এসবিআই বাড়াল MCLR হার, বাড়বে হোম লোনের কিস্তি

দেশের বৃহত্তম ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI), সম্প্রতি তার মার্জিনাল কস্ট অফ ফান্ড বেসড লেন্ডিং রেট (MCLR) বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে ব্যাংকের…

SBI Increases Lending Rates

দেশের বৃহত্তম ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI), সম্প্রতি তার মার্জিনাল কস্ট অফ ফান্ড বেসড লেন্ডিং রেট (MCLR) বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য হোম লোন, পার্সোনাল লোন এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ইএমআই বাড়তে চলেছে। ৫ ডিসেম্বর থেকে, এসবিআই তাদের এক বছরের MCLR হার ০.০৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৯ শতাংশে নিয়ে এসেছে। এই বৃদ্ধির ফলে, হোম লোন এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণের কিস্তি বাড়বে।

MCLR কি এবং কেন বাড়ানো হল?
MCLR হল ব্যাংকগুলির জন্য ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মূল হার যা তাদের দ্বারা গ্রাহকদের দেওয়া ঋণের সুদের হারের নির্ধারণ করে। এটি এমন একটি হার যার সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের ঋণ যেমন হোম লোন, পার্সোনাল লোন ইত্যাদি সম্পর্কিত থাকে। MCLR-এ বৃদ্ধি হলে এর সরাসরি প্রভাব পড়ে গ্রাহকদের ঋণের সুদের হারে, এবং এর ফলে গ্রাহকদের মাসিক কিস্তির পরিমাণ বাড়ে।

এসবিআই তার এক বছরের MCLR হার ৯ শতাংশ করার পাশাপাশি, তিন-এবং ছয় মাসের MCLR হারও ০.০৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। তবে, এক দিনের, এক মাসের, দুই বছরের এবং তিন বছরের MCLR হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

কেন এসবিআই MCLR বাড়িয়েছে?
এসবিআই-এর চেয়ারম্যান সি এস সেতি জানিয়েছেন যে, তাদের ঋণের প্রায় ৪২ শতাংশ MCLR এর সাথে যুক্ত। তিনি আরও বলেন, যেহেতু ব্যাংকগুলো ঋণের জন্য জমার হার বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং এই কারণে ঋণের খরচও বাড়ছে, তাই তারা পরবর্তীতে ঋণ দেওয়া হার বৃদ্ধির দিকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে জমার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে ঋণের হার বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে।

এছাড়া, এসবিআইয়ের প্রধান নির্বাহী আরও জানিয়েছেন যে ব্যাংকটি এখন ঋণের হার বাড়ানোর বিষয়টিকে নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ করার একটি প্রধান উপায় হিসেবে ব্যবহার করবে না। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, ব্যাংকটির ধারণা হচ্ছে বর্তমানে গ্রাহক জমার হার শীর্ষে পৌঁছেছে।

গ্রাহকদের জন্য কী প্রভাব পড়বে?
এই বৃদ্ধির ফলে, এসবিআই-এর গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে, যারা হোম লোন এবং পার্সোনাল লোন নিয়ে আছেন, তাদের মাসিক কিস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, নতুন গ্রাহকরা যেহেতু ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্যও সুদের হার একটু বেশি হবে।

Advertisements

এই ধরনের পদক্ষেপ বিভিন্ন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা এবং বাজারের প্রবণতার ওপর নির্ভর করে। উচ্চ জমার হার এবং ঋণের ঊর্ধ্বগতির কারণে এসবিআই অন্যান্য ব্যাঙ্কের তুলনায় ঋণের হার বৃদ্ধি করেছে।

ভবিষ্যতে কী হবে?
এখনও পরিস্কার হয়নি যে, অন্যান্য ব্যাংকগুলোও এসবিআই-এর মতো ঋণের হার বৃদ্ধি করবে কিনা। তবে, বর্তমানে জমার হার ও ঋণের খরচের সম্পর্কের মধ্যে যেসব চাপ রয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে অন্যান্য ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকেও ঋণের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

এসবিআই-এর এই সিদ্ধান্ত এবং এর ফলে ঋণের হার বৃদ্ধির বিষয়টি গ্রাহকদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। যারা আগামীতে ঋণ নিতে চান, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভবিষ্যতে ঋণের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেলে মাসিক কিস্তির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও যত্নবান হতে হবে গ্রাহকদের।

এটি স্পষ্ট যে, এসবিআই-এর ঋণের হার বৃদ্ধির ফলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে, বিশেষ করে যারা ঋণ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য। তবে, এই সিদ্ধান্তের প্রভাব ব্যাংকিং খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলির ওপরও পড়তে পারে, এবং সেক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাদের জন্য একটি নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হতে পারে।