ঋণের বাজারে বদলের হাওয়া, গ্রামীণ ভারতে আশার আলো

ভারতের গ্রামীণ (Rural India) ও অর্ধ-শহরাঞ্চলে (Semi-Urban India) ঋণের চাহিদা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, যখন দেশের সামগ্রিক ঋণ অনুসন্ধানের প্রবণতা কিছুটা শ্লথ হয়েছে। ট্রান্সইউন সিবিল (TransUnion…

Rising Credit Demand in Rural India Signals Economic Growth in 2025

ভারতের গ্রামীণ (Rural India) ও অর্ধ-শহরাঞ্চলে (Semi-Urban India) ঋণের চাহিদা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, যখন দেশের সামগ্রিক ঋণ অনুসন্ধানের প্রবণতা কিছুটা শ্লথ হয়েছে। ট্রান্সইউন সিবিল (TransUnion CIBIL) এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের মার্চ প্রান্তিকে গ্রাম ও ছোট শহরগুলিতে ঋণগ্রহণের প্রবণতা মেট্রোপলিটন ও নগরাঞ্চলের তুলনায় ভালোভাবে স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গ্রামীণ ও অর্ধ-শহরাঞ্চলে ঋণের চাহিদা সামগ্রিক চাহিদার মন্থরতা অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে সামলেছে।”

গ্রামীণ ও অর্ধ-শহরাঞ্চলে ঋণ অনুসন্ধানের শেয়ার বেড়েছে:
২০২৫ সালের মার্চ প্রান্তিকে গ্রামীণ অঞ্চলে ঋণ অনুসন্ধানের শেয়ার মোট ঋণ অনুসন্ধানের ২২ শতাংশ ছিল, যেখানে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের মার্চ প্রান্তিকে এই হার ছিল ২০ শতাংশ। অর্থাৎ, এক বছরে ২ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি হয়েছে। এই বৃদ্ধি গ্রামীণ অঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ঋণের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে।
অন্যদিকে, অর্ধ-শহরাঞ্চলে ঋণের অনুসন্ধান সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ২৮ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ২৯ শতাংশ। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধির ফলে স্পষ্ট হয় যে, ছোট শহর ও শহরতলিগুলিতে মানুষের মধ্যে ঋণগ্রহণের আগ্রহ বাড়ছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিস্তৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

   

মেট্রো ও শহরে পতনের ধারা:
এর বিপরীতে, দেশের মেট্রো শহরগুলোতে ঋণ অনুসন্ধানের হার ২০২৩ সালের ৩২ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালে ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ তিন বছরে মেট্রো অঞ্চলে ৩ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। শহরাঞ্চলে এই হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থেকেছে – ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ১৯ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে দোলাচল করেছে।
এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু ধীরে ধীরে কম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের দিকে সরে যাচ্ছে, যেখানে মানুষের ঋণের চাহিদা এবং সামর্থ্য দুই-ই বাড়ছে।

বয়সভিত্তিক ঋণগ্রহণের প্রবণতা:
ট্রান্সইউন সিবিল-এর তথ্য অনুযায়ী, ২৬-৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা, যারা ঐতিহ্যগতভাবে ঋণগ্রহীতাদের প্রধান অংশ, তাদের মধ্যে ঋণ অনুসন্ধানের হার সামান্য কমেছে — ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যেখানে এই হার ছিল ৪১ শতাংশ, ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে ৩৯ শতাংশে। এই হ্রাস আংশিকভাবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ঋণের বিষয়ে সাবধানতা অথবা উচ্চ-মূল্যের ঋণের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিকে ইঙ্গিত করতে পারে।
২৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ঋণ অনুসন্ধানের হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থেকে ১৭-১৮ শতাংশে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, ৩৬-৪৫ বছর বয়সী গ্রাহকদের মধ্যে এই হার সামান্য বেড়ে ২৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ২৪ শতাংশ।
৪৫-৫৫ ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ঋণের অনুসন্ধানের পরিমাণ প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

উচ্চ-মূল্যের ঋণের দিকে ঝোঁক:
এই সময়ে সামগ্রিকভাবে দেশের ঋণের চাহিদা কিছুটা মন্থর হয়েছে, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা গেছে ঋণের ধরণে। বাড়ি কেনা ও দুই-চাকার যানবাহনের মতো উচ্চ-মূল্যের ঋণ সেগমেন্টে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারা দেখাচ্ছে, অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ঋণ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, ব্যক্তিগত ঋণ, কনজিউমার ডিউরেবল ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের মতো ভোক্তা-চালিত ঋণের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই খাতে ঋণগ্রহণের হার চতুর্থাংশভিত্তিক (quarter-on-quarter) ভিত্তিতে স্থিতিশীলতা দেখাতে শুরু করেছে। এটি একটি সম্ভাব্য পুনরুদ্ধারের সূচক।

Advertisements

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা:
সবমিলিয়ে, ট্রান্সইউন সিবিল-এর এই তথ্য বলছে যে, দেশের গ্রামীণ ও অর্ধ-শহরাঞ্চলে ঋণের চাহিদা শক্তিশালী ও স্থিতিশীল রয়েছে। এটি ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সংকেত। এই প্রবণতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে এসব অঞ্চলে আরও সক্রিয় হতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে বাড়িয়ে দেবে।

গ্রামীণ অর্থনীতি যত বেশি ঋণভিত্তিক এবং সংহত হবে, তত বেশি কর্মসংস্থান ও আয় সৃষ্টি হবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।

এই রিপোর্টে উঠে আসা পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণগুলো স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় যে, দেশের ঋণচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। কম শহুরে ও গ্রামীণ এলাকাগুলির জনগণ এখন আরও আত্মবিশ্বাসের সাথে আর্থিক পরিষেবা গ্রহণ করছে, যা দেশের আর্থিক ব্যবস্থার প্রসারে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। এখন সময় এসেছে, এই পরিবর্তনকে স্থায়ী ও টেকসই উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার।