বিপুল লাভ! রিলায়েন্স-ওএনজিসিকে টক্কর স্টেট ব্যাঙ্কের

অভূতপূর্ব লাভে চমক দিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)। চলতি অর্থবর্ষ (মার্চ ২০২৫ শেষ হওয়া আর্থিক বছর) শেষে প্রায় ৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিট লাভ…

SBI digital banking dhoni

অভূতপূর্ব লাভে চমক দিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)। চলতি অর্থবর্ষ (মার্চ ২০২৫ শেষ হওয়া আর্থিক বছর) শেষে প্রায় ৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিট লাভ করে SBI স্থান করে নিল বিশ্বের শীর্ষ ১০০ লাভজনক কোম্পানির তালিকায়। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও ওএনজিসির পর এটি তৃতীয় ভারতীয় সংস্থা, যাদের এই তালিকায় নাম উঠল।

তবে এই বিপুল লাভের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে একটি তুলনামূলকভাবে ছোট ডিজিটাল ব্যবহারকারী গোষ্ঠী। ভারতের প্রখ্যাত মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ রাজেন্দ্র শ্রীবাস্তব এক পোস্টে লিখেছেন, “SBI-র লাভের কাহিনি অনেকটাই YONO-র সাফল্যের গল্প।”

   

২০১৭ সালে চালু হওয়া YONO (You Only Need One) অ্যাপ আজ SBI-র মূল বৃদ্ধির ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এর ৭৪ মিলিয়নেরও বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৩.২ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। SBI-র ৬৫ শতাংশ সেভিংস অ্যাকাউন্ট লেনদেন এখন YONO-র মাধ্যমেই হয়।

YONO এখন শুধুমাত্র একটি ব্যাঙ্কিং অ্যাপ নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম। এর মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা, ইনভেস্টমেন্ট, ইন্স্যুরেন্স, অনলাইন শপিং, ভ্রমণ বুকিং থেকে শুরু করে সরকারি পরিষেবাও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা দীর্ঘমেয়াদে অ্যাপে যুক্ত থাকছেন, যার সুফল মিলছে SBI-র লাভে।

তবে সমস্যা একটাই—SBI-র প্রায় ৫০০ মিলিয়ন অ্যাকাউন্টের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ YONO ব্যবহারকারী। বাকিদের অনেকেই নিম্ন ব্যালান্স ও নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের অন্তর্গত, যা ব্যাঙ্কের খরচ বাড়াচ্ছে।

শ্রীবাস্তব প্রশ্ন তুলেছেন, ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে ২০,০০০টি শাখা ও ২.২ লক্ষ কর্মচারী নিয়ে কি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য পূরণ সম্ভব? আধার, UPI, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের যুগে গ্রামাঞ্চলেও ডিজিটাল লেনদেন স্বাভাবিক। তাই ব্যাঙ্কের শারীরিক পরিকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পুনর্বিবেচনা দরকার।

Advertisements

বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, উচ্চ মুনাফার পরেও SBI-র বাজার মূল্যায়ন তুলনায় কম (P/B অনুপাত মাত্র ১.৪)। যেখানে HDFC Bank ও ICICI Bank যথাক্রমে ২.৮ ও ৩.৩ অনুপাতে ট্রেড করে। কারণ, বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি আরও প্রযুক্তিনির্ভর, কম খরচে পরিচালিত হয় এবং ঝুঁকির দিক থেকে কম।

শ্রীবাস্তব মনে করছেন, SBI যদি YONO-র ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ করতে পারে, তাহলে অতিরিক্ত শাখা বা কর্মী নিয়োগ ছাড়াই বাজার মূলধন দ্বিগুণ করা সম্ভব। এতে একদিকে যেমন ব্যাঙ্কের কার্যকারিতা বাড়বে, তেমনি লাভ ও অন্তর্ভুক্তির ভারসাম্য রক্ষাও হবে।

তিনি বলেন, “SBI আজ প্রমাণ করেছে তারা বিশ্বের সেরা ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে লাভের দিক থেকে। এখন তাদের ভবিষ্যত-প্রস্তুত প্রতিষ্ঠান হিসেবে মূল্যায়নের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।”

সঠিক ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে SBI শুধু নিজেদের নয়, গোটা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ভবিষ্যতকে নেতৃত্ব দিতে পারে— এমনটাই বার্তা দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।