চাকরিজীবীদের করের ঝামেলা শেষ! বছরে ১৮.৫ লক্ষ আয়েও নেই কর, জানুন কীভাবে সম্ভব

Zero Tax income: ভারতের একজন চাকরিজীবীর জন্য আয় বাড়া মানেই করের বোঝা বাড়া—এটাই যেন বাস্তবতা। মাসিক খরচের চক্র এবং সরকারের কাছে মোটা অঙ্কের কর পরিশোধের…

ETF vs Mutual Fund Which Offers Better Tax Efficiency?

Zero Tax income: ভারতের একজন চাকরিজীবীর জন্য আয় বাড়া মানেই করের বোঝা বাড়া—এটাই যেন বাস্তবতা। মাসিক খরচের চক্র এবং সরকারের কাছে মোটা অঙ্কের কর পরিশোধের ফলে অনেকেই আর্থিক চাপে থাকেন। কিন্তু যদি বলা হয়, নতুন ট্যাক্স রেজিমের অধীনে বছরে ১৮.৫ লক্ষ টাকা আয় করেও আপনি সম্পূর্ণভাবে করমুক্ত থাকতে পারেন, আপনি কি বিশ্বাস করবেন?

২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন কর ব্যবস্থায়, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ও কর ছাড় (tax rebate) এর সুবিধা নিয়ে ১২.৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত রাখা সম্ভব। কিন্তু যদি আপনার বার্ষিক আয় ১৮.৫ লক্ষ টাকা হয়, তাহলেও কি আপনি করমুক্ত থাকতে পারেন? উত্তর হল, হ্যাঁ—সরকারের বিভিন্ন আইনি কর ছাড়ের ব্যবস্থার সুচারু ব্যবহার করলে এটিও সম্ভব।

   

ধাপে ধাপে করছাড়ের কৌশল:
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন – ৭৫,০০০ টাকা
প্রথমেই, নতুন কর ব্যবস্থায় ১৮.৫ লক্ষ টাকার আয়ের উপর ৭৫,০০০ টাকা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন পাওয়া যাবে। যার ফলে আপনার করযোগ্য আয় দাঁড়াবে ১৭.৭৫ লক্ষ টাকা।

NPS (ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম) কর ছাড়:
নতুন রেজিমে, কোম্পানির পক্ষ থেকে কর্মীর NPS অ্যাকাউন্টে করা অবদানের উপর ১৪% পর্যন্ত করছাড় পাওয়া যায়। যদি ধরে নিই আপনার বেসিক বেতন ৯.২৫ লক্ষ টাকা, তবে সর্বোচ্চ NPS ছাড় হবে ১,২৯,৫০০ টাকা। এই ছাড়ের পর আপনার করযোগ্য আয় দাঁড়াবে ১৬.৪৫ লক্ষ টাকা।

EPF (Employees’ Provident Fund) কর সুবিধা:
যদিও নিজের EPF অবদানে করছাড় নেই, তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে EPF-এ দেওয়া ১২% অবদান করছাড়ের আওতাভুক্ত। ৯.২৫ লক্ষ টাকা বেসিক বেতনে, এই ছাড়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১,১১,০০০ টাকা। এর ফলে করযোগ্য আয় কমে দাঁড়াবে ১৫.৩৪ লক্ষ টাকা।

PPF ও সুখন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্টের ছাড়:
সরকারি প্রকল্প যেমন পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) ও সুখন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করলে আরও অতিরিক্ত ১,৫০,০০০ ও ১,০০,০০০ টাকার উপর ছাড় পাওয়া যায়। মোট করছাড় দাঁড়ায় ১৭,৫০০ টাকা। এরপরে আপনার করযোগ্য আয় নামবে ১৫.১৭ লক্ষ টাকা।

Advertisements

পোস্ট অফিস স্কিমের সুদ:
আয়কর আইনের ১০(১৫)(i) ধারা অনুযায়ী, পোস্ট অফিস স্কিমের সুদের উপর ৩,৫০০ টাকা পর্যন্ত করছাড় পাওয়া সম্ভব।

হোম লোনের সুবিধা:
যদি আপনি কোনও বাড়ির জন্য ঋণ নিয়ে থাকেন এবং তার সুদের পরিমাণ প্রাপ্ত ভাড়ার তুলনায় বেশি হয়, তাহলে সেই ক্ষতি আপনার আয়ের বিপরীতে দেখিয়ে করছাড় পাওয়া যায়। ধরুন আপনি বছরে ২,০০,০০০ টাকা সুদ দিচ্ছেন এবং বাড়ি ভাড়া পাচ্ছেন ১,০০,০০০ টাকা—তাহলে আপনি অতিরিক্ত ১,০০,০০০ টাকার করছাড় পেতে পারেন।

পরিবারিক পেনশন:
পরিবারিক পেনশনের উপর ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বা মোট পেনশনের এক-তৃতীয়াংশ (যেটা কম) করছাড় পাওয়া যায়।
অন্যান্য কর ছাড়:
সরকার অফিসিয়াল খরচ যেমন মোবাইল বিল, ফুয়েল বিল, পরিবহন খরচ, ইউনিফর্ম ও এন্টারটেইনমেন্ট খরচের উপর মোট ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছাড় দেয়। উদাহরণস্বরূপ:
এন্টারটেইনমেন্ট বিল: ৩০,০০০ টাকা
পরিবহন ভাতা: ৭০,০০০ টাকা
ফুয়েল বিল: ২০,০০০ টাকা
মোবাইল বিল: ১৫,০০০ টাকা
ইউনিফর্ম বিল: ১৫,০০০ টাকা
এই সমস্ত ছাড়ের পরে আপনার করযোগ্য আয় ১২ লক্ষ টাকার মাত্র ৩৮,০০০ টাকা ওপরে দাঁড়ায়।

অগ্নিপথ স্কিম ও অন্যান্য সম্পূর্ণ করমুক্ত সুবিধা:
এই অতিরিক্ত ৩৮,০০০ টাকাও আপনি অগ্নিপথ স্কিমে ১০০% করমুক্ত অবদান দেখিয়ে ছাড় পেতে পারেন (ধারা ৮০CCH(২) অনুযায়ী)। এছাড়াও, জীবন বীমা পলিসি থেকে পাওয়া আয় (ধারা ১০(১০D)) এবং গ্র্যাচুইটির টাকা (ধারা ১০(১০)) ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।

সঠিক পরিকল্পনা ও কর ছাড়ের অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে ১৮.৫ লক্ষ টাকা আয় করেও আপনি সম্পূর্ণভাবে করমুক্ত থাকতে পারেন। আইনসম্মতভাবে কর ছাড়ের সুবিধা নিতে পারলে, উচ্চ আয়সত্ত্বেও কর দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নাও হতে পারে। ভারতের নতুন কর ব্যবস্থায় এই সুযোগগুলি কাজে লাগিয়ে চাকরিজীবীরা নিজের হাতে রাখতে পারেন আরও বেশি টাকা।