শিয়ালদহ-লালগোলা (Sealdah Lalgola) রুটে ট্রেন চালানো নিয়ে তীব্র সমস্যায় পড়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ২২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে নিয়ম অনুযায়ী মেমু (MEMU) ট্রেন চালানো বাধ্যতামূলক হলেও, পর্যাপ্ত মেমু রেকের অভাবে কার্যত হাঁসফাঁস করছে শিয়ালদহ ডিভিশন।
নিয়মের খাঁড়া ও রেলের অস্বস্তি
রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী, যেকোনও ১৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে লোকাল ট্রেন চালাতে গেলে সেই ট্রেনে যাত্রীদের জন্য শৌচালয় থাকা আবশ্যক। সাধারণত EMU (Electric Multiple Unit) রেকগুলিতে শৌচালয়ের ব্যবস্থা না থাকায়, এই ধরনের দীর্ঘ রুটে সেগুলো চালানো নিয়মবিরুদ্ধ। অথচ, শিয়ালদা-লালগোলা রুটে EMU ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল রেল, কারণ হাতে নেই পর্যাপ্ত MEMU রেক।
কৃষ্ণনগরে ‘বাথরুম’ বিরতি? উঠেছিল আপত্তির ঝড়
যাত্রীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে রেলের পরিকল্পনা ছিল, কৃষ্ণনগর স্টেশনে ট্রেন আধঘণ্টা দাঁড় করানো হবে যাতে যাত্রীরা শৌচকাজ সারতে পারেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা নিয়ে ওঠে প্রবল আপত্তি। গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন কৃষ্ণনগরের একটি প্ল্যাটফর্ম আধঘণ্টা দখল করে রাখা কীভাবে সম্ভব, প্রশ্ন তোলে অপারেশনাল বিভাগ। অন্যদিকে যাত্রীদের পক্ষ থেকেও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়, কারণ দীর্ঘ যাত্রার মাঝে এই ধরনের বিরতি অপ্রত্যাশিত এবং সময় নষ্টের কারণ।
EMUs বাতিল, আবার MEMU-তেই ভরসা – এবার শুরু নতুন সমস্যার
শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা বাতিল করে আবারও MEMU ট্রেনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিয়ালদহ ডিভিশন। কিন্তু সমস্যা এখানেই—ডিভিশনের হাতে এখন পর্যাপ্ত MEMU রেক নেই। উত্তরপ্রদেশে কুম্ভ মেলার জন্য পাঠানো হয়েছে চারটি রেক। একটি রেক শিয়ালদহ ডিভিশনে সংস্কারের কারণে ব্যবহারযোগ্য নয়। একটি রেক শিয়ালদহ-সিউড়ি রুটে চালানো হচ্ছে। এছাড়াও শিয়ালদহ-গোড্ডা রুটে ব্যবহৃত হচ্ছে দুটি MEMU রেক।
এই পরিস্থিতিতে শিয়ালদা-লালগোলা রুটে নতুন করে MEMU ট্রেন চালানোর জন্য রেক পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। রেলকর্তাদের বক্তব্য, “যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা বজায় রেখে রেল পরিষেবা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু রেকের সঙ্কটে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
রেলের মুখে বেকায়দা স্বীকারোক্তি
শিয়ালদহ ডিভিশনের এক আধিকারিক স্বীকার করেছেন, “এখন আমাদের হাতে MEMU রেক নেই বললেই চলে। বাইরে পাঠানো হয়েছে কিছু রেক, আবার কিছু রেক সংস্কারের মধ্যে রয়েছে। এমতাবস্থায় নতুন করে MEMU ট্রেন চালানো অত্যন্ত কঠিন।” এই অবস্থায় বিকল্প কোনও পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে।
যাত্রীদের কপালে দুর্ভোগ
এই রুটের হাজার হাজার নিত্যযাত্রী, যাঁদের মধ্যে বড় অংশ ছাত্র, চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ী, তাঁরা পড়েছেন ঘোর বিপাকে। প্রায় ২২৭ কিলোমিটারের এই দীর্ঘ রুটে যদি নিয়ম অনুযায়ী ট্রেন পরিষেবা না পাওয়া যায়, তবে সাধারণ মানুষের যাতায়াত কার্যত অচল হয়ে পড়বে।
রেলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা এবং পরিষেবা পরিচালনার জটিলতা আরও একবার প্রকাশ্যে এসেছে শিয়ালদা-লালগোলা রুটে ট্রেন চালানোর সমস্যার মধ্য দিয়ে। এখন দেখার বিষয়, রেল কীভাবে এই সংকটের সমাধান করে এবং কবে থেকে স্বাভাবিক ট্রেন পরিষেবা পুনরায় চালু করতে পারে। আপাতত যাত্রীদের কপালে শুধুই দুর্ভোগ আর অনিশ্চয়তা।