বাংলার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে সেরার শিরোপা কেন্দ্রের

দেশের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইতিহাস গড়ল পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal Power Generation)। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (CEA)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ২০১টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে…

Santaldih Thermal Power Station

দেশের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইতিহাস গড়ল পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal Power Generation)। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (CEA)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ২০১টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে পুরুলিয়ার সাঁতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের (WBPDCL) অন্তর্গত এই কেন্দ্রটি প্রথম স্থানে স্থান পেয়েছে, যা গোটা রাজ্যের গর্ব।

   

শুধু সাঁতালডিহিই নয়, পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের অন্যান্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ রেখেছে এই তালিকায়। বাকরেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে, সাগরদিঘি চতুর্থ এবং বান্দেল নবম স্থান অধিকার করেছে। অর্থাৎ, দেশের প্রথম দশটি সেরা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে চারটিই পশ্চিমবঙ্গের।

উৎপাদনে রেকর্ড সাফল্য

এই অসাধারণ সাফল্যের পিছনে রয়েছে WBPDCL-এর সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা ও দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থা। নিগমের সামগ্রিক প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর (PLF) ৮৮.৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের শীর্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা এনটিপিসি (NTPC) এবং আদানি পাওয়ার-এর থেকেও বেশি। PLF-এর মাধ্যমে বোঝা যায়, একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তাদের উৎপাদন ক্ষমতার কতটা ব্যবহার করছে। সেই দিক থেকে WBPDCL এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।

অভিনব পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির প্রয়োগ

WBPDCL সূত্রে জানা গিয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ মানবসম্পদ, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং বস্তুনিষ্ঠ ব্যবস্থাপনার ফলেই এই সাফল্য এসেছে। সাঁতালডিহি কেন্দ্রের আধুনিক ইউনিটগুলি কম কার্বন নিঃসরণ করে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন, “এই সাফল্য গোটা বাংলার। আমাদের সরকার সব সময় চেয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পান। আজকের এই সম্মান প্রমাণ করছে, বাংলা শুধুই সংস্কৃতির নয়, প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও দেশের অগ্রদূত।”

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর এই উন্নয়ন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিল্পক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বেশি PLF মানে হলো উৎপাদন খরচ কম, যা বিদ্যুৎ বিলেও প্রভাব ফেলতে পারে। কেন্দ্রীয় স্তরে এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতে আরও বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে বলেও মনে করছেন তাঁরা।

WBPDCL-এর লক্ষ্য আগামীর উন্নয়ন

WBPDCL সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, আগামী দিনে আরও কয়েকটি আধুনিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব এবং নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে এগোতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এই সাফল্য বাংলা তথা দেশের বিদ্যুৎ শিল্পের কাছে এক অনন্য মাইলস্টোন। প্রযুক্তি, দক্ষতা এবং দায়বদ্ধতার সঠিক সংমিশ্রণ কীভাবে সাফল্য আনে, তা দেখিয়ে দিল WBPDCL। সাঁতালডিহি, বাকরেশ্বর, সাগরদিঘি ও বান্দেল যেন হয়ে উঠেছে নতুন বাংলার শক্তির প্রতীক।