেবি তার সদস্য ও কর্মকর্তাদের স্বার্থের সংঘাত, দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার বিষয়ে আরও শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে।”
এই কমিটি সেবির বর্তমান নীতিমালার পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করবে। কমিটিতে সাংবিধানিক, সরকারি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বেসরকারি খাত ও একাডেমিয়া থেকে আসা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

   

নতুন চেয়ারম্যানের অধীনে প্রথম বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত:
সেবির নতুন চেয়ারপারসন তুহিন কান্ত পাণ্ডের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম বোর্ড মিটিংয়ে এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মার্চ মাসে। বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কমিটি তিন মাসের মধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দেবে এবং সেবির বোর্ড সেই সুপারিশগুলি বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
কমিটির কাজ হবে সেবির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, বিনিয়োগ ও অন্যান্য আর্থিক দায়-দায়িত্ব সংক্রান্ত স্বার্থের সংঘাতের নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

জনস্বার্থে স্বচ্ছতা বাড়ানোর ঘোষণা:
সেবির নতুন চেয়ারপারসন তুহিন কান্ত পাণ্ডে বলেছেন, “আমরা নিশ্চিত করব যে বোর্ডের কোনো সদস্যের স্বার্থের সংঘাত থাকলে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াবে।”
তিনি আরও জানান, এ ধরনের তথ্য স্বচ্ছতার স্বার্থে ও প্রশাসনিক বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার্থে প্রকাশযোগ্য হবে। এই পদক্ষেপ সেবিকে আরও জবাবদিহিমূলক এবং নৈতিক দৃষ্টিকোণে কার্যকর সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।

সেবির অভ্যন্তরীণ কাঠামো যথাযথ: সরকার:
রাজ্যসভায় এক প্রশ্নে, সাম্প্রতিক কিছু অভিযোগ সত্ত্বেও সেবির বাজারে প্রভাব বা স্থিতিশীলতা সংক্রান্ত কোনো মূল্যায়ন হয়েছে কি না এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রক থেকে সেবির নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তনের সুপারিশ করা হবে কি না, জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি বলেন, “সেবির কর্মচারীদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলি সংস্থার অভ্যন্তরীণ নিয়ম ও শাসন কাঠামোর মাধ্যমে সমাধান করা হয়।”
তিনি এও বলেন, মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সেবির নেতৃত্বে পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, কারণ এটি একটি স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা।

Advertisements

বাজারে আস্থা ফেরানোর পদক্ষেপ:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। সেবি এই নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে পুনরায় প্রমাণ করতে চায় যে সংস্থার অভ্যন্তরীণ নীতি ও সদস্যদের আচরণে কোনো পক্ষপাতিত্ব বা স্বার্থের সংঘাত নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে। তারা বলেন, “বিনিয়োগকারীরা তখনই আত্মবিশ্বাসী হন, যখন তাঁরা নিশ্চিত থাকেন যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বচ্ছভাবে কাজ করছে এবং অভ্যন্তরীণ স্বার্থবিরোধী আচরণ কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”

ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি:
কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর, সেবি তার পরিচালন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। নতুন প্রকাশ কাঠামো অনুসারে, বোর্ড সদস্যদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করে জমা দিতে হতে পারে।

পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে এ ধরনের পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যখন বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন বোর্ড সদস্যদের স্বার্থের সংঘাত থেকে মুক্ত থাকা অত্যাবশ্যক।
এই পদক্ষেপগুলি শুধু সেবির অভ্যন্তরীণ নীতিতে পরিবর্তন আনবে না, বরং দেশের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রক পরিবেশকেও আরও স্বচ্ছ ও গণমুখী করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।