Health Insurance: ভারতে স্বাস্থ্য ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মুদ্রাস্ফীতিকে অনেকটাই ছাপিয়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কেবলমাত্র আবেগের বিষয় নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত আর্থিক সিদ্ধান্তও বটে। বিশেষ করে বাবা-মায়ের কথা ভাবলে বিষয়টি আরও জরুরি হয়ে ওঠে। তাঁদের বয়স ৫০-এর নিচে হোক বা অবসরোত্তর জীবন যাপন করছেন, একটি ভালো স্বাস্থ্য বিমা তাঁদের সঠিক সময়ে মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয় এবং আপনার সঞ্চয়কে হঠাৎ ঘটে যাওয়া চিকিৎসা খরচ থেকে রক্ষা করে।
বয়সভিত্তিক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি: ৬০-এর নিচে বনাম ৬০-এর ঊর্ধ্বে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য বিমার চেহারাও পাল্টায়। ৬০ বছরের নিচে বিমা প্রিমিয়াম তুলনামূলকভাবে কম এবং পলিসিগুলির কভারেজ ক্ষেত্রও বেশি বিস্তৃত। কিন্তু একবার ৬০ পেরোলেই বিভিন্ন বয়সজনিত ঝুঁকি এবং পূর্ব-বিদ্যমান অসুস্থতার কারণে বিমা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যায়। সেইসঙ্গে যুক্ত হয় কো-পেমেন্ট শর্ত, ওয়েটিং পিরিয়ড এবং চিকিৎসার ওপর সীমাবদ্ধতা (সাব-লিমিট)।
একজন অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টা বলেন, “যত আগে অভিভাবকদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা কেনা যায়, ততই বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। দেরি করলে প্রিমিয়াম বেড়ে যায় এবং কভারেজও কমে যায়।”
কর ছাড়ের বাস্তব দিক
শুধু মানসিক নিশ্চয়তাই নয়, এর সঙ্গে রয়েছে আর্থিক প্রণোদনাও। কেয়ার হেল্থ ইনস্যুরেন্স-এর ডিস্ট্রিবিউশন প্রধান অজয় শাহ বলেন, “আপনার বাবা-মায়ের জন্য স্বাস্থ্য বিমা কেনা অবশ্যই ভালোবাসার পরিচায়ক, তবে একইসঙ্গে এটি এক অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত আর্থিক সিদ্ধান্ত। এটি হঠাৎ চিকিৎসা খরচ থেকে রক্ষা করে এবং ভারতীয় আয়কর আইনের ৮০ডি ধারা অনুযায়ী বড় অঙ্কের কর ছাড়ও দেয়।”
যদি আপনার বাবা-মা ৬০ বছরের নিচে হন, তাহলে আপনি বছরে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পেতে পারেন, আর যদি তাঁরা ৬০-এর ঊর্ধ্বে হন, তাহলে ছাড়ের পরিমাণ বেড়ে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। এই ছাড় আপনি পেতে পারেন, তা আপনার অভিভাবকরা আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হোক বা না হোক। এই কর ছাড়ের ফলে আপনার বার্ষিক করযোগ্য আয় কমে যায় এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব হয়।
কর ছাড়ের বাইরেও রয়েছে বৃহত্তর উদ্দেশ্য
তবে শুধুমাত্র কর বাঁচানোই স্বাস্থ্য বিমার উদ্দেশ্য নয়। শাহ আরও যোগ করেন, “স্বাস্থ্য বিমা কেনা মানে কেবল কর ছাড় পাওয়া নয়, এটি একটি আর্থিক নিরাপত্তার পরিকাঠামো গড়ে তোলে। এটি নিশ্চিত করে যে হঠাৎ কোনো মেডিক্যাল জরুরি অবস্থায় আপনাকে চিন্তায় পড়তে হবে না।”
বর্তমানে একটি সাধারণ হাসপাতাল বিল হতে পারে ৩ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা বা তারও বেশি। এরকম খরচ হঠাৎ এলে তা আপনার সন্তানদের শিক্ষা, বাড়ি কেনা বা অবসর পরিকল্পনাকে বড় ধাক্কা দিতে পারে।
বুদ্ধিমানের মতো পলিসি বেছে নেওয়ার পরামর্শ
১. আগে শুরু করুন: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিমা কিনুন। বাবা-মায়ের বয়স বাড়ার আগেই প্রিমিয়াম কম এবং কভারেজ বেশি পাওয়া যায়।
২. পূর্ব-বিদ্যমান রোগের কভারেজ যাচাই করুন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের ক্ষেত্রে ওয়েটিং পিরিয়ড ও এক্সক্লুশন ভালোভাবে পড়ে নিন।
৩. কো-পেমেন্ট ও সাব-লিমিট বুঝে নিন: অনেক সিনিয়র সিটিজেন পলিসিতে বিমাকৃতকে খরচের কিছু শতাংশ বহন করতে হয়। কম কো-পে অপশন বেছে নেওয়াই ভালো।
৪. লাইফটাইম রিনিউয়াল ফিচার খুঁজুন: এমন পলিসি বেছে নিন যেটি আজীবন রিনিউ করা যায়।
৫. ক্যাশলেস নেটওয়ার্ক হাসপাতালের বিস্তার দেখুন: আপনার বাড়ির আশেপাশে কত হাসপাতাল বিমাদাতার সঙ্গে যুক্ত তা খতিয়ে দেখুন।
৬. রিস্টোরেশন ও নো-ক্লেম বোনাস সুবিধা: যদি পুরো ইন্সিওর্ড অ্যামাউন্ট ব্যবহৃত হয়, রিস্টোরেশন সুবিধা অতিরিক্ত কভার দেয়। নো-ক্লেম বোনাস প্রতি বছর বোনাস সিকিওর করে।
অভিভাবকদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা কেবল একটি চুক্তিপত্র নয়, এটি একটি আর্থিক ও মানসিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। এটি নিশ্চিত করে যে, আপনি ও আপনার পরিবার অসুস্থতার মুখোমুখি হলেও আর্থিক স্থিতিশীলতা হারাবেন না।
পরিকল্পনা করুন সময় থাকতেই — কারণ বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়াটা শুধু কর্তব্য নয়, তা আজকের দিনে একজন প্রজ্ঞাবান বিনিয়োগকারীর চিহ্নও বটে।