বাড়তি দামে বিপাকে মানুষ, ছুটছেন অফার ও ডিসকাউন্ট আউটলেটে

ক্রমবর্ধমান খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ভোক্তাদের ভোগব্যবহারকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা PwC-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, ৬৩ শতাংশ ভোক্তা খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ…

বাড়তি দামে বিপাকে মানুষ, ছুটছেন অফার ও ডিসকাউন্ট আউটলেটে

ক্রমবর্ধমান খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ভোক্তাদের ভোগব্যবহারকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা PwC-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, ৬৩ শতাংশ ভোক্তা খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এর ফলে সাশ্রয়ী ক্রয়াভ্যাস স্পষ্টভাবে বেড়েছে।

খাদ্যদ্রব্য কেনাকাটার অভ্যাসে পরিবর্তন:
জরিপে দেখা গেছে, যারা খাদ্যের খরচ নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত, তাদের প্রায় অর্ধেকই নিজেদের ক্রয়ের অভ্যাস বদলাচ্ছেন। তারা এখন আগের চেয়ে বেশি ছাড়ের দোকান, ডিসকাউন্ট আউটলেট কিংবা অফার-ভিত্তিক বিক্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন যাতে সীমিত বাজেটে সঞ্চয় করা যায়।

   

অতিরিক্তভাবে, ৪৪ শতাংশ ভোক্তা পাইকারি বা বাল্কে খাদ্য কিনছেন, আবার সমান সংখ্যক মানুষ নিজেরাই শাকসবজি বা ফল উৎপাদনের পথে হাঁটছেন, যাতে বাজারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব থেকে বাঁচা যায়।

খাদ্যে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রভাব:
জরিপে অংশ নেওয়া ৭৪ শতাংশ ভোক্তা জানিয়েছেন, তাদের খাদ্য বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও দীর্ঘদিনের অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ, যেসব কোম্পানি কার্যকরী ঐতিহ্যবাহী খাবার বাজারে আনে—যেমন আমপানা, জিরা-স্বাদযুক্ত পানীয় ইত্যাদি—তারা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। এ ধরনের পণ্য কেবল স্বাদের জন্য নয়, সংস্কৃতি ও নস্টালজিয়ার টানেও জনপ্রিয়তা পাবে।

স্বাদ, দাম ও পুষ্টিগুণ—ভারতীয় ভোক্তাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার:
বিশ্বব্যাপী খাবার বাছাইয়ে মূল্য (ছাড়, পুরস্কার, অফার) সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখলেও, ভারতে ছবিটা কিছুটা ভিন্ন। এখানে পণ্যের স্বাদই প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ।
জরিপে অংশ নেওয়া ৪০ শতাংশ ভোক্তা স্বাদকে শীর্ষ তিনটি কারণে রেখেছেন।
৩৯ শতাংশ ভোক্তা দামকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
৩৮ শতাংশ পুষ্টিগুণকে গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন।

অর্থাৎ, ভারতীয় বাজারে যে ব্র্যান্ড ভালো স্বাদ এবং উচ্চ পুষ্টিগুণ দিতে পারবে, তারা বেশি ক্রেতা আকর্ষণ করবে।

Advertisements

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ:
পিডব্লিউসি জানিয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ শতাংশ খাদ্যের নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। অতিপ্রক্রিয়াজাত (ultra-processed) খাবার, কীটনাশকের ব্যবহার, অতিরিক্ত প্রিজারভেটিভ ও কেমিক্যাল—এসব নিয়ে ভোক্তাদের উদ্বেগ বাড়ছে।

স্বাস্থ্যগত সুবিধা ও পুষ্টিগুণই আজ ব্র্যান্ড পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। এরপর রয়েছে ভালো স্বাদ এবং টাকার যথাযথ মূল্য পাওয়া। এমনকি জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেক ভোক্তা বিশ্বাস করেন, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ বাড়াতে খাদ্য প্রস্তুতকারক ও উৎপাদকদেরই উদ্যোগী হওয়া উচিত।

কেনাকাটার স্থান ও অভ্যাস:
গত এক বছরে ভোক্তাদের কেনাকাটার ধরনেও বৈচিত্র্য এসেছে।
৭০ শতাংশ মানুষ সুপারমার্কেটে কেনাকাটা করেছেন।
৬০ শতাংশ স্থানীয় খুচরা দোকান ব্যবহার করেছেন।
৫৫ শতাংশ অন-ডিমান্ড গ্রোসারি ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মে কেনাকাটা করেছেন।
অতিরিক্তভাবে,
৪৬ শতাংশ ভোক্তা প্রস্তুত খাবার কিনছেন।
৪১ শতাংশ টেকআউট অর্ডার করছেন।
৩৮ শতাংশ সপ্তাহে অন্তত একবার বাইরে খেতে যাচ্ছেন।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, জিএসটি সংস্কারের ফলে বাইরে খাওয়া আরও পকেট-সাশ্রয়ী হতে চলেছে। আগে বিভিন্ন শ্রেণির রেস্তোরাঁয় খাবারের ওপর ১২ থেকে ১৮ শতাংশ জিএসটি দিতে হতো। এখন সব ধরনের রেস্তোরাঁয় একযোগে ৫ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য হচ্ছে। এর ফলে টেকআউট ও বাইরে খাওয়ার খরচ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শেষ কথা:
পিডব্লিউসি’র জরিপ স্পষ্ট করেছে যে, খাদ্যের দাম বাড়তে থাকায় মানুষ এখন ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে নতুন পথ খুঁজছে। একদিকে ভোক্তারা ছাড় ও সাশ্রয়ের সুযোগ নিচ্ছেন, অন্যদিকে তারা স্বাস্থ্য, পুষ্টিগুণ ও ঐতিহ্যগত স্বাদের দিকেও সমানভাবে নজর রাখছেন। খাদ্য শিল্পে যারা এই তিনটি বিষয়—স্বাদ, পুষ্টি ও সাশ্রয়—একসাথে সরবরাহ করতে পারবে, তারাই বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে।