SCSS-এ কারা যোগ্য? কিভাবে অ্যাকাউন্ট খুলবেন? জেনে নিন বিস্তারিত

ভারত সরকারের একটি জনপ্রিয় সঞ্চয় প্রকল্প হলো সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS)। ২০০৪ সালে চালু হওয়া এই স্কিমটি দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদানের…

Senior Citizen Savings Scheme

ভারত সরকারের একটি জনপ্রিয় সঞ্চয় প্রকল্প হলো সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS)। ২০০৪ সালে চালু হওয়া এই স্কিমটি দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। অবসরোত্তর জীবনে নিয়মিত আয়ের প্রয়োজন মেটাতে এই স্কিম এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ২০২৫ সালের ১২ জুন অনুযায়ী, এই স্কিমে বার্ষিক ৮.২ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করা হচ্ছে, যা প্রতি তিন মাস অন্তর পরিশোধ করা হয়।

যোগ্যতা (Eligibility):
SCSS অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা রয়েছে:

   
  • যেকোনো ব্যক্তি যাঁর বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি, তিনি পোস্ট অফিস বা অনুমোদিত ব্যাঙ্কে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
  • অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মীরা যদি ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সের হন (কিন্তু ৬০ বছরের নিচে), তবে অবসরকালীন সুবিধা পাওয়ার এক মাসের মধ্যে বিনিয়োগ করতে হবে।
  • প্রতিরক্ষা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং বিনিয়োগের নিয়ম একই থাকবে।
  • অ্যাকাউন্ট ব্যক্তিগতভাবে বা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে খোলা যেতে পারে। তবে যৌথ অ্যাকাউন্টে জমাকৃত সম্পূর্ণ টাকা প্রথম অ্যাকাউন্টধারীর নামে গণ্য হবে।
  • NRI (অববাসী ভারতীয়) এবং HUF (হিন্দু অখণ্ড পরিবার) এই স্কিমে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না।
  • PAN কার্ড ও আধার নম্বর জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

বৈশিষ্ট্য ও সুদের হার:

  • এই স্কিমে বিনিয়োগের ন্যূনতম পরিমাণ ১,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • ২০২৫ সালের জুন অনুযায়ী SCSS-এ বার্ষিক ৮.২% হারে সুদ প্রদান করা হয়, যা প্রতি ত্রৈমাসিকে অর্থাৎ এপ্রিল ১, জুলাই ১, অক্টোবর ১ এবং জানুয়ারি ১ তারিখে পরিশোধ করা হয়।
  • সুদের হার প্রতি তিন মাস অন্তর পর্যালোচনা করা হয় এবং তা বাজার পরিস্থিতি ও মুদ্রাস্ফীতির উপর নির্ভর করে।
  • প্রকল্পের মেয়াদ ৫ বছর, তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আরও ৩ বছর পর্যন্ত একবার বাড়ানো যায়। এক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।
  • অ্যাকাউন্ট খোলার এক বছর পর প্রিম্যাচিওর (মেয়াদপূর্তির আগে) টাকা তোলা সম্ভব।

কর সংক্রান্ত দিক (Taxability):

  • SCSS-এ বিনিয়োগ করলে আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ধারা ৮০সি অনুযায়ী প্রতি বছর সর্বোচ্চ ₹১.৫ লক্ষ পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায়।
  • যদিও মূল বিনিয়োগে কর ছাড় পাওয়া যায়, এই প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত সুদ করযোগ্য।
  • যদি এক বছরে সুদের পরিমাণ ₹৫০,০০০-এর বেশি হয়, তাহলে TDS কাটা হয়।
  • তবে, ধারা ৮০টিটিবি অনুসারে প্রবীণ নাগরিকরা সুদের আয় থেকে সর্বোচ্চ ₹৫০,০০০ পর্যন্ত কর ছাড় দাবি করতে পারেন।

স্থানান্তরযোগ্যতা:

Advertisements

এই স্কিমের একটি বড় সুবিধা হলো, SCSS অ্যাকাউন্টটি পোস্ট অফিস থেকে ব্যাংকে এবং ব্যাংক থেকে পোস্ট অফিসে স্থানান্তরযোগ্য।
এছাড়াও, এটি ভারতের মধ্যে যেকোনো স্থানে স্থানান্তর করা যেতে পারে, যা অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক।

সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS) প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও লাভজনক সঞ্চয় বিকল্প। এটি একদিকে যেমন স্থায়ী সুদের হার ও নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা দেয়, তেমনি কর সুবিধাও প্রদান করে। যাঁরা অবসরের পর একটি স্থিতিশীল আয় চান, তাঁদের জন্য SCSS একটি উপযুক্ত পছন্দ হতে পারে। সুদের হার অন্যান্য সঞ্চয় প্রকল্পের তুলনায় অনেকটাই বেশি হওয়ায় এটি প্রবীণদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

তবে বিনিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট নিয়ম ও শর্তাবলী ভালোভাবে বোঝা এবং প্রয়োজনে আর্থিক পরামর্শদাতার সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ সুদ করযোগ্য এবং বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ, ফলে পরিকল্পনা করে বিনিয়োগ করাই উত্তম।

সার্বিকভাবে বলা যায়, SCSS প্রবীণদের সম্মানজনক ও সুরক্ষিত অবসর জীবনের দিকে এক কার্যকরী পদক্ষেপ।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News