করদাতাদের স্বস্তি নাকি চাপ? সংসদে আজ নতুন প্রস্তাব

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের শুরুতেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নতুন আয়কর বিল পেশ করেছিলেন সংসদে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেই বিল সংসদে পাশও হয়। মূলত সাধারণ…

করদাতাদের স্বস্তি নাকি চাপ? সংসদে আজ নতুন প্রস্তাব

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের শুরুতেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নতুন আয়কর বিল পেশ করেছিলেন সংসদে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেই বিল সংসদে পাশও হয়। মূলত সাধারণ করদাতাদের জন্য আয়কর প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করার উদ্দেশ্যেই এই নতুন বিল আনা হয়েছিল। তবে, বিল পাশ হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে কিছু প্রস্তাব ও পরামর্শ আসে, যাতে আয়করের বিভিন্ন ধারা ও প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকরী, স্বচ্ছ এবং জনবান্ধব করা যায়। সেই কারণেই এই বিল পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হয় সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত পান্ডা।

পার্লামেন্টারি সিলেক্ট কমিটি কয়েক মাস ধরে এই বিলের ধারা ও বিধি খতিয়ে দেখে এবং একাধিক পরিবর্তনের সুপারিশ করে। তাদের মতে, আগের বিলের কিছু ধারা বাস্তব ক্ষেত্রে করদাতাদের কাছে জটিল মনে হতে পারে এবং কিছু কর ছাড়ের সীমা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই, কর কাঠামোকে আরও সহজ, প্রযুক্তি নির্ভর এবং ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

   

প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলির মধ্যে অন্যতম হল কর স্ল্যাবের সামান্য পরিবর্তন। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে কর-মুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, বিনিয়োগ, সঞ্চয় এবং বিমা সংক্রান্ত কিছু কর ছাড়ের ধারা সহজ করা হচ্ছে, যাতে করদাতারা এক জায়গায় সব তথ্য দিয়ে সহজে রিটার্ন জমা দিতে পারেন।

কমিটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হল—আয়কর রিটার্ন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও পেপারলেস করা। এর ফলে করদাতাদের অফিসে গিয়ে কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন কমবে এবং প্রসেসিংয়ের সময়ও কমে আসবে। একইসঙ্গে, ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট ও অ্যাপিল ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করদাতাদের সঙ্গে আয়কর দফতরের সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজন হবে না, যা দুর্নীতি ও হয়রানির সম্ভাবনা কমাবে।

এছাড়া, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্টার্টআপগুলির জন্যও কিছু কর রেয়াতের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রাথমিক কয়েক বছরের জন্য কর হার কিছুটা কমানো হতে পারে, যাতে নতুন উদ্যোগগুলি সহজে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষত ডিজিটাল ও গ্রিন এনার্জি ক্ষেত্রে নতুন ব্যবসাগুলিকে উৎসাহ দিতে কর ছাড় দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গ্রামীণ ও কৃষি ক্ষেত্রে আয় সংক্রান্ত বিধিগুলিতেও কিছু স্পষ্টীকরণ আনা হতে পারে। যেমন, কৃষি থেকে প্রাপ্ত আয় করমুক্ত থাকলেও, সেই আয়ের উৎস যাচাইয়ের জন্য সহজ প্রক্রিয়া তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে অপব্যবহার বন্ধ হয়।

Advertisements

অন্যদিকে, উচ্চ আয়ের শ্রেণির করদাতাদের জন্য সারচার্জ ও সেস কাঠামো কিছুটা পরিবর্তন করার কথাও বিবেচনায় আছে। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বজায় রেখে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর করের চাপ কিছুটা কমানো হবে।

সোমবার সংসদে যখন সংশোধিত নতুন আয়কর বিল, ২০২৫ পেশ হবে, তখন এই প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি নিয়ে আলোচনার পরই তা চূড়ান্ত করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, এই সংশোধিত বিল পাশ হলে আয়কর কাঠামো আরও স্বচ্ছ, সহজ এবং জনবান্ধব হবে। একইসঙ্গে, করদাতাদের কর দেওয়ার মানসিকতা ও স্বেচ্ছাসেবার প্রবণতাও বাড়বে।

বিলটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও নজর রয়েছে। বিরোধী দলগুলি একদিকে যেমন মধ্যবিত্তের জন্য কর রেয়াত বাড়ানোর দাবিতে সরব, তেমনই রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। ফলে সংসদে এই বিল নিয়ে গরমাগরম আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি কার্যকর হয়, তবে এটি হবে ভারতের কর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের এক বড় পদক্ষেপ।