শহরায়ণ ও পরিবেশ রক্ষায় স্মার্ট সিটি মিশনে জোর বাড়ানোর আহ্বান এসবিআইয়ের

SBI Smart City Mission: শহরায়ণ ও পরিবেশ সংরক্ষণকে একত্রিত করে টেকসই উন্নয়নের পথে এগোনোর জন্য ভারত সরকারকে স্মার্ট সিটিজ মিশন ও AMRUT (Atal Mission for…

SBI Smart City Mission

SBI Smart City Mission: শহরায়ণ ও পরিবেশ সংরক্ষণকে একত্রিত করে টেকসই উন্নয়নের পথে এগোনোর জন্য ভারত সরকারকে স্মার্ট সিটিজ মিশন ও AMRUT (Atal Mission for Rejuvenation and Urban Transformation)-এর মতো কর্মসূচিগুলিতে আরও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (SBI)-র একটি সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ক্রমবর্ধমান শহরায়ণের প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষার জন্য এই ধরনের প্রকল্পগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এগুলি শুধু শহরের পরিকাঠামোগত উন্নয়নই করে না, বরং সবুজ পরিকাঠামো গড়ে তোলে এবং শহরগুলিকে পরিবেশগতভাবে টেকসই করে তোলে।

   

‘U-আকারের হাইপোথিসিস’ ও শহরায়ণের প্রভাব
SBI-র গবেষণায় উঠে এসেছে একটি তথাকথিত “U-shaped hypothesis”—এর কথা। এই ধারণা অনুসারে, শহরায়ণের প্রাথমিক পর্যায়ে বনভূমি ও সবুজ আচ্ছাদনের পরিমাণ হ্রাস পায়। তবে শহরায়ণের হার যখন একটি নির্দিষ্ট সীমা (প্রায় ৪০ শতাংশ) অতিক্রম করে, তখন পরিবেশবিষয়ক নীতিনির্ধারণ আরও কঠোর ও সুনির্দিষ্ট হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ, বনভূমির পুনরুদ্ধার শুরু হয় এবং জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

এই প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠে আরও শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো, যা শহর বিস্তার ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

স্মার্ট সিটি ও AMRUT-এর গুরুত্ব
SBI-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্মার্ট সিটিজ মিশন ও AMRUT-এর মতো কর্মসূচিগুলিকে আরও বিস্তৃতভাবে কার্যকর করতে হবে, যাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, সবুজ পরিকাঠামো, ও শক্তিশালী শহর পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরগুলিকে আরও বাসযোগ্য, নিরাপদ এবং পরিবেশগতভাবে সহনশীল করে তোলা যায়।

এই প্রকল্পগুলির অধীনে জল সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, টেকসই পরিবহন, সবুজ ভবন নির্মাণ ও নগর হ্রদ ও খালগুলির পুনরুদ্ধারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে শহরগুলির পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে।

সবুজ শক্তির দিকে দৃষ্টি ও বিনিয়োগের আহ্বান
প্রতিবেদনটি আরও জানিয়েছে, ভারতের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সবুজ শক্তির দিকে আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—সবুজ হাইড্রোজেন, বায়োফুয়েল, সৌর বিদ্যুৎ পার্ক, বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি পরিকাঠামো এবং বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে বিনিয়োগ।

এই খাতে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ করাও জরুরি, যা জলবায়ু সহনশীল শহর গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং ভারতকে একটি কম-কার্বন অর্থনীতির নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

সবুজ বন্ডের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক কাঠামো
টেকসই প্রকল্পগুলিকে অর্থায়নের জন্য সবুজ বন্ডের ব্যবহারের ওপরও জোর দিয়েছে SBI। তবে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে গেলে শুধু বন্ড ইস্যু করলেই চলবে না, তার সঙ্গে থাকতে হবে শক্তিশালী পরিবেশ আইন, বন উজাড় রোধে কড়া বিধান এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

সবুজ বন্ড বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে, যদি প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও পরিবেশগত দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করা যায়।
পরিবেশ ও অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করে শহরায়ণের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এই প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—ভারতকে দ্রুত শহরায়ণের পথে এগোতেই হবে, তবে তা যেন পরিবেশের মূল কাঠামোকে ধ্বংস না করে বরং টেকসই উন্নয়নের অংশ হয়। অর্থাৎ “সাসটেনেবিলিটি”-কে শহরায়ণের কেন্দ্রে রেখে পরিকল্পনা করাই হবে ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি।

SBI-র মতে, সরকার যদি স্মার্ট সিটি ও AMRUT-এর মতো কর্মসূচিগুলিকে আরও প্রসারিত করে এবং সবুজ শক্তি ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলিতে জোর দেয়, তবে ভারতের শহরগুলিকে আগামী দিনে বিশ্বমানের টেকসই নগর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

এইভাবে শহরায়ণ শুধু জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনাই করবে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ও সুস্থ বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করবে।