জেনসোলের বিরুদ্ধে কর্পোরেট দুর্নীতির অভিযোগে সেবির কড়া বার্তা

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI) বুধবার একটি চূড়ান্ত আদেশে জেনসোল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং কোম্পানির প্রাক্তন শীর্ষ নির্বাহী অনমোল সিং জাগ্গি…

SEBI Confirms Ban On Gensol, Jaggi Brothers Over Fund Diversion Allegations

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI) বুধবার একটি চূড়ান্ত আদেশে জেনসোল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এবং কোম্পানির প্রাক্তন শীর্ষ নির্বাহী অনমোল সিং জাগ্গি ও পুনিত সিং জাগ্গিকে শেয়ারবাজার থেকে নিষিদ্ধ রাখার অন্তর্বর্তী আদেশ বহাল রাখল। মূলত কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ এবং কর্পোরেট প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়ম লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ:
সেবির বক্তব্য অনুযায়ী, জেনসোল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ঋণের অর্থ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন কোম্পানির প্রোমোটার ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাগ্গি ভাইয়েরা। এতে স্পষ্টভাবে কর্পোরেট প্রশাসনের গুরুতর ব্যর্থতা এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়েছে। একই সঙ্গে তারা ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলিকে ভুয়ো তথ্য দিয়ে প্রতারিত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

   

এপ্রিলে প্রকাশিত একটি অন্তর্বর্তী আদেশে সেবি জানিয়েছিল, কোম্পানির আর্থিক লেনদেন এবং ব্যালেন্স শিটে একাধিক অসংগতি পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে তদন্ত শুরু হয় এবং একটি ফরেনসিক অডিটও শুরু হয়েছে, যার চূড়ান্ত ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি।

ব্লু-স্মার্ট সংস্থার প্রভাব:
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত জাগ্গি ভাইয়েরা ইলেকট্রিক রাইড হেইলিং সংস্থা ব্লু-স্মার্ট মোবিলিটিরও সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই সংস্থাটি সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যে তাদের পরিষেবা বিস্তৃত করছে। যদিও এই মামলার সঙ্গে ব্লু-স্মার্টের সরাসরি যোগ নেই, তবে প্রোমোটারদের অনৈতিক আর্থিক কার্যকলাপ সংস্থার ভাবমূর্তিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অর্থ আদালতের পর্যবেক্ষণে জেনসোল:
বর্তমানে জেনসোল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি কোর্ট নিযুক্ত রেজলিউশন প্রফেশনালের তত্ত্বাবধানে দেউলিয়া পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আদালতের নির্দেশে কোম্পানির সমস্ত আর্থিক নথিপত্র তদন্তাধীন। এই প্রেক্ষাপটে সেবির এই আদেশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সেবির পর্যবেক্ষণ:
সেবির হোল টাইম মেম্বার কমলেশ সি বর্ষণী তাঁর আদেশে বলেন,  “জেনসোলের অর্থ আত্মসাৎ ও তহবিলের অপব্যবহারের বিষয়ে যেসব প্রাথমিক তথ্য ও প্রমাণ উঠে এসেছে, সেগুলি অভিযুক্তরা যথাযথভাবে খণ্ডন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফরেনসিক অডিট এখনও চলছে এবং চূড়ান্ত তথ্য আসার পর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।”
তিনি আরও জানান, “এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী আদেশে যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। বরং তদন্ত যতদিন চলছে, ততদিন এই নিষেধাজ্ঞাগুলি বহাল রাখা হবে।”

Advertisements

নিষেধাজ্ঞার পরিধি:
চূড়ান্ত আদেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে—
অনমোল সিং জাগ্গি ও পুনিত সিং জাগ্গি, উভয়কেই শেয়ারবাজারে লেনদেন থেকে নিষিদ্ধ রাখা হবে।
তারা জেনসোল বা তার কোনও সহযোগী প্রতিষ্ঠানে ডিরেক্টর বা কী ম্যানেজারিয়াল পদে থাকতেও পারবেন না।
জেনসোল সংক্রান্ত নির্দেশগুলি আদালতের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বা ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল থাকবে।

বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া:
অর্থনীতি বিশ্লেষক শুভ্র সেনগুপ্ত বলেন, “যেকোনও তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কর্পোরেট প্রশাসনের স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের তহবিল আত্মসাৎ বা রেটিং এজেন্সিকে মিথ্যা তথ্য প্রদান গুরুতর অপরাধ এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙে দেয়। সেবির এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।”

আগামী দিনের দিকনির্দেশ:
ফরেনসিক অডিট রিপোর্ট এবং চূড়ান্ত আদালতের রায়ই নির্ধারণ করবে অভিযুক্তদের ভবিষ্যৎ। তবে এখনই শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন এবং প্রোমোটারদের সক্রিয় ভূমিকা নিষিদ্ধ থাকছে।

জেনসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কেলেঙ্কারি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—ভারতীয় কর্পোরেট ক্ষেত্রে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেবির কঠোর মনোভাব বাজারে সুশাসন বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলেই আশা করা যায়।