‘অভিনেতা, ক্রিকেটার নয়’! সচিন তেন্ডুলকর কীভাবে ৫৮ লক্ষ টাকা আয়কর বাঁচালেন?

Sachin Tendulkar

ক্রিকেটের ভগবান সচিন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) আর্থিক কৌশলের একটি আকর্ষণীয় অধ্যায় সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। তিনি ক্রিকেটারের পরিবর্তে নিজেকে ‘অভিনেতা’ বলে দাবি করে ৫৮ লক্ষ টাকা আয়কর বাঁচিয়েছেন—এটি সৃজনশীল ক্ষেত্রের পেশাদার এবং ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। ট্যাক্সবাডি.কম-এর প্রতিষ্ঠাতা সুজিত বাঙ্গার সম্প্রতি এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ একটি পোস্টে এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। “সচিন তেন্ডুলকর ‘ক্রিকেটার’ ছিলেন না। তিনি নিজেকে অভিনেতা বলে দাবি করে ৫৮ লক্ষ টাকা ট্যাক্স বাঁচিয়েছেন,” বাঙ্গার লিখেছেন।

Advertisements

এই ঘটনাটি ২০০২-০৩ আর্থিক বছরের। সেই সময় সচিন পেপসি, ভিসা এবং ইএসপিএন-এর মতো ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন থেকে বিদেশী আয় হিসেবে ৫.৯২ কোটি টাকা উপার্জন করেন। ক্রিকেটার হিসেবে এই আয় ঘোষণা করার পরিবর্তে তিনি এটিকে ‘অভিনেতা’ পেশার অংশ বলে দাবি করেন এবং আয়কর আইন ১৯৬১-এর ধারা ৮০আরআর-এর অধীনে ৩০% ছাড় দাবি করেন। এই ধারাটি লেখক, নাট্যকার, শিল্পী (অভিনেতা, সঙ্গীতজ্ঞ এবং ক্রীড়াবিদ) এবং অন্যান্য পারফর্মারদের বিদেশী আয়ের জন্য প্রযোজ্য। “সচিন নিজেকে ক্রিকেটার বলেননি। তিনি অভিনেতা বলেছেন, এবং সেই একটি শব্দ সবকিছু বদলে দিয়েছে,” বাঙ্গার লিখেছেন।

   

কিন্তু অ্যাসেসিং অফিসার (এও) এই দাবি মেনে নেননি। “এও-এর অবস্থান: ‘আপনি ক্রিকেটার; বিজ্ঞাপনগুলি সহায়ক। এটি অন্যান্য উৎসের অধীনে চিকিত্সা করুন; ৮০আরআর প্রযোজ্য নয়’,” বাঙ্গার বর্ণনা করেছেন। সচিনের প্রতিরক্ষা সরল ছিল: “আমি মডেলিং/অভিনয় করেছি। এটি অভিনেতার পেশা; ৮০আরআর এতে প্রযোজ্য।” এরপর ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল (আইটিএটি)-এর সামনে মামলা যায়, যেখানে ‘অভিনেতা’ শব্দটির সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হয়। বাঙ্গারের সারাংশ অনুসারে, “আইটিএটি ‘অভিনেতা’কে বিস্তৃতভাবে পড়েছে: দক্ষতা, কল্পনা এবং সৃজনশীলতা জড়িত কাজ যা নান্দনিক আউটপুটের জন্য, মডেলিং/টিভি বিজ্ঞাপন যোগ্য।”

এই ব্যাখ্যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নেয় যে সচিনের দুটি পেশা থাকতে পারে—একটি ক্রিকেটার এবং অন্যটি অভিনেতা। “আপনি একাধিক পেশা অনুসরণ করতে পারেন: ক্রিকেটার এবং অভিনেতা। বিজ্ঞাপনের আয় অভিনয় পেশা থেকে উদ্ভূত,” বাঙ্গার লিখেছেন। শেষ পর্যন্ত আইটিএটি সচিনের পক্ষে রায় দেয়, তার বিদেশী বিজ্ঞাপন আয়ের উপর ১.৭৭ কোটি টাকা ছাড় ৮০আরআর-এর অধীনে অনুমোদন করে। বাঙ্গারের মতে, “শিল্পীয় পারফরম্যান্স, ক্রিকেট নয়, তার দাবির ভিত্তি ছিল।”

এই পোস্টের মাধ্যমে বাঙ্গার দেখিয়েছেন কীভাবে ট্যাক্স আইনের সঠিক বোঝাপড়া এবং সৃজনশীল যুক্তি দিয়ে সচিন ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের সামনে সফল মামলা গড়ে তুলেছেন। এটি শুধু একটি তারকার গল্প নয়, বরং সৃজনশীল পেশার লোকেদের জন্য একটি পাঠ। ধারা ৮০আরআর এখনও বিদ্যমান, যা বিদেশী আয়ের ৩০% ছাড় দেয় যদি এটি শিল্পীয় কাজ থেকে আসে। সচিনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনগুলি টিভি অ্যাড, মডেলিং এবং অভিনয়ের অংশ হিসেবে গণ্য হয়েছে, যা ক্রিকেটের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।

Advertisements

এই রায়টি আইটিএটি-র একটি মাইলফলক সিদ্ধান্ত, যা পেশার সংজ্ঞাকে বিস্তৃত করে। অনেক ক্রীড়াবিদ, অভিনেতা বা সঙ্গীতজ্ঞ বিজ্ঞাপন থেকে বিদেশী আয় করেন, এবং এই ধারা তাদের জন্য সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু এও-এর প্রাথমিক আপত্তি ছিল যে বিজ্ঞাপনগুলি ক্রিকেটের খ্যাতির কারণে, তাই এটি ‘অন্যান্য উৎস’। সচিনের আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে অ্যাডে অভিনয়, ডায়লগ, এক্সপ্রেশন—এগুলি অভিনেতার দক্ষতা। আইটিএটি এই যুক্তি মেনে নেয় এবং বলে যে পেশা একাধিক হতে পারে।

ট্যাক্সবাডি.কম-এর সুজিত বাঙ্গারের পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, কারণ এটি ট্যাক্স প্ল্যানিং-এর একটি স্মার্ট উদাহরণ। তিনি লিখেছেন, “একটি শব্দ—অভিনেতা—কোটি টাকা বাঁচিয়েছে।” এটি ফ্রিল্যান্সার, অভিনেতা, মডেল বা ক্রীড়াবিদদের জন্য অনুপ্রেরণা। যদি আপনার বিদেশী আয় শিল্পীয় কাজ থেকে আসে, তাহলে ৮০আরআর দাবি করতে পারেন। কিন্তু সঠিক ডকুমেন্টেশন এবং প্রমাণ দরকার। সচিনের ক্ষেত্রে অ্যাড চুক্তি, স্ক্রিপ্ট এবং পারফরম্যান্সের প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা: ট্যাক্স আইন জটিল, কিন্তু সৃজনশীল ব্যাখ্যা সুবিধা দিতে পারে। অনেকে বিজ্ঞাপন আয়কে ‘পেশাগত আয়’ বলে দাবি করেন, কিন্তু সচিনের মতো আলাদা পেশা দেখিয়ে ছাড় পাওয়া যায়। আইটিএটি-র রায়টি প্রিসিডেন্ট সেট করে, যা অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন গায়ক যদি বিদেশী কনসার্ট করে, তাহলে ৮০আরআর দাবি করতে পারেন।

সচিনের এই কৌশলটি ২০০২-০৩-এর, কিন্তু ধারা ৮০আরআর এখনও আছে। ২০২৫ সালে ট্যাক্সপেয়াররা এটি ব্যবহার করতে পারেন, যদি বিদেশী আয় শিল্পীয় হয়। ট্যাক্স কনসালটেন্টের সাথে পরামর্শ করুন। বাঙ্গারের পোস্টটি ট্যাক্স সচেতনতা বাড়িয়েছে এবং দেখিয়েছে কীভাবে তারকারাও স্মার্ট ট্যাক্স প্ল্যানিং করেন। সচিনের এই ‘অভিনয়’ শুধু ক্রিকেট মাঠে নয়, ট্যাক্স কোর্টেও সফল হয়েছে! (শব্দ সংখ্যা: ৬৫৮)