SCSS To Post Office Savings: জীবন নানা চমক ও অনিশ্চয়তায় ভরা। কখন কোন পরিস্থিতি আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে, তা আগে থেকে বোঝা মুশকিল। অনেক সময় আমরা মনে করি, সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, ঠিক তখনই জীবনের বাঁকে এসে দাঁড়ায় বড় কোনো আর্থিক বা পারিবারিক সংকট। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য, যাদের আয় নির্দিষ্ট এবং সীমিত, এমন সময়ে একটি জরুরি ফান্ড বা এমার্জেন্সি ফান্ড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এমার্জেন্সি ফান্ড হলো এমন একটি নির্দিষ্ট অর্থের সংরক্ষণ, যা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া জরুরি আর্থিক চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন—হঠাৎ করে অসুস্থতা, বড় ধরনের চিকিৎসার খরচ, দুর্ঘটনা বা পারিবারিক কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যয়। এই ফান্ড আপনাকে ঋণ নেওয়া বা উচ্চ সুদের ঋণের ফাঁদে না পড়েই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
বিশেষ করে ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের জন্য এমার্জেন্সি ফান্ড গঠন করা আরও জরুরি। কারণ এই বয়সে নিয়মিত আয় না থাকায়, যেকোনো অনিশ্চয়তা মানসিক চাপ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের মাধ্যমে এমন ফান্ড গঠন করার দিকেই জোর দিতে হবে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম তুলে ধরা হলো, যা জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য উপযোগী।
১. ন্যাশনাল পেনশন স্কিম (NPS)
ন্যাশনাল পেনশন স্কিম বা এনপিএস হলো সরকার-সমর্থিত একটি পেনশন স্কিম, যা প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। অবসরোত্তর সময়ে নিয়মিত আয়ের উৎস হিসেবে এটি অত্যন্ত কার্যকর। এই স্কিমের মাধ্যমে সীমিত পরিমাণে করমুক্ত অর্থও তোলা যায়, বিশেষ করে চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে। এছাড়াও, এটি ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের ধারা ৮০সি অনুযায়ী কর ছাড় এবং অতিরিক্ত ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ৮০সিসিডি (১বি) ধারা অনুযায়ী অতিরিক্ত কর সুবিধা দেয়।
২. সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS)
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পটি একটি নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ বিকল্প। বর্তমানে এই স্কিমে বার্ষিক ৮.২% হারে সুদ প্রদান করা হচ্ছে, যা প্রচলিত সঞ্চয় হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি। ৫ বছর মেয়াদি এই স্কিমের মেয়াদ শেষে তা পুনর্নবীকরণও করা যায়। নিয়মিত ও স্থিতিশীল আয়ের জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট পছন্দ।
৩. পোস্ট অফিস মান্থলি ইনকাম স্কিম (POMIS)
এই সরকারি প্রকল্পে এককালীন টাকা বিনিয়োগ করে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে সুদ পাওয়া যায়। বর্তমানে এই স্কিমে ৭.৪% হারে মাসিক সুদ প্রদান করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ৫ বছর, যার শেষে মূল টাকা তোলা বা পুনরায় বিনিয়োগ করা যায়। প্রবীণদের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য ও সুনিশ্চিত আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত।
৪. আরবিআই বন্ড
ভারত সরকারের সমর্থিত এই বন্ডগুলো প্রবীণদের জন্য একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম। বর্তমানে এই বন্ডে বার্ষিক ৮.০৫% হারে সুদ প্রদান করা হয়, যা প্রতি ছয় মাসে একবার করে জমা হয়। এই বন্ডের লক-ইন পিরিয়ড ৭ বছর হলেও প্রবীণ নাগরিকরা ৪ বছর পর অর্থ তোলার সুযোগ পান, যা এটিকে আরও নমনীয় করে তোলে।
৫. ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম (ELSS)
যারা ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক এবং বেশি রিটার্ন পেতে চান, তাদের জন্য ELSS একটি উপযুক্ত পছন্দ হতে পারে। এটি একটি মিউচুয়াল ফান্ড ভিত্তিক কর সাশ্রয়কারী বিনিয়োগ প্রকল্প, যা বাজারভিত্তিক আয় প্রদান করে। ELSS-এ তিন বছরের লক-ইন পিরিয়ড থাকলেও এটি অন্যান্য কর-সাশ্রয়ী প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। ধারা ৮০সি অনুযায়ী বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায়।
জীবনের শেষ অধ্যায়ে যখন নিয়মিত আয়ের উৎস কমে যায়, তখন একটি শক্ত আর্থিক ভিত্তি এবং সঞ্চয় আপনাকে মানসিক স্বস্তি দেয়। তাই আজ থেকেই প্রবীণ নাগরিকদের উচিত এমার্জেন্সি ফান্ড গঠন শুরু করা। উপরোক্ত বিনিয়োগ বিকল্পগুলো সুরক্ষিত, লাভজনক এবং প্রবীণদের উপযোগী হওয়ায় এগুলোতে ধীরে ধীরে সঞ্চয় গড়ে তোলা বুদ্ধিমানের কাজ।
জীবনের অনিশ্চয়তাকে মোকাবিলা করতে আর্থিক প্রস্তুতি এবং সঠিক পরিকল্পনা অপরিহার্য। একটি সুসংগঠিত এমার্জেন্সি ফান্ড আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য রক্ষা কবচের কাজ করতে পারে। এখনই সময় — নিজেকে ও নিজের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ রাখার।